হ্যারি ব্রুক, ক্রিকেট প্রেমে মগ্ন

আধুনিক ক্রিকেটের এই যুগে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সুযোগ পাওয়া যেকোনো ক্রিকেটারের অন্যতম স্বপ্ন। মোটা অংকের পারিশ্রমিক তো আছেই, সেই সাথে রয়েছে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জনের দারুণ সম্ভাবনা।

আধুনিক ক্রিকেটের এই যুগে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সুযোগ পাওয়া যেকোনো ক্রিকেটারের অন্যতম স্বপ্ন। মোটা অংকের পারিশ্রমিক তো আছেই, সেই সাথে রয়েছে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জনের দারুণ সম্ভাবনা।

এবার এই আরাধ্য স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ইংলিশ তরুণ হ্যারি ব্রুকের। জাতীয় দলে অভিষেকের এক বছরের মধ্যেই জমকালো এই ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছেন তিনি। আর এই উদীয়মান তারকার জন্য সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ব্যয় করেছে ১৩.২৫ কোটি রুপি।

কি এমন বিশেষত্ব আছে হ্যারি ব্রুকের? কেন-ই বা ফ্রাঞ্চাইজিগুলো এমন কাড়াকাড়ি করেছে তাঁকে নিয়ে? এসবের উত্তর লুকিয়ে আছে এই ডানহাতির খেলাতেই; তাঁর ক্যারিয়ারের দিকে লক্ষ করলেই বোঝা যাবে অপার সম্ভাবনা।

সম্প্রতি পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ যখন ইংল্যান্ডের নাভিশ্বাস তুলছিলেন তখন শটের পসরা সাজিয়ে রান করেছিলেন ব্রুক। এশিয়ান পিচে স্পিনারদের বিরুদ্ধে দাপট দেখিয়েউ প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন তিনি৷

বলাই বাহুল্য, স্পিনের বিপক্ষে খেলার দুর্দান্ত সামর্থ্যই হ্যারি ব্রুককে আইপিএলের মঞ্চে অনন্য করেছে। ব্রুকের স্কুলশিক্ষক মার্টিন স্পাইট মনে করেন যে, ‘সে (হ্যারি ব্রুক) এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন যারা ইনিংসের শুরু থেকেই স্পিন খেলতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।’

স্পাইট বলেন, ‘ব্রুক খুবই পরিশ্রমী। একটা জিনিস তাঁকে আলাদা করে সেটা হলো সে প্রথম থেকেই স্পিনকে আক্রমণ করতে পারে। অনেক ব্যাটার আছে যারা পেস, স্পিন দুটোই ভাল খেলেন কিন্তু তারা শুরুর দিকে স্পিন বোলিংয়ে কিছুটা নড়বড় থাকেন। কিন্তু ব্রুক মোটেই তেমন নয়; সে কিছুটা দেরিতে খেলায় সহজেই স্পিনারদের সামলাতে পারে। ডাউন দ্য গ্রাউন্ড, মিড উইকেট কিংবা এক্সট্রা কভার যেকোনো দিকেই শট খেলার সক্ষমতা রয়েছে তাঁর।’

এছাড়া হ্যারি ব্রুকের সুইপ এবং রিভার্স সুইপ এর মত শটগুলোর কথাও বলেন মার্টিন স্পাইট। তিনি জানান যে, হ্যারি ব্রুকের খেলার ধরণ অনেকটাই ক্রিকেটের ব্যাকরণ মানা ছাত্রের মত। তবে রান করার জন্য সব শটই আয়ত্তে আছে তাঁর।

হ্যারি ব্রুকের আরেকজন কোচ ডেভিড কুপার ব্রুকের বল রীড করতে পারার সামর্থ্যের প্রশংসা করেন। কুপারের মতে, এই তরুণ সহজেই বলের লেন্থ বুঝতে পারায় কখন ফ্রন্টফুটে খেলবে কখন ব্যাকফুটে সেটি ঠিক করতে পারে। আবার গুগলি, লেগস্পিন কিংবা মিস্ট্রি স্পিন ধরতে পারার সহজাত সামর্থ্য আছে তাঁর।

ক্রিকেটের ব্যাকরণ মেনেই ক্রিকেটটা খেলেন হ্যারি ব্রুক। পুরনো দিনের মত কিছুটা লেটে বলকে স্পর্শ করেন। কিন্তু তাঁর হিট করার ঈর্ষণীয় ক্ষমতা রয়েছে। স্টোকস বা লিভিংস্টোনের মত বডি না থাকলেও রিস্ট পাওয়ারের সাহায্যে বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করা মোটেও কঠিন নয় ব্রুকের জন্য।

একেবারে ছোটবেলা থেকেই হ্যারি ব্রুকের পাওয়ার হিটিং সামর্থ্য নজরে এসেছিল সবার। টেকনিক্যালি তখন খুব একটা ভাল না হলেও বলকে পিটিয়ে মাঠের বাইরে ফেলতে পারতেন তিনি। সেসময় অবশ্য অ্যাথলেটিক বডি ফিগার ছিল না ব্রুকের, কিছুটা স্বাস্থ্যবানই ছিলেন। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে নিজের টেকনিক এবং ফিটনেস দুটোরই উন্নতি করেন তিনি।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুর দিবে নিজের ব্যাট স্কয়ার অঞ্চল বরাবর রাখতেন। ফলে বোলাররা কিছুটা ওয়াইড বল দিলে সেসব স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারতেন না তিনি। কিন্তু সবসময়ই নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে যাওয়া ব্রুক উন্নতি করতে সময় নেননি। এখন তাঁর ব্যাট কভার, কভার পয়েন্টের দিকে মুখ করে থাকে। এজন্য সহজেই মাঠের চারদিকে শট খেলতে পারেন।

একজন ক্রীড়াবিদের সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন প্যাশন। সেই প্যাশনের কোন কমতি নেই হ্যারি ব্রুকের মাঝে। তিনি ক্রিকেট ভালবাসেন, এর চেয়ে বেশি ভালবাসেন ব্যাটিং করতে। বাবা, দাদা, বড় ভাই কিংবা কোচ সবার কাছ থেকেই ক্রিকেটের জ্ঞান আহরণ করতে উন্মুখ হয়ে থাকেন এই ইংরেজ। দিনের বড় সময়টা কাটিয়ে দেন প্র্যাকটিসে; এরপর আবার দেখেন সেরা সেরা ব্যাটারদের ভিডিও।

ক্রিকেটপ্রেমী আর স্পিনে দক্ষ হ্যারি ব্রুক এখন চাইবেন আইপিএলে নিজের ছাপ রাখতে। তাঁর দল হায়দ্রাবাদও নিশ্চয়ই চাইবে তাঁর এই প্রেম এবং দক্ষতা রানে পরিণত হোক; ব্রুক হয়ে উঠুক রান মেশিন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...