সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো সময় যাচ্ছে না বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে দীর্ঘ আট মাসের খরা কাটিয়ে অবশ্য ফিফটির দেখা পেয়েছেন এই তারকা। তবে অধিনায়ক হিসেবে তামিম যতটা কার্যকরী, ব্যাটার হিসেবে কি ততোটা কার্যকরী হতে পারছেন দলের জন্য?
ঘরের মাঠে টানা দুই সিরিজে ফিফটির দেখা পাননি তামিম। মাঝারি মানের বেশ কয়েকটি ইনিংস খেললেও বড় ইনিংসে রূপ দিতে পারেননি। সর্বশেষ সেঞ্চুরির কথা তো সমর্থকরা প্রায় ভুলতেই বসেছেন, ২০২১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১১২ রানের ইনিংস। এরপর ২২ ইনিংস পেরিয়ে গেলেও তিন অংকের ম্যাজিক্যাল ফিগারের দেখা পাননি বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে তামিমের রানে ফেরা স্বস্তি দেবে অনেককেই। কিন্তু প্রশ্নটা হলো তামিমের রান কি আদৌ দলের উপকারে আসছে? বিশেষ করে আজকের দিনের মারকাটারি ব্যাটিংয়ের সাথে তামিমের ৭৮ স্ট্রাইকরেট মোটেই মানানসই নয়। বিশ্বজুড়ে ওপেনাররা যেখানে পাওয়ারপ্লেতে ঝড়ো ব্যাটিং করে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিচ্ছেন, সেখানে তামিম আজো বিশ্বাস করেন দুই যুগ আগের ধীরে চলো নীতিতেই।
তামিমের ব্যাটে রান না পাওয়া দলের মাথাব্যথার কারণ ছিল। কিন্তু তামিমের রান পাওয়া যেন দলের জন্য আরেক চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেদিনই তামিম ক্রিজে বেশি সময় টিকে থাকেন, সেদিন যেন জয়ের সম্ভাবনা ততই কমতে থাকে দলের। রোহিত শর্মা কিংবা শাই হোপরা খানিকটা ধীরে শুরু করলেও একবার সেট হয়ে গেলে মারমুখী ব্যাটিংয়ে সেটা পুষিয়ে দেন। কিন্তু তামিম সেটা করতে পারছেন কই! যখনই সেট হয়ে বড় ইনিংসের আশা জাগান, তখনই আউট হয়ে যান অহেতুক সব শটে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই দেখুন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তামিম ফিরেছিলেন শুরুতেই। কিন্তু বাকি ব্যাটারদের দৃঢ়তায় ৪৫ ওভারের ৩২০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে বিশেষ বেগ পোহাতে হয়নি দলকে। কিন্তু শেষ ম্যাচে তামিম ৬৯ রানের বড় ইনিংস খেললেও তাঁর ধীরগতির ইনিংস চাপে ফেলেছে বাকি ব্যাটসম্যানদের। চেমসফোর্ডের ব্যাটিং স্বর্গেও বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ২৭৪ রানে। ফলে তামিমের রান করার ধরণ নিয়ে তাই প্রশ্নটা উঠতে বাধ্য!
অধিনায়কত্বের প্রশ্নে অবশ্য লেটার মার্ক নিয়েই উতরে যাবেন এই তারকা। প্রয়োজনের মূহুর্তে বোলারদের ব্যবহার করা কিংবা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে দিতে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন এই ওপেনার। শেষ ম্যাচে তাঁর দুর্দান্ত অধিনায়কত্বের সুবাদেই কিনা ছোট পুঁজি নিয়ে ম্যাচ জিতে ফিরেছে টাইগাররা।
বিশেষ করে ইনিংসের শেষদিকে চাপের মূহুর্তে পার্টটাইমার নাজমুল শান্তকে দিতে বল করানোর জুয়াটা কাজে লেগেছে ভীষণভাবে। এছাড়া সাকিব আল হাসানের সাথে সম্পর্ক নিয়ে মাঠের বাইরে নানা প্রশ্ন উঠলেও এখনো পর্যন্ত সেসব সামাল দিয়েছেন দারুণভাবে। সবমিলিয়ে অধিনায়ক তামিমকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ বেশ সামান্যই।
তবে অধিনায়কত্বটা ভালোভাবে সামলাতে হলে তো আগে অধিনায়ককে সামনে থেকে পারফর্ম করতে হবে। তাছাড়া নিজের শেষ বিশ্বকাপে তামিমকে নিয়ে সকলের প্রত্যাশার পারদও তাই আকাশচুম্বী। তামিম তাই যত দ্রুত নিজের স্ট্রাইকরেটে মনোযোগ দেবেন, ততই মঙ্গল জাতীয় দলের জন্য।