কবজি জাদুর পাকিস্তানি জাদুকর

লেগ স্পিনার তৈরিতে ক্রিকেট দুনিয়ায় বেশ সুনাম পাকিস্তানের। আমির এলাহি থেকে শুরু করে হালের ইয়াসির শাহ, শাদাব খানদের মত অনেক তারকা কবজি জাদুকরদের দেখা পেয়েছে পাকিস্তান। লেগ স্পিনারদের প্রায় সবাই আলাদা আলাদা কৌশল আর দক্ষতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

ভিন্ন ভিন্ন যুগে খেলা এই স্পিনারদের মাঝে তুলনা করাটা অযৌক্তিক আর বেশ কষ্টসাধ্য একটা ব্যাপার। স্রেফ পরিসংখ্যান দিয়ে এই তারকাদের সবার প্রতিভা কিংবা সামর্থ্য বিচার করা সম্ভব নয়। টেস্ট ইতিহাসে পাকিস্তানের হয়ে সেরা লেগ স্পিনারদের নিয়ে খেলা ৭১-এর এবারের আয়োজন।

  • দানিশ কানেরিয়া

২৬১ টেস্ট উইকেট, গড় ৩৪.৭৯, স্ট্রাইক রেট ৬৭.৪, ইকোনমি ৩.০৭।

পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে লেগ স্পিনার হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি দানিশ কানেরিয়া। ৬১ টেস্টে তিনি শিকার করেছেন ২৬১ উইকেট।

উচ্চতার কারণে অতিরিক্ত বাউন্স দিতে পারতেন তিনি। কিংবদন্তি রিচি বেনোর মতে টেস্টে সেরা গুগলি দিতে পারতেন দানিশ। লেগ স্পিন ভেলকিতে বহু ব্যাটারকে তিনি মাত দিয়েছেন। লম্বা স্পেল করতে পারতেন, লাইন-লেন্থেও ছিলেন দুর্দান্ত।

  • আব্দুল কাদির

২৩৬ টেস্ট, গড় ৩২.৮০, স্ট্রাইক রেট ৭২.৫৬, ইকোনমি রেট ২.৭১।

পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার, নিজের সময়ে বিশ্বের সেরাদের একজন ছিলেন। সত্তুর কিংবা আশির দশকে আব্দুল কাদির ছিলেন যেকোনো উইকেটের সেরা এক স্পিনার। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই বল হাতে তিনি দাপট দেখিয়েছেন। ফ্লাইটে সাথে বলে টার্নও পেতেন বেশ।

দুর্দান্ত অ্যাকুরেসির সাথে লাইন-লেন্থেও ছিল নিঁখুত। ইমরান খানের অধীনে তিনি ছিলে বোলিং বিভাগের নেতৃত্বে। আম্পায়াররা অনেক সময় তাঁর বলে দ্বিধায় থাকতেন। সেসময় ডিআরএস বা বল ট্র‍্যাকিং সিস্টেম থাকলে কাদিরের ঝুলিতে না-কি আরও অনেক উইকেট থাকতো।

এমনকি কিংবদন্তি তারকা শেন ওয়ার্নও কাদিরকে নিজের আদর্শ মানতেন। যত দিন লেগ স্পিন বোলিং ক্রিকেটে থাকবে, ততদিন এই কিংবদন্তি আব্দুল কাদিরকে মনে রাখবে ক্রিকেট দুনিয়া।

  • ইয়াসির শাহ

২৩৫ উইকেট, ৩০.৮৩ গড়, ৫৭.৮৭ স্ট্রাইক রেট, ৩.১৯ ইকোনমি রেট।

টেস্টে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ইয়াসির শাহ। টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম বোলার হিসেবে শিকার করেন একশো উইকেট। ২০১৮ সালে দ্রুততম বোলার হিসেবে টেস্টে দুইশো উইকেট নেন তিনি। পাকিস্তানি লেগ স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা স্ট্রাইকরেট ইয়াসিরের।

ইয়াসিরের সামনে এখন হাতছানি লেগস্পিনার হিসেবে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। সাদা পোশাকে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার তো বটেই নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করে নিজেকে নিয়ে গেছেন পাকিস্তানের সর্বকালের অন্যতম সেরাদের কাতারে।

  • সাকলাইন মুশতাক 

১৮৫ টেস্ট উইকেট, ৩২.৯৭ গড়, ৬৭.৭৪ স্ট্রাইক রেট, ২.৯২ ইকোনমি রেট।

ক্রিকেটীয় প্রতিভা নিয়েই যেন এসেছিলেন সাবেক তারকা স্পিনার সাকলাইন মুশতাক। বোলিংয়ে ভ্যারিয়েশন থাকায় সহজেই ব্যাটারদের বিপাকে ফেলতে পারতেন তিনি।

অফস্পিনের অনেক ভেরিয়েশন সাকলায়েনের কাছে দেখা গেছে। লেগ স্পিনাররা যেটা গুগলি করেন, সেটার অফস্পিন ভার্সন সর্বপ্রথম তিনি আনেন। যার নামকরণ করা হয় দুসরা। এখন ক্রিকেটে বেশ প্রচলিত এই দুসরা ডেলিভারির আবিষ্কার মুশতাকের হাত ধরেই। রিস্ট স্পিনার হিসেবে তিনি পাকিস্তানের অন্যতম সেরা তারকা হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

  • ইন্তিখাব আলম

১২৫ উইকেট, ৩৫.৯৫ গড়, ৮৩.৭৯ স্ট্রাইক রেট, ২.৫৭ ইকোনমি রেট।

পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশকের পাকিস্তান ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিলেন ইন্তিখাব আলম। টেস্টের ইতিহাসে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেট নিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৫৯ সালে এই কীর্তি গড়েন ইন্তিখাব।

গতিও ছিল ভাল, বোলিংয়ে ফ্লাইট বেশ দিতেন তিনি। গড়ে প্রতি ৮৪ বলে উইকেট নিতেন তিনি। রক্ষণাত্মক লেগ স্পিনার হিসেবে ছিলেন বেশ পরিচিত। প্রতিপক্ষের রান আটকে দিতেন, উইকেটও নিতেন এই স্পিনার। বোলিংয়ে তাঁর মূল অস্ত্র ছিল ফ্লিপার।

  • মুশতাক মোহাম্মদ

৭৯ টেস্ট উইকেট, ২৯.২২ গড়, ৬৬.৫৮ স্ট্রাইক রেট, ২.৬৩ ইকোনমি।

১৯৫৯ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয় সাবেক স্পিনার মুশতাক মোহাম্মদের। মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার ছিলেন, সাথে লেগ স্পিনও করতেন তিনি। ১৭ বছর ৭৮ দিনে সেঞ্চুরি করে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি। ২০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পাকিস্তানের হয়ে ৫৭ টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। রিভার্স সুইপের জনকও বলা হয় তাঁকে।

বল হাতে লেগ স্পিনের প্রায়শই উইকেট পেতেন তিনি। ব্যাটিং নিয়ে আলোচনা হলেও মুশতাকের লেগ স্পিন জাদু নিয়ে আলোচনা কমই হতো। লেগ স্পিন ভেলকিতে মাত দিয়েছেন অনেক তারকা ক্রিকেটারকে। লেগ স্পিন, গুগলি, ফ্লিপার সবকিছুতেই পারদর্শী ছিলেন এই তারকা।

এছাড়াও পাকিস্তানের জার্সিতে টেস্টে আরও বেশ কিছু তারকা লেগ স্পিনার খেলেছেন। শহিদ আফ্রিদি, ওয়াসিম রাজা, খালিদ হাসান, শেখ ফজলুর রহমান, সৈয়দ আলি হুসাইন, আমির এলাহি, শাদাব খানরাও টেস্ট ক্রিকেট মাতিয়েছেন পাকিস্তানের জার্সি গায়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link