গরম লোহা পেটাতে পেটাতে দিতে হয় আকার। মেহেদী হাসান মিরাজ যেন তেমনই এক জ্বলন্ত লোহার পাত। নিজেকে তিনি গড়ছেন প্রতি নিয়ত। নিন্দুকের নিন্দা আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের সমালোচনা তার জন্য কাজ করতে হাতুড়ির আঘাত হিসেবে। সাকিব আল হাসান না থাকলে উচ্ছন্নে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট- এই সংশয় দূর করতে মিরাজ যেন বদ্ধপরিকর।
অতিরঞ্জিত কথাবার্তা মনে হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সে সিরিজ জয়ের পেছনে মেহেদী হাসান মিরাজের অবদান নিশ্চয়ই আড়াল হওয়ার নয়। প্রথম টেস্টে মুশফিকুর রহিম অনবদ্য এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ১৯১ রানে থেমেছিলেন তিনি। ম্যাচ সেরার পুরষ্কার তাই তারই প্রাপ্য।
দ্বিতীয় টেস্টে খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলেছেন লিটন কুমার দাস। ১৩৮ রানের ইনিংসটির কল্যাণেই যে বাংলাদেশ পার করেছিল বিপর্যয়। তাই তো ম্যাচ সেরার পুরষ্কার তার হাতেই শোভা পায়। কিন্তু এই যে মুশফিকের ইনিংস বড় হল, বাংলাদেশ লিড নিল কিংবা লিটন দলকে টেনে তুললেন খারাপ পরিস্থিতি থেকে- এসব ক্ষেত্রে যে তাদেরকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গেছেন মিরাজ।
দু’টো হাফ-সেঞ্চুরি তিনি করেছেন। এক ইনিংসে ৭৭ রানে থেমেছেন, আরেক ইনিংস ৭৮ করেছেন। ব্যাটার হিসেবে মিরাজ যে পরীক্ষিত সে কথা বোধহয় না বললেও চলছে। বহুবার তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন ব্যাট হাতে। তার উপর বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা ভরসা করেন। ভরসার সে জায়গাটা তিনি নিজেই সৃষ্টি করেছেন।
শুধু যে ব্যাট হাতেই আস্থাভাজন মিরাজ, তা কিন্তু নয়। বল হাতেও আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তিনি বহুবার। কিন্তু তবুও নিন্দুকদের মুখটা বন্ধ করা হয়ে ওঠেনি তার। ঘরের মাঠে বোলার মিরাজ বাঘ হলেও, ভিনদেশে তিনি মেছো বিড়াল- এমন অভিমত ছিল অনেকের। কিন্তু সেই গ্লানিও তিনি ঝেড়ে ফেলতে শুরু করেছেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়া পুরো সিরিজে দশটি উইকেট বাগিয়ে নিয়েছেন মিরাজ। পেস সহায়ক উইকেটে দাঁড়িয়ে একজন অফ স্পিনারের এমন উইকেট শিকারের উৎসব অতি সাধারণ কিছু নয় নিশ্চয়ই। মিরাজ নিজের ভেতর একটা জেদ লালন করছেন বোধহয়। তিনি হয়ে উঠবেন অপ্রতিরোধ্য।
২০২২ সালের পর থেকে অন্তত সে প্রমাণ রাখার চেষ্টাতেই রয়েছেন তিনি। মাউন্ট মঙ্গানুই হোক কিংবা ডারবার অথবা রাওয়ালপিন্ডি সব খানেই উইকেট শিকারের নেশায় মত্ত থাকতে দেখা গেছে মেহেদী হাসান মিরাজকে। তাছাড়া বিদেশের মাটিতে বোলার মিরাজ সাদামাটা সে কথা মোটেও ধোপে টেকে না।
বাংলাদেশের একমাত্র বোলার হিসেবে তিন ভিনদেশের মাটিতে, তিনটি ভিন্ন সিরিজে ১০টি করে উইকেট পাওয়া একমাত্র স্পিনার এখন মিরাজ। এদিক থেকে ছাপিয়ে গেছেন তিনি খোদ সাকিব আল হাসানকেও। তিনি স্রেফ দুইবার এই কীর্তি গড়তে পেরেছেন। তাইতো সাকিব না থাকলে দলের ভারসাম্য বিগড়ে যাবে- সে ভাবনা কেবলই বাক্সবন্দী থাকার পায়তারা মাত্র।