কিছু কাল আগেও যে মানুষটাকে গোটা ভারতবর্ষ ‘স্যার’ কিংবা ‘লর্ড’ নামে ডেকে ব্যঙ্গ করতো – তিনিই এখন ভারতের ত্রাণকর্তা। কারণ, বিপদের দিনে তাঁর চেয়ে ভাল মাথা তুলে দাঁড়াতে আর কেই বা জানে। আর তাঁর নামটা যে রবীন্দ্র জাদেজা সেটা আর বলে না দিলেও চলে।
এমনিতে, তিন নম্বর উইকেট গেলে তিনি কখনওই ক্রিজে আসেন না। জায়গাটা তাঁর মূলত লোয়ার মিডল অর্ডারে। আর যেখানে, ঘরোয়া ক্রিকেটের ‘ব্র্যাডম্যান’ খ্যাত নবাগত সরফরাজ খান অপেক্ষা করছিলেন ড্রেসিংরুমে, তখন জাদেজার ব্যাট হাতে বাইশ গজে আবির্ভূত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু, তিন উইকেটে যে তখন বোর্ডে জমা হয়েছে মাত্র ৩৩ রান। এমনিতেই বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলদের মত সিনিয়রদের অভাবে ভারত বাধ্য হয়ে নামিয়েছে একগাদা তরুণ ক্রিকেটারকে। ওই অবস্থা ইংলিশ সিংহদের বিপক্ষে নবাগত সরফরাজকে ছেড়ে দিতে চায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট।
তাই তো ক্রিজে এলেন জাদেজা। আর এখানে ভারতের পরিকল্পনাটা ছিল খুবই পরিস্কার। ডান হাতি ব্যাটারদের ওপরই ভরসা রাখতে হবে বেশি। আর জাদেজার অভিজ্ঞতা নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই।
আর সেই ভরসার প্রতিদানটা খুব দারুণ ভাবেই দিলেন ‘স্যার’ জাদেজা। চতুর্থ ইনিংস জুটিতে অধিনায়ক রোহিত শর্মার সাথে যোগ করলেন ২০৪ রান। রাজকোটে ভারতের বিপদ কেটে গেলে সেখানেই।
জাদেজা অবশ্য থামলেন না। লড়াই চালিয়ে পেলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। জাদেজার জীবনটাই তো এমন। ‘লড়তে হবে, লড়াই করতে হবে যতদিন বেঁচে আছি’ – কথাগুলো বলতেন বাবা অনিরুদ্ধ জাদেজা। সামান্য একজন দাড়োয়ানের কথা আর কেউ মানুক, চাই না মানুক – জাদেজা ঠিকই মেনে চলেছেন গোটা জীবন। তিনি লড়তে চেয়েছেন। পরজীবী নয়, হেডলাইন হয়ে বাঁচতে চেয়েছেন।
ভারত যতই তাই বিপদে পড়ুক, যতক্ষণ জাদেজা আছেন – কিছুটা হলেও ভরসা রাখা যায়। তা, যতই তাঁকে স্যার বলে ডাকা হোক না কেন।
রাজকোটে রবীন্দ্র জাদেজার ইনিংসটা কেমন? – এই প্রশ্নে অনেক অ্যানালাইসিস করা যাবে। সেখানে ভাল-মন্দ অনেক কিছুই লেখা থাকবে। কিন্তু, তাতে জাদেজার লড়াইটা মিথ্যা হয়ে যাবে না। তিনিও নিশ্চয়ই অ্যানালাইসিসে থোড়াই কেয়ার করেন।
মাঠের প্রতিটা মুহূর্তই তাঁর কানে শুধু একটা কথাই যেন বাজে – ‘জীবনে হাল ছাড়তে নেই, আমরা রাজপুত, লড়াই আমাদের রক্তে, শেষ রক্ত যতক্ষণ আছে লড়ে যাস!’ এই লড়াইয়ের মন্ত্র যতদিন জাদেজার বুকে থাকবে, ততদিন পথ হারাবে না ভারত!