স্কোরবোর্ডে তখন ৩৭৫ রানের এভারেস্টসম লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। নেদারল্যান্ডস তো রান তাড়ায় সব সময় পারদর্শী নয়। আবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের চাপের মুখে এত বড় লক্ষ্য ডাচরা পেরুবে কি করে! হাল ধরা প্রয়োজন কারো। সেই হালটাই যেন ধরলেন তেজা নিদামানুরু।
প্রতিটা পরতে পরতে যেন রোমাঞ্চ। সেই রোমাঞ্চের শেষটায় উল্লাসে মাঠ ছেড়েছে নেদারল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। সে জন্য অবশ্য লোগান ভ্যান বিক-কেই বাহবা দিতে চাইবে সবাই। কেননা তিনিই তো সুপার ওভারের এক ওভারেই ৩০ রান নিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
কিন্তু এর আগে তো বন্ধুর এক পথ পাড়ি দিয়েছে গোটা দল। সেই সফরের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তেজা। ব্যাট হাতে কালজয়ী এক ইনিংসই খেললেন বটে। দীর্ঘকাল ধরে মনে রাখার মত এক ইনিংস তিনি উপহার দিলেন বটে। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের ছেলে চাকরির সন্ধানে গিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসে। ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা থেকেই ডাচ ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ততা। এরপর ডাচদের ক্রিকেট ইতিহাসে মিশে যাওয়া।
একটু স্মরণীয় ইনিংসের প্রেক্ষাপট ঘুরে আসা যাক। ১২৮ রানে তিন উইকেট নেই নেদারল্যান্ডসের। দলীয় শুরুটা ভাল হলেও, শঙ্কা তখনও মাথার উপর। বিশাল ব্যবধানের জয়ই সম্ভবত ভাবছিল প্রতিপক্ষ দলের সকলে। কেননা তখনও তো ডাচদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল আরও ২৪৬ রান, হাতে ছিল ৩০ ওভার। আধুনিক ক্রিকেটে অবশ্য অসম্ভব না। আর দলে যখন একজন তেজা নিদামানুরু রয়েছে তখন তো তা খুব করেই সম্ভব।
সেটাই করে দেখালেন নিদামানুরু। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপের কোন রকম তোয়াক্কাই করলেন না তিনি। রান তুললেন বিদ্যুৎ গতিতে। অপ্রতিরোধ্য এক গতি তাকে পেয়ে বসে। দলের জয়ের নায়ক হওয়ার তীব্র ইচ্ছে তার ঘাড়ে চেপে বসে। তিনি ছুটলেন। কখনো সঙ্গী হিসেবে বেছে নিলেন বাস ডি লিডকে, কখনো অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ড আবার স্বল্প সময়ের সারথি সাকিব জুলফিকার।
প্রায় ১৪৬ স্ট্রাইকরেটে রান তুলেছেন নিদামানুরু। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় শতক পাওয়ার এর থেকে ভাল উপলক্ষ আর হতে পারে না। আর এমন এক রোমাঞ্চকর সুযোগ হাত ছাড়া মোটেই করেননি তেজা নিদামানুরু। ৩ ছয় ও ১১টি চার দিয়ে সাজিয়েছেন নিজের ইনিংস। মাত্র ৬৮ বলেই তিন অংকের সেই ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলেন তেজা। এর আগে নিজের ওয়ানডে অভিষেকেই অর্ধ-শতক করেছিলেন তেজা। প্রতিপক্ষ ছিল ক্যারবিয়রা।
দলের জয়টা তখন খুব সন্নিকটেই মনে হতে থাকে। এরপর খানিকটা এগিয়ে ১১১ রানে জেসন হোল্ডারের বলে রোস্টন চেজের কাছে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তেজা। কিন্তু ততক্ষণে জয়ের ছক কষতে শুরু করে ডাচরা। কেননা তেজা যখন আউট হন, তখন দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪ ওভারে ৪৮ রান। এমন এক পরিস্থিতি থেকে ম্যাচের ফলাফল তখন পেন্ডুলাম।
তবে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার কৃতিত্ব অবশ্যই পাওয়া উচিৎ তেজা নিদামানুরুর। কেননা তিনি যেমন দলের ব্যাটিং লাইনের দায়িত্ব আগলে রেখেছেন দুই বাহুডোরে। পাশাপাশি ৭৬ বলে ১১১ রান মানেই তো তিনি রান তুলেছেন দ্রুত গতিতে। সেদিক থেকেও তো জয়ের পথটা মসৃণই করেছেন তেজা। এমন এক মুহূর্তে এই শতকটা নি:সন্দেহে বিশেষ কিছু।
পাহাড়সম রানের চাপ, দলের হাল ধরার চাপ, প্রতিপক্ষ বোলারদের অভিজ্ঞতার চাপ। এত সবকিছু সহ্য করে, নিজের কাজটা করে যাওয়াই তো বিশাল বড় এক প্রাপ্তি। সেদিক থেকে তো তেজা নিদামানুরু পাস করেছেন লেটার মার্ক পেয়ে। এমন সব দিনের জন্যই হয়ত সহযোগী দেশগুলো নিজেদের ঝুলিতে পুরে রাখে বিস্ময়। তারা ক্রমশ চমকে দিতে চায়, জানান দিতে চায়, চাইলেই সবকিছু সম্ভব। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারানো তো মামুলি বিষয়।