ম্যাচের শেষ ৫ বলে ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে অবিশ্বাস্য ম্যাচ জিতিয়ে ভারতের ক্রিকেট পাড়ায় এখন আলোচিত এক নাম রিঙ্কু সিং। তাঁকে নিয়ে আলাদা করে আলোচনা হবেই বা না কেন! ক্রিকেট ইতিহাসে যা এর আগে কখনোই হয়নি, তা ইতিহাসের পাতায় ঢুকেছে রিঙ্কু সিংয়ের সৌজন্যে। তাই এমন কীর্তিতে রিঙ্কুর জীবনটাও বদলে গিয়েছে মুহূর্তের মধ্যে। উঠে আসছে রিঙ্কু সিংয়ের জীবন সংগ্রামের কতশত গল্প।
রিঙ্কু সিং কখনো ভারতের জাতীয় দলের দ্বারপ্রান্তে নিজেকে টেনে আনতে পারেননি। কিন্তু ২০১৪ সালে লিস্ট এ ক্রিকেট শুরু করা এ ক্রিকেটার একবার ভারত ‘এ’ দলের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ‘এ’ দলের হয়ে তাঁর সেই যাত্রা আটকে গিয়েছিল একটি নিষেধাজ্ঞার কারণে।
২০১৯ সালে ভারত সফরে এসেছিল শ্রীলঙ্কা এ দল। তো সেই সময়েই ভারতের ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়েছিলেন রিঙ্কু সিং। মূলত সেই সময়ের আগ পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর ৭১ ব্যাটিং গড় আর লিস্ট এ-তে ৪৩ গড় নির্বাচকদের নজরে আসতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সিরিজ তো রিঙ্কু সিংয়ের খেলাই হয়নি, উল্টো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড থেকে মিলেছিল নিষেধাজ্ঞা!
বাইরের দেশে নিজেদের ক্রিকেটারদের কোনো লিগ খেলার ব্যাপারে বরাবরই শক্ত অবস্থানে থাকে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড। রিঙ্কু সিং সেই ভুলটাই করেছিলেন। শ্রীলঙ্কা এ দলের বিপক্ষে সেই সিরিজের আগে তিনি আবু ধাবিতে গিয়েছিলেন রমাদান টি-টোয়েন্টি কাপ খেলতে।
ডেকান গ্লাডিয়েটর্সের হয়ে সেবার ভালই খেলেছিলেন রিঙ্কু সিং। ১৭৬ স্ট্রাইকরেটে প্রায় ৫২ গড়ে করেছিলেন ৩৬১ রান। এরমধ্যে আবার, সে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে ৫৮ বলে ১০৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
তবে সে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে ম্যাচসেরা হওয়া রিঙ্কু সিং পরবর্তীতে নিজের বিপত্তিই ডেকে আনেন। কারণ ভারতের হয়ে চুক্তিভুক্ত কোনো ক্রিকেটারের বিনা অনুমতিতে বাইরের দেশে কোনো টুর্নামেন্ট খেলার নিয়ম নেই। রিঙ্কু সিং সেই নিয়ম ভেঙ্গেই বিসিসিআই কর্তৃক নিষেধাজ্ঞায় পড়ে ভারত এ দলে সুযোগ পাওয়ার আগেই বাদ পড়ে যান।
মজার ব্যাপার হলো, ২০১৭ সালেও রিঙ্কু সিং এই একই টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন। তবে অদ্ভুতভাবে সেবার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েননি এ ক্রিকেটার। আলুবন্দ টাইগার্সের হয়ে সেবার ব্যাট হাতে ৩৭৬ রান করেছিলেন রিঙ্কু সিং। সেঞ্চুরি না পেলেও খেলেছিলেন ৯৪ রানের একটি ইনিংস।
বিসিসিআই থেকে ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা মিললেও রিঙ্কু সিংয়ের ব্যাটিংয়ে অবশ্য তার কোনো প্রভাব পড়েনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের ফর্ম আগের মতোই ধরে রেখেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত খেলা ৪০ টা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং গড় প্রায় ৬০, ৫৯.৮৯! যা ভারতের ইতিহাসে বিজয় মার্চেন্ট, অজয় শর্মা, শান্তনু সাগওয়েকার, ইব্রাহিমের পর পঞ্চম সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড়ের রেকর্ড। এ ছাড়া লিস্ট এ ক্রিকেটেও দারুণ সফল এ ব্যাটার। ব্যাটিং গড় ধরে রেখেছেন ৫০ এর উপরে, ৫৩।
ঘরোয়া ক্রিকেটে সফলতার ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের আইপিএলে ২০ লাখ রূপি দিয়ে তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল পাঞ্জাব কিংস। তবে পাঞ্জাবের হয়ে সেবারের আসরে একটিও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি। পরের বছরে রিঙ্কু সিংকে ৮০ লাখ রূপিতে দলে ভেড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। এরপর কলকাতার হয়েই তাঁর আইপিএল অভিষেক হয়।
যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটের মতো শুরুর দিকে আইপিএলে নিজের ছন্দটা ঠিক খুঁজে পাচ্ছিলেন না রিঙ্কু সিং। আগের মৌসুমে কিছুটা ঝলক দেখাতে শুরু করেছিলেন। তবে লাইমলাইটে আসার মতো তা যথেষ্ট ছিল না।
অবশেষে এবারের আইপিএলে সমস্ত আলো নিজের করে নিলেন আলিগড়ের এ ক্রিকেটার। শেষ ৫ বলে ৫ ছক্কায় অবিশ্বাস্যভাবে কলকাতাকে জিতিয়ে লাইমলাইটে চলে এলেন রিঙ্কু সিং। আইপিএলের জৌলুশময় মঞ্চে এখন শুধুই রিঙ্কু সিং বন্দনা।
রিঙ্কু সিং নিশ্চয়ই এমন মুহূর্তকে দীর্ঘমেয়াদে বন্দী করতে চাইবেন। ক্ষণিকের তারকাখ্যাতি ছাপিয়ে হয়ে উঠবেন সময়ের সেরা তারকা। নিজের এমন সুসময়টা নিশ্চিতভাবেই ধারাবাহিকতার চাদরে মুড়ে রাখতে চাইবেন। হতে চাইবেন আলিগড়ের বাদশা।