সব পেতে গিয়ে বিমর্ষ জীবন

অথচ তার বিদায় বেলা হতে পারত গোধূলি লগ্নের মতই রঙিন। রঙিন তুলির আঁচড়ে তিনি লিখে যেতে পারতেন শেষ চিঠি। 

ধরুণ এক মুহূর্তের জন্য সাকিব আল হাসানের অন্য সব পরিচয় ভুলে গেলেন। ক্রিকেটার সাকিবের শেষ টেস্ট ম্যাচ। তাকে আর দেখা যাবে না বনেদী ফরম্যাটে। কিঞ্চিত খারাপ লাগা কাজ করবে নিশ্চয়ই। একটা বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের কি এক ধূসর সমাপ্তি!

কত বর্ণিল এক চরিত্র ছিলেন সাকিব। ক্রিকেট ময়দানে তার মত একজন খেলোয়াড় আবার কবে আসবেন, তা অজানা। দীর্ঘদিন তিনি শাসন করে গেছেন বিশ্ব ক্রিকেটকে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ যখন পাত্তাই পেত না, তখনও সাকিবকে সমীহ করতে হয়েছে। প্রতিপক্ষ যথাযথ সম্মানই দিয়ে গেছে সাকিবকে। তাদের পরিকল্পনার একটা বড় অংশ জুড়েই সাকিবের ছিল অবস্থান।

সেই সাকিব বিদায় নিলেন হোয়াইট ওয়াশ হয়ে। ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেললেন। মাত্র আড়াই দিন হয়েছে মাঠের খেলা। সেই আড়াই দিনের মধ্যেই হেরেছে বাংলাদেশ। সাকিবের নৈপুণ্যে ম্যাচে বাংলাদেশ আর ফিরতে পারেনি, করতে পারেনি লড়াই।

সেদিনগুলো যেন এক লহমাহ কর্পূরের ন্যায় উবে গেছে। সাকিব আল হাসান এখন নিজের সবচেয়ে কালো ছায়া। যেখানে নেই কোন আলোক রোশনাই। কেবলই ঘুটঘুটে অন্ধকার। ব্যাট হাতে কিংবা বল হাতে তেমন সমীহের জায়গায় আর পৌঁছাতে পারেননি সাকিব।

কানপুর টেস্টের প্রথম ইনিংস চারটি উইকেট বাগিয়েছেন বটে। কিন্তু পুরো সিরিজ জুড়েই ছিলেন তিনি নিষ্প্রভ। ভারত সিরিজে সর্বসাকুল্যে ৬৬ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। চারটি ইনিংস মিলিয়ে তার উইকেট সংখ্যা মোটে চারটি। এই পরিসংখ্যানগুলোই বলে দেয় যে সাকিব ঠিক কতটুকু জৌলুস হারিয়ে ফেলেছেন। বিদায়ের ঘন্টা বাজানোর এটাই যে ছিল তার মোক্ষম সময়।

বিদায় বেলায় টেস্ট ক্রিকেটে ৪৬০৯ রানের মালিক সাকিব। ২৪৬টি উইকেট রয়েছে তার নামের পাশে। ২৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই সাদা পোশাক তুলে রাখলেন। অথচ তার বিদায় বেলা হতে পারত গোধূলি লগ্নের মতই রঙিন। রঙিন তুলির আঁচড়ে তিনি লিখে যেতে পারতেন শেষ চিঠি।

তিনি অবশ্য চেয়েছিলেন তেমনটি। কিন্তু বিকেএসপি-তে বেড়ে ওঠা সেই ছোট্ট ময়নার সব ইচ্ছে আর পূরণ হচ্ছে না। নিজ দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানা হল না। সব পেতে চেয়েছিলেন সাকিব। তাতেই বরং নষ্ট হয়েছে জীবন।

Share via
Copy link