Social Media

Light
Dark

দ্য লাইফলাইন অব কোরিয়া

দেহ আর মনের কুশলে কান্নার এক স্রোত। তবে এ অশ্রু, আনন্দাশ্রু। এমনই এক দৃশ্যের অবতারণা হলো কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের খেলার শেষদিনে। সে দৃশ্যের নায়ক একজন কোরিয়ান, একজন অশ্রসিক্ত অধিনায়ক সন হিউং মিন।

ads

না। কোনো বিশ্বজয়ের অনুভূতি নয়। গ্রুপ পর্বের বাঁধা টপকে শুধু শেষ ষোল নিশ্চিত করার পরাবস্তব এক অনুভূতি। পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়ে এক যুগ পর আবারো বিশ্বকাপে সেকেন্ড রাউন্ড উঠলো দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন সন।

শেষ ষোল নিশ্চিত করতে পর্তুগালের বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়াকে জিততেই হতো। তবে শুরুতেই গোল হজম করে সে স্বপ্ন এক মুহূর্তের জন্য দমকা হাওয়ার মতো নিঃশেষ হতে বসেছিল। তবে স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে দক্ষিণ কোরিয়া ঘুরে ফিরতে খুব বেশি সময় নেয়নি। ইয়ং কিমের গোলে সমতায় ফেরে কোরিয়ানরা। তবে শুধু সমতায় ফিরলে তো আর চলবে না। পর্তুগিজ দূর্গ ভেঙ্গে আরেকটি গোল করে ম্যাচ জিততে হবে।

ads

সময় তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছিল। দক্ষিণ কোরিয়া স্বপ্নিল আশাও আস্তে আস্তে নিভে যাচ্ছিল। তবে নিভতে থাকা আশায় আলোকিত এক প্রদীপ হয়ে আবির্ভূত হলেন সন। ম্যাচের যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে ৭০ গজ দৌড়ে এলেন একাই, ক্ষীপ্র গতিতে। আলতো টোকায় ডি-বক্সে এক পাস বাড়ালেন। আর ঐ পাসেই হি-চান-হোয়াং ম্যাচজয়ী গোল করেন। আর তাতেই ২-১ গোলে এগিয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। এর কিছুক্ষণ বাদে রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে সেকেন্ড রাউন্ডে ওঠার উচ্ছ্বাসে ভেসে যান সন, হোয়াংরা।

জীবন কত বিচিত্র! জীবনের পৃষ্ঠায় কোথায় কখন কার ভাগ্যে কী লেখা থাকে তা যেন ভাবনারও ঊর্ধ্বে। এই যেমন কোরিয়ার রূপকথার গল্পে সনের থাকারই কথা ছিল না। কাতার বিশকাপ শুরু হতে তখন সপ্তাহ তিনেক বাকি। চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বের খেলায় সেদিন মার্শেইয়ের মুখোমুখি হয়েছিল সনের টটেনহ্যাম। সে ম্যাচেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার চান্সেল এমবেম্বার একটি ট্যাকেলে বাঁ চোখে আঘাত পান সন।

আঘাত কতটা গুরুতর তা জানা গেল না। তবে বুঝা গেল, সনের বাঁ চোখ অস্ত্রোপচার করতে হবে। দিন বিশেক পর বিশ্বকাপ। অথচ দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যমণি সন পড়ে গেলেন বাঁ চোখের ইনজুরিতে। বিশ্বকাপ স্বপ্ন তাই নিভতেই বসেছিল সনের। তবে সব শঙ্কার অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ঠিকই সনকে অধিনায়ক করে দল ঘোষণা করলো।

সন যে পুরোপুরি ঠিক হয়েই বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিলেন তা নয়। প্রত্যেক ম্যাচেই প্রতিরক্ষার জন্য তাঁকে মাস্ক পরে খেলতে দেখা গেছে। তবে সনে মাস্কের আড়ালে যেন ছিল দু’চোখ ভরা স্বপ্ন। ফলত যে ভালবাসা তাঁকে কোরিয়ানরা দিয়েছিল, তাঁর প্রতিদান স্বরূপ দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে গেলেন বিশ্বকাপের পরের পর্বে।

এমনিতে এই সনের উপর ভর করেই এবার কাতার বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এশিয়ান বাছাই পর্বে দিয়েছিলেন ১৩ ম্যাচে ৭ গোল। এবার সেই ছন্দের ধারাবাহিকতায় সন দ্যুতিতে সেকেন্ড রাউন্ডে উঠলো এশিয়ার এ দেশটি।

বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সেরা সাফল্য এসেছিল ২০০২ সালে। সেবার চতুর্থ হয়েছিল তারা। এরপর অবশ্য ৪ বার অংশগ্রহণ করলেও তিনবারই তাদের ফিরে যেতে হয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে। ১২ বছর বাদে, আবারো বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব পার করলো দক্ষিণ কোরিয়া। সময় বিবেচনায় এটাই হয়তো কোরিয়ানদের সেরা অর্জন। তবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির দিকে আরেকবার স্বপ্ন আঁকতেই পারে সনের দল।

যদিও শেষ ১৬ তে তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকার এ দলকে টপকাতে হলে অসম্ভব কিছু একটা করে দেখাতে হবে দক্ষিণ কোরিয়াকে। তবে অতীত ইতিহাস বলে, এশিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপ মানেই দক্ষিণ কোরিয়ার দাপট। মরুর বুকে তাই আরেকবার দাপট দেখাতেই পারে দক্ষিণ কোরিয়া। বিচিত্র দুনিয়ার অসীম সৌন্দর্য্যের এ ধরণীতে অসম্ভব বলে তো আর কিছু নেই। তাই সন তরীতে চেপে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবল স্রোতের শত প্রতিকূলতা ঘেষে এগিয়ে যাওয়ার একটা দুঃসাহস দেখাতেই পারে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link