সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবালের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব এখন ক্রিকেটাঙ্গনের ওপেন সিক্রেট। একসময় দুজনে ভাল বন্ধু ছিলেন বটে, কিন্তু এখন তাঁরা পারতপক্ষে একে অপরের মুখোমুখি হন না। ক্রিকেট মাঠে ব্যাপারটা ফুঁটে না উঠলেও, মাঠের বাইরে বারবার স্পষ্ট হয়েছে।
আসলে, বিষয়টা যতটা ভাবা হচ্ছে তার চেয়েও বেশি জটিল। যতটা টানাপোড়েন তাঁদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে – সেটা কার্যত আরও বেশি।
এমন কোন ইভেন্ট গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি যেখানে সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল একসাথে ছিলেন। যেকোনো অনুষ্ঠানে সাকিব উপস্থিত থাকার খবর পেলে সেটা এড়িয়ে যান তামিম; আবার একই কাজ করেন সাকিবও।
এমনকি করোনার সময়ে তামিম ইকবাল দেশ-বিদেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে অনলাইন আড্ডার আয়োজন করলেও সেখানে আমন্ত্রণ জানাননি এককালের ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ সাকিবকেই। বলাই যায়, ক্রিকেট মাঠে বাধ্য হয়ে কথা বললেও ক্রিকেটের বাইরে তাঁরা স্রেফ অপরিচিত।
সাকিব, তামিমের এই ব্যক্তিগত বিবাদের আরও অধ্যায়ও আছে। বাংলাদেশের নামী দামি সব ব্র্যান্ডই শুভেচ্ছাদূত হিসেবে চান এই তারকাদের; দেশের সেরা সব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজও করছেন তাঁরা। কাজ করেন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও। এখানেও একটা দ্বন্দ্ব আছে। এমন অনেকবারই হয়েছে আরেকজন কোনো বানিজ্যিক কাজে একজন আসবেন শুনলে এরিয়ে গেছেন আরেকজন।
আবার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও এই ‘বিতর্ক’টা একরকম নেগেটিভ ব্র্যান্ডিংও বটে। কারণ, যদি বেশি বিতর্ক হবে, তত বেশি থাকবে মাইলেজ। তবে, এটা ঠিক যে মাঠে এই দু’জনের সম্পর্কের প্রভাব এখন অবধি খুব একটা আসেনি। নিজেদের ব্যক্তিগত দ্বৈরথকে পাশ কাটিয়েই এই দু’জন পাশাপাশি লড়ে গেছেন দেশের জন্য।
তবে, চলতি বিশ্বকাপের আগের পরিস্থিতিটা ভিন্ন। তামিম আর সাকিবকে নিয়ে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে আবার। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী তামিম ইকবাল ম্যানেজম্যান্টকে বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগে তাঁর পিঠের ইনজুরির কথা ভাবনায় রাখতে বলেছিলেন।
এটাও জানা গেছে যে তামিমের পক্ষে কোনো ভাবেই পাঁচটার বেশি ম্যাচ খেলা সম্ভব না। সাকিব সেটা শুনে বিরক্ত হয়েছেন। এমনকি কারো কারো মতে, হাফ ফিট ক্রিকেটার স্কোয়াডে থাকলে অধিনায়কত্ব করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
সংকট নিরসনে মাশরাফি বিন মুর্তজাকেও ডেকে এনেছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এমনও শোনা যাচ্ছে যে তামিমকে ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে যাবে বাংলাদেশ দল। এখন দেখার বিষয়, বিসিবি কিভাবে সমাধান করেন সাকিব আর তামিমের চলমান এই বিতর্ক। যেভাবেই করা হোক, বিশ্বকাপের আগেই সেটা করতে হবে; নাহলে বড় মঞ্চে বড় লজ্জাতে পড়তে হবে টাইগারদের।