বিস্মৃত ‘ফাইটার’ থিসারা

পরিশ্রমী ডান হাতি পেসার, বাঁ-হাতি পাওয়ার হিটার, যিনি লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে – প্রায়ই ঝড় তুলতে পারেন। এমন একজন ক্রিকেটারকে আজকালকার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সম্পদ বলেই মনে করা হয়। থিসারা পেরেরাও তাই ছিলেন। শ্রীলঙ্কা দলের জন্য বড় প্রাপ্তি ছিলেন।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটও খেলতেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), কিংবা বিগ ব্যাশ – কোনো কিছুই বাদ ছিল না। কিন্তু, এত কিছু করতে গিয়ে খুব সম্ভাবনাময় এই অলরাউন্ডার একটা সময় ফিটনেস নিয়ে কাজ করার একদমই ছেড়ে দিলেন। তাঁর প্রভাবটা পড়লো তাঁর পারফরম্যান্সে।

তার ফলাফল – নিজেকে এখন হারিয়ে খুঁজছেন থিসারা পেরেরা – টি-টোয়েন্টির ইতিহাস সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার হওয়ার যার সব যোগ্যতাই ছিল। আর কোনোদিন তিনি ফিরবেন কি না – সেই প্রশ্নেও আছে বিরাট এক সন্দেহ।

প্রথম দিকে তিনি ছিলেন শুধুই একজন বোলার। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব- ১৯ দলের হয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং ভারতের বিপক্ষে যুব টেস্টে ভালো খেলে নজর কাড়েন তিনি। এখানে ভালো পারফর্ম করার স্বীকৃতি স্বরূপ  তিনি অনুর্দ্ধ-১৯ দলে সুযোগ পেয়ে ২০০৮ সালে মালেয়শিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেন তিনি।

এর এক বছর পরেই জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। তবে সেই ডাক ছিল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ইনজুরি জনিত কারণে। এরপরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজে প্রথম নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেখান থিসারা পেরেরা। ব্যাট এবং বল উভয় দিক দিয়ে দলের জয়ে ভূমিকা রাখেন।

পেরেরা তাঁর নিজের সেরা পারফর্মেন্স তুলে রেখেছিলেন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য। ২০১০ সালে ডাম্বুলাতে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি। এর পরে একই বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও পাঁচ উইকেট শিকার করেন থিসারা পেরেরা।

থিসারা পেরেরা এমন ধরনের ক্রিকেটার যিনি কিনা প্রচুর পরিশ্রম করতে পারেন। ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করে পরের পাকিস্তান সিরিজে আবারো ফিরে আসেন। সিরিজে ফিরেই দুর্দান্ত পারফর্ম করেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৬ রানের একটি ইনিংস খেলেন। এই ইনিংসে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৬৯.৬৬। এছাড়াও এই সিরিজে ১০.৬৬ গড়ে শিকার করেন ৯ উইকেট।

এরপরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকে ব্যবহার করা হয়েছিল একজন ফিনিশার হিসেবে। সেই দায়িত্ব বেশ ভালো ভাবে পালন করে দলকে শিরোপা জিতিয়েছেন তিনি। থিসারা পেরেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এবং আন্তর্জাতিক ওয়ানডে হ্যাটট্রিক করেছেন। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছয় বলে ছয় ছক্কা মারার রেকর্ড গড়েছেন তিনি।

থিসারা পেরেরা কলম্বোর সেন্ট জোসেফ কলেজের ছাত্র ছিলেন। এখান থেকে এর আগেও অনেক বড় বড় ক্রিকেটাররা উঠে এসেছেন। ২০১২ সালে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে কিম্বার্লিতে ৩০০ রান তাড়া করে জয় কিংবা পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট হাতে ঝড় তোলার কারণে তিনি পরিচিত হয়েছেন একজন ম্যাচ ফিনিশার হিসেবে। ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের বাইরেও তিনি পরিচিত পেয়েছিলেন একজন দুর্দান্ত ফিল্ডার হিসেবে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো খেলার পুরষ্কার স্বরূপ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের উপরে ব্যাটিং করতেন তিনি। এর ফলাফল হিসেবে দলকে বেশ ভালো সংগ্রহ এনে দিতেন। সীমিত ওভারে বেশ কার্যকর একজন ক্রিকেটার হওয়ার ফলে বিশ্বের প্রায় সব ফ্রাঞ্চাইজি লিগের দলগুলোর নজরে থাকেন তিনি। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের মত তাঁকেও বিশ্বের সব ফ্রাঞ্চাইজি লিগে দেখা যেতে থাকে নিয়মিত। যদিও, এখন সেসব অতীত।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তাঁর উল্লেখ্যযোগ্য পারফর্মেন্স ছিলো ২০১১ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে ইনিংসের শেষের দিকে খেলা ক্যামিও ইনিংস। এই ইনিংসের সুবাদে ২৭৪ রানের থেমেছিল শ্রীলঙ্কার ইনিংস। এছাড়াও ২০১৫ বিশ্বকাপেও কিছু দুর্দান্ত ক্যামিও ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

কিংবদন্তি হওয়ার সব রকম সামর্থ্য থাকার পরও জাতীয় দলে বেশ অনিয়মিত ছিলেন তিনি। কারণটা আগেই বললাম, ফিটনেস জনিত সমস্যায় পারফরম্যান্সটা তাঁর নিয়মিত নয়। শ্রীলঙ্কা দলে এখন যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন তিনি। তবে, হয়তো সেই যাওয়া-আসায় হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। তাই, ১৬৬ টি ওয়ানডে, ৮৪ টি টি-টোয়েন্টি ও ছয় টেস্ট খেলেই বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। নিশ্চয়ই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে আরো অনেক কিছুই দেওয়ার ছিল তাঁর।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link