সুযোগ পেলে সুমনরাও পারেন

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। চারদিন দুইটা দল ব্যাট-বলের লড়াই চালিয়ে যাবে। অথচ দ্বিতীয় দিন দুপুর গড়াতে না গড়াতেই ম্যাচ শেষ। আসলে ম্যাচটা শেষ করতে বাধ্য করেছেন পেসার সুমন খান। হ্যাঁ, একজন পেসার। মিরপুরের উইকেটে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একজন পেসার প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন আপ স্রেফ গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। একটু অবাক শোনালেও ঘটনাটা সত্য।

প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়ার পর আজ দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন আবার চার উইকেট। সুমন খান বল করতে আসা মানেই যেন একটা উল্লাস ঢাকা ডিভিশনের জন্য। বারবার উইকেট নিচ্ছেন আর তাঁকে ঘিরে সতীর্থদের উদযাপন। মিরপুরে গতদিন দুদিন এই দৃশ্যটা দেখা গিয়েছে গুণে গুণে নয়বার।

সুমন খান বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের খুব একটা নিয়মিত মুখ নন। একেবারে গভীরে গিয়ে ঘোরায়া ক্রিকেটের খোজ না রাখলে সুমন খানকে আপনার চেনার কথা নয়। তবে আজ মিরপুরের সবার মুখে এই একটাই নাম। ম্যাচ শেষে যখন ড্রেসিং রুমে ফিরছিলেন তখন মেটাতে হয়েছে ভক্তদের সেলফির আবদারও।

সুমন অবশ্য গত ক্রিকেট মৌসুমের দুইটা চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলেছিলেন শেখ জামালের হয়ে। এবাদত হোসেন, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীদের নিয়ে গড়া বোলিং লাইন আপে খুব বেশি সুযোগ হয়নি তাঁর। তবে শেখ জামাল প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল।

আবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দলে। চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার হয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র দুইটা। দুই ম্যাচে সর্বমোট বারোটা বল করার সুযোগ পেয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। তবে জাতীয় ক্রিকেট লিগে মাঠে নেমেই নিজের সেরাটা উজাড় করে দিলেন। প্রমাণ করলেন সুযোগ পেলে সুমনরা পারেন।

গতকাল রংপুরের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৫ রান খরচ করে নেন পাঁচ উইকেট। আর আজ আবার মাত্র ১৬ রান দিয়েই চার উইকেট। তাঁর এমন বোলিং তোপে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৬ রানেই গুটিয়ে যায় রংপুর। ফলে ইনিংস ও ৬২ রানের বিশাল জয় পায় ঢাকা বিভাগ।

শেখ জামাল কিংবা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স চ্যাম্পিয়ন হলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ খুব একটা পাননি সুমন। তবে এবার প্রথম ম্যাচ থেকেই সুযোগটা এলো। সেটা পুরোপুরি লুফে নেয়ার পর খেলা ৭১-কে সুমন বলেছিলেন, ‘আসলে ম্যাচ খেলতে পারা আর খেলতে না পারার অনেক তফাৎ। লাস্ট সিজনে হয়তো আমার টিম চ্যাম্পিয়ন ছিল কিন্তু আমি ম্যাচ কম খেলতে পারসি। এবছর আমার প্ল্যান ছিল সুযোগ পেলে যেন কাজে লাগাতে পারি। শুরুটা ভালো করতে পারসি ইনশাআল্লাহ সামনেও আমি ভালো করবো।‘

মিরপুরের উইকেটে খেলা মানেই যেন স্পিনারদের রাজত্ব। বিশেষ করে অন্যবার প্রথম শ্রেণির ম্যাচ গুলোতে পেসাররা সেভাবে বোলিং করারই সুযোগ পাননা। তবে এবার খেলা হচ্ছে ডিউক বলে। এছাড়া উইকেটেও আছে সতেজ ঘাস। আর সেটারই পুরো ফায়দা তুলছেন সুমনরা। একই ম্যাচে রংপুরের হয়েও পাঁচ উইকেট নিয়েছেন আরেক পেসার মুশফিক হাসান।

পেস সহায়ক উইকেটে খেলতে পেরে সুমন বলছিলেন, ‘দেখেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিন্তু পেসাররাই ডোমিনেট করে। বাইরে এ ধরণেরই উইকেট থাকে। এমন উইকেটে খেললে কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরাও আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তাঁরা ভালো করবে।’

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link