বার্সেলোনা ছাড়ুন, বিশ্বকাপ জিতুন!
বিশ্বকাপ সাফল্যই নয় শুধু, ফুটবল ক্যারিয়ারেও লিওনেল মেসি এবং ডিয়েগো ম্যারাডোনার মাঝে পাওয়া গিয়েছে দারুণ মিল। এই দুইজনই নিজেদের সময়ে খেলেছিলেন বার্সেলোনার ক্লাবে; তবে মজার ব্যাপার যে স্প্যানিশ ক্লাবটির সাথে সম্পর্ক ছেদ করার পরেই বিশ্বকাপ জিততে পেরেছেন তাঁরা।
ফুটবলের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় কে এমন বিতর্কে সবসময়ই এক ধাপ পিছিয়ে রাখা হতো লিওনেল মেসিকে। শুধুমাত্র বিশ্বকাপ জিততে না পারায় পেলে, ইয়োহান ক্রুইফদের সাথে একই কাতারে উচ্চারিত হতো না তাঁর নাম। সমগ্র ফুটবল ইতিহাস পাশে সরিয়ে রাখি, আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সেরা ফুটবলার কে – এমন প্রশ্নেও ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে এগিয়ে রাখতেন প্রায় সবই।
অথচ লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারে ছিল বিশ্বকাপ ছাড়া সবই; ছিল অতিমানবীয় সব রেকর্ড। কিন্তু বিশ্বজয়ের স্বাদ না পাওয়ার সর্বকালের সেরা ফুটবলার হওয়ার দৌড়ে যোজন যোজন পিছিয়ে ছিলেন তিনি। তবে এবার আর পিছিয়ে রাখার যো নেই তাঁকে; কাতারে অনুষ্ঠিত ২২তম বিশ্বকাপ নিজের করে নিয়েছেন লিওনেল মেসি।
আর এর ফলে বিশ্বকাপ সাফল্যের তুলনায় একই বিন্দুতে চলে এসেছেন আর্জেন্টিনার দুই প্রজন্মের দুই সুপারস্টার। নব্বইয়ের দশকে একটি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি আরেকবার রানার আপ হয়েছিলেন তৎকালীন তারকা ডিয়েগো ম্যারাডোনা। অন্যদিকে ২০১৪ সালে রানার আপ হওয়ার পর ২০২২ সালে শিরোপা জিতে নিয়েছেন মেসি।
বিশ্বকাপ সাফল্যই নয় শুধু, ফুটবল ক্যারিয়ারেও লিওনেল মেসি এবং ডিয়েগো ম্যারাডোনার মাঝে পাওয়া গিয়েছে দারুণ মিল। এই দুইজনই নিজেদের সময়ে খেলেছিলেন বার্সেলোনার ক্লাবে; তবে মজার ব্যাপার যে স্প্যানিশ ক্লাবটির সাথে সম্পর্ক ছেদ করার পরেই বিশ্বকাপ জিততে পেরেছেন তাঁরা।
১৯৮২ সালে ৭.৩০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কাতালান ক্লাবটিতে যোগ দিয়েছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। এরপর তাদের হয়ে খেলেছেন ৫৮ ম্যাচ, গোল করেছেন ৩৮টি এবং করিয়েছেন আরো ১৮টি গোল। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন ইতালিয়ান জায়ান্ট এসএসসি নাপোলিতে চলে আসেন ম্যারাডোনা।
আর এর পরের বিশ্বকাপেই বাজিমাত তাঁর; ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপ হয়ে উঠে ম্যারাডোনাময়। প্রায় একক কৃতিত্বেই আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ উদযাপনের সুযোগ এনে দিয়েছিলেন ‘ফুটবলের রাজপুত্র’।
অন্যদিকে ব্লাউগানা জার্সির সঙ্গে লিওনেল মেসির সম্পর্ক একেবারেই অনন্য। নিজের ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটাই বার্সেলোনার হয়ে খেলেছেন তিনি। তবে ক্লাবের আর্থিক জটিলতার ফলে ২০২১ সালে বার্সা এই আর্জেন্টাইনের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে পারেনি। নাটকীয় এক পরিস্থিতি সৃষ্টির পর শেষমেশ নতুন ঠিকানা হয় লিওনেল মেসির। চলে আসেন প্রেমের শহর প্যারিসে; গায়ে জড়ান পিএসজির জার্সি।
বার্সেলোনার হয়ে অতিমানবীয় সব অর্জন থাকলেও এসময় আন্তর্জাতিক ফুটবলে লিওনেল মেসির প্রাপ্তির ঘর ছিল শূণ্য। অথচ স্প্যানিশ ক্লাবটি ছাড়ার মাত্র দেড় বছরের মাথায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট উঠেছে তাঁর মাথায়। শুধু তাই নয়, নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা কোপা আমেরিকা ট্রফিও এসেছে প্যারিসে আসার পরেই।
একটি বিশ্বকাপের জন্য লিওনেল মেসির অপেক্ষা ছিল অনেকদিনের; ফুটবলের সম্ভাব্য সব শিরোপা এবং ব্যক্তিগত অর্জন নিজের করে নেয়ার পর সেই সোনালী ট্রফিতেই নজর ছিল তাঁর। অন্যদিকে ১৯৭৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পর আলবিসেলেস্তারা স্বপ্ন দেখেছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে নিয়ে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর চলতি বছরে অধরা বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে লিওনেল মেসির। আর ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনাময় এক টুর্নামেন্ট শেষে ট্রফি উঠেছে তাঁরই হাতে।
বার্সেলোনার জার্সি খুলে রাখলেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বসন্ত আসবে সেটা বোধহয় বুঝতে পারেননি লিওনেল মেসি। কি জানি, এমন কিছু উপলব্ধি করতে পারলে হয়তো আরো আগেই কাতালানদের বিদায় বলতেন তিনি। আর বিশ্বকাপের উপর বার্সা অভিশাপ আঁচ করে কেউ ক্লাবকে বিদায় বললে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।