‘সাও পাওলোতে কাকা নামে একটা তরুণ খেলে দুই স্ট্রাইকারের পেছনে। ইউরোপে ওর সম্পর্কে তোমরা কিছুই জান না, কিন্তু দৃষ্টি রাখো তাঁর দিকে – ও বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে যাচ্ছে ।’ – ২০০২ বিশ্বকাপের প্রাক্কালে তৎকালীন ব্রাজিল এবং বার্সেলোনা স্টার রিভালদোর উক্তি এটি ।
আসলে খেলোয়াড় হিসেবে কাকা কেমন? কার সাথে মেলে তাঁর খেলা?
‘ব্রাজিলে আমাদের প্রতিটি পজিশনে ভাল খেলোয়াড় আছে, কিন্তু আমি মন করি কাকা এই মুহূর্তে অনন্য এক প্রতিভা। সে খুবই স্কিলফুল এবং এরই মধ্যে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন।’ – কাকা সম্পর্কে কিং পেলে ২০০৪ সালে ১৬ মে ফিফা.কমে প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে এসব কথা বলেন।
‘মাঠে ও যে কোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, কিন্তু তাকে আটকানো খুবই বিরল ঘটনা।’ – তৎকালীন কোচ আলবার্তো পেরেইরার উক্তি এটি।
প্রথম দর্শনে কার্লো আনচেলোত্তি কি বলে শুনুন, ‘যখন ও পায়ে বলটা পায়, ও ছিল ইনক্রেডিবল। আমি কথা বলা বন্ধ করে দেই, কারণ সেই অনুভূতিটা প্রকাশ করার মত কোন শব্দই ছিল না আমার। ও বল বাতাসে থাকতেই বুঝতে পারে সবকিছু, ও অন্যদের চাইতে দ্বিগুণ দ্রুত চিন্তা করতে পারে, যখন ও বল রিসিভ করে। এরই মধ্যে ধরে ফেলে কিভাবে খেলাটা শেষ হতে যাচ্ছে।’
‘সে মাঠের বাইরে যে ব্যক্তিত্ব উপস্থাপন করছে – কাকা আমাকে সক্রেটিসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ – বলেন সাদা পেলে জিকো। কিন্তু আনচেলোত্তি একটু ভিন্ন সুরে বললেন, ‘ব্রাজিলিয়ানরা কাকাকে রাই, জিকো, রিভালদোদের সাথে তুলনা করে – কিন্তু কাকা আমাকে প্লাতিনির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ একই সময় পেলে মত প্রকাশ করেন কাকা হচ্ছেন নতুন ইয়োহান ক্রইফ।
আসলেই তাই , ব্রাজিলে জন্ম নিয়েও কাকার খেলায় ইউরোপিয়ানদের ধাঁচটাই বেশি। সেরা সময়ে কাকা কেমন ছিল সেটার বর্ণনা পেতে চোখ দেই গোল.কমে ‘কাকাকে নিয়ে হয়ত ভাবা হয়েছিল ও (ইউরোপে) এসেছে লাতিন আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী ফুটবল নিয়ে, যেটা নিয়ে এসেছিলেন জিকো, রিভালদো এবং রোনালদিনহোরা।
কিন্তু ছোট ভাইয়ের ‘রিকার্দো’ উচ্চারণে সমস্যা থাকার ফলে নতুন প্রাপ্ত নামে ডাকা এই ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়টা অন্যদের চাইতে আলাদা। কাকার সবচেয়ে বিধ্বংসী বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বল পায়ে দ্রুত গতিতে তার এগিয়ে চলা। এবং যখন সে পুরো ছন্দে থাকে তখন সে কার্যত অপ্রতিরোধ্য। সে বলকে ড্রিবল করে না বরং বল নিয়ে একটা পথে এগিয়ে চলে, এরপর আরেকটা পথে। তাঁর তীক্ষ্ণতা, গতি এবং আক্রমণ প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের মনে ছড়িয়ে দেয় অনিশ্চিয়তা।’
আমার ব্যাক্তিগত মতের সাথে এটি পুরোপুরি মিলে গিয়েছে। কাকার দুরন্ত গতিতে বল নিয়ে এগিয়ে চলার সাথে তাঁর ক্লোজ কন্ট্রোল, বল রিসিভ – সব কিছুতেই ছিল আভিজাত্য। ওয়ান অন ওয়ানে যেমন দক্ষ তেমনি তার পজিশনিং এবং ভিশন সতীর্থদের জন্য জায়গা তৈরি করে দেয়।
ফিফা ডট কমে কাকাকে বর্ণনা করা হয় এভাবে, ‘অনায়াসে প্রতিপক্ষকে পেছনে ফেলতে পারার পাশাপাশি ডিফেন্সচেরা পাস এবং ধারাবাহিক ভাবে দুর পাল্লার গোল করতে সক্ষম ।’
রোনালদিনহোর মতামতটা এরকম, ‘কাকা ইজ আ ম্যাজিক্যাল প্লেয়ার, ও অনুপ্রেরণাদায়ক মুহূর্ত তৈরি করতে সক্ষম। একই সাথে অসাধারণ পাসিং ক্ষমতা সাথে দুর্দান্ত পজিশনিং, সে খেলোয়াড়দের ড্রিবল করে হারিয়ে দিতে পারে – তারপর গোল।’
রিয়াল মাদ্রিদের ওয়েবসাইটে কাকার প্রোফাইলের বর্ণনায় বলা আছে, ‘ইউরোপে তাঁর মত কেউ খেলার গতি নিয়ন্ত্রন করতে পারে না । ও ধারাবাহিক অ্যাসিস্ট ম্যান যে কিনা প্রতিটা মৌসুম শেষ করে অনেক গুলো গোল করে।’
ডেভিড বেকহ্যামের চোখে কাকা তাঁর দেখা সবচেয়ে পেশাদার ফুটবলার। তবে কাকার জন্য সর্বোচ্চ স্তুতিটা মনে হয় আসে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের কাছ থেকে। ২০০৯ সালে দিকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে সম্মান জানিয়ে এই ইংলিশ বলেন, ‘যখন আপনি একজন চেলসির খেলোয়াড় তখন আপনাকে সেরাদের সাথে এবং বিপক্ষে খেলতে হয়। কিন্তু কাকা হচ্ছেন পৃথিবীর একমাত্র খেলোয়াড় যার খেলা দেখতে আমি টাকা খরচ করতে রাজি। ও মাঠে এমন কিছু করে যেটা আমাকে বিস্মিত করে।’
নিজের হাতে অনেক বড় বড় খেলোয়াড় কিনেছেন বার্লুসকনি । তাঁর মতে, ‘আমি জানি না কাকা আমার কেনা সেরা খেলোয়াড় কিনা তবে এত কম বয়সে সে যেটা করছে এরকম আগে দেখিনি আমি।’
সবশেষে কাকার লিগ্যাসিকে আরেকটু সমৃদ্ধ করতে যে উক্তিটি এখনও অন্যরকম অনভূতি তৈরি করে সেটা হল হোসে মোরিনহোর। ২০১১-১২ মৌসুমের প্রথম দিকে কাকা ফর্মে ফেরার পর মোরিনহো বলেছিলেন, ‘আমি আসল কাকাকে চিনি । যখন আমি ইতালিতে ছিলাম ও ছিল অসাধারণ। রিয়াল মাদ্রিদ কাকার সেই রূপটা এর আগে পায়নি , অবশেষে ও ফিজিক্যাল ব্যালেন্স ফিরে পেয়েছে। কাকার এই প্রত্যাবর্তনটা খোদ ফুটবলেরই উদযাপন করা উচিৎ।’