ভারতের হতভাগা একাদশ

কেউ কেউ সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়েও নজর কাঁড়তে ব্যর্থ হন নির্বাচকদের। কেউবা আবার সুযোগ পেয়েও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। আবার কারো কারো বুক ভরা আক্ষেপ নিয়েই ঘরোয়া ক্রিকেটের ‘তারকা’ তকমা নিয়ে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন।

বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা দল হিসেবে ২২ গজ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ভারত। তারকায় টইটুম্বুর এই দলে এখন সু্যোগ পাওয়াটা যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য যেন সোনার হরিণের চেয়েও কম নয়। কেউ কেউ প্রতিভা আর সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে জায়গা করে নেন জাতীয় দলে।

তবে কেউ কেউ সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়েও নজর কাঁড়তে ব্যর্থ হন নির্বাচকদের। কেউবা আবার সুযোগ পেয়েও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। আবার কারো কারো বুক ভরা আক্ষেপ নিয়েই ঘরোয়া ক্রিকেটের ‘তারকা’ তকমা নিয়ে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন।

যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে দাপুটে পারফরম্যান্সের পরেও জাতীয় দলে থিতু হতে পারেননি – এমন ভারতীয় ক্রিকেটারদের তালিকাটা বেশ লম্বা। আর সেই দূর্ভাগাদের নিয়েই চেষ্টা করলাম একটি একাদশ গড়ার।

  • শেলডন জ্যাকসন

ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন শেলডন জ্যাকসন। তিন ফরম্যাটেই তাঁর পারফরম্যান্স নজরকাড়া। তবে এখন পর্যন্ত সুযোগ হয়নি ভারতের জার্সি গায়ে মাঠে নামার। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) বর্তমানে কলকাতার হয়ে খেলছেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ৫০ গড়ে সাড়ে ৫ হাজার রানের মালিক তিনি। এছাড়া লিস্ট এ ক্রিকেটেও প্রায় ৩৮ গড়ে ২ হাজারের বেশি রান করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ৪৪ ফিফটি ও ২৭ সেঞ্চুরি নিজের নামে করেছেন জ্যাকসন।

  • ওয়াসিম জাফর

সাবেক ভারতীয় ওপেনার ওয়াসিম জাফর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৩১ টেস্ট ও ২ টি ওয়ানডে খেলেছেন। তবে ফর্মহীনতায় বাদ পড়ার পর আর দলে ফিরতে পারেননি এই ওপেনার। ঘরোয়া ক্রিকেটে অজস্র রানের পরেও মন গলাতে পারেননি নির্বাচকদের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ৫১ গড়ে আছে ২০ হাজারের কাছাকাছি রান! লিস্ট এ’তেও ৪৪ গড়ে প্রায় ৫ হাজার রান করেছেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই ওপেনার ৫৭ সেঞ্চুরি ও ৯১ ফিফটির মালিক!

  • সুব্রামানিয়াম বদ্রিনাথ

মিডল অর্ডারে বরাবরই তারকায় ঠাঁসা দল ভারত। এখানে সুযোগ পেতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয় ক্রিকেটারদের। তবু কারো কারো অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয়না। ঘরোয়া ক্রিকেটে তামিল নাড়ুর হয়ে রানের বন্যা বইয়েছেন সুব্রামানিয়াম বদ্রিনাথ। জাতীয় দলের হয়েও কিছু ম্যাচে সুযোগ হয়েছে তাঁর। ২ টেস্ট, ৭ ওয়ানডে ও ১ টি-টোয়েন্টির পর আর দলে ডাক পাননি তিনি। একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে ৪৩ রান করার পরেও তিনি ছিলেন উপেক্ষিত। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি প্রায় ১৭ হাজার রানের মালিক!

  • অমল মুজুমদার

অমল মুজুমদার রঞ্জি ট্রফিতে বেশ কিছু রেকর্ড নিজের নামে করেছেন। ১৯৯৪ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকেই ২৪৫ রান করেন; যেটি ছিলো বিশ্ব রেকর্ড। রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও হন তিনি! তবুও কখনোই সুযোগ পাননি জাতীয় দলে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৭১ ম্যাচে ৪৮ গড়ে ১১ হাজারের বেশি রান করেছেন তিনি। ৩০ সেঞ্চুরির সাথে করেছেন ৬০ ফিফটি। লিস্ট এ তেও খেলেছেন ১১৩ ম্যাচ! যেখানে ৩৮ গড়ে করেছেন প্রায় ৩৩০০ রান। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুন ফর্মে থাকলেও সুযোগ মেলেনি জাতীয় দলে।

  • করুণ নায়ার

মিডল অর্ডারে এই তালিকায় আছেন করুণ নায়ারও। এক টেস্টে ত্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার পরেও পরের টেস্টেই বাদ পড়েন তিনি। এরপর আর দলে সুযোগ পাননি করুণ। ভারতের হয়ে ৬ টেস্ট ও ২ ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে আছে প্রায় ১০ হাজার রান। আইপিএলে দল পেলেও একাদশে সেভাবে সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। করুণ নায়ারের করুন ভাগ্য জাতীয় দল থেকে তাকে ধীরে ধীরে সরিয়ে দিচ্ছে আরো দূরে।

  • মনোজ তিওয়ারি

করুণ নায়ারের মতোই জাতীয় দলে থিতু হতে পারেননি মনোজ তিওয়ারি। মিডল অর্ডারে তিনি ছিলেন বেশ প্রতিভাবানদের একজন। ভারতের হয়ে ১২ ওয়ানডে ও ৩ টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। ওয়ানডেতে ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটি করলেও নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি মনোজ। তবে প্রথম ঘরোয়া ক্রিকেটে তার ৫০ এর কাছাকাছি গড় প্রমাণ করে তিনি ছিলেন মিডল অর্ডারে বেশ প্রতিভাবান একজন।

  • অভিষেক নায়ার

ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে খুব বেশি ম্যাচে খেলার সুযোগ হয়নি অলরাউন্ডার অভিষেক নায়ারের। মিডিয়াম পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে দারুন সম্ভাবনাময়ী ছিলেন নায়ার। তবে সুযোগের অভাবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি তিনি। জাতীয় দলে খেলেছেন মাত্র তিন ওয়ানডে! তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে ৪৬ গড়ে প্রায় ৬ হাজার রান করেছেন! সেই সাথে বোলিংয়েও নিয়েছেন ১৭৩ উইকেট।

  • জলজ সাক্সেনা

জলজ সাক্সেনা দীর্ঘদিন ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে অসাধারণ পারফর্ম করছেন। তবে এখনো নির্বাচকদের নজরকাঁড়তে পারেননি তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৬ গড়ে ৬ হাজারের বেশি রান সাথে বল হাতে শিকার করেছেন ৩৪৭ উইকেট! তারকায় ঠাঁসা জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার আর সম্ভাবনা নেই ৩৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারের।

  • অমিত মিশ্র 

এই একাদশের মূল বোলার হিসেবে থাকবেন অমিত মিশ্র, জয়দেব উনাদকাট এবং পঙ্কজ সিং। আইপিএলের কিংবদন্তি বোলার অমিত মিশ্র জাতীয় দলে সুযোগ পেলেও নিয়মিত হতে পারেননি তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬৮ ম্যাচে শিকার করেছেন ১৫৬ উইকেট। অপরদিকে, ঘরোয়া ক্রিকেটে এই লেগ স্পিনার শিকার করেছেন প্রায় ১১০০ উইকেট! আইপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও তিনি।

  • জয়দেব উনাদকাত

ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি জয়দেব উনাদকাত। জাতীয় দলে ১ টেস্ট, ৭ ওয়ানডে ও ১০ টি-টোয়েন্টি খেলা উনাদকাত ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৬০০ উইকেট। এই একাদশের একমাত্র বাঁ-হাতি পেসার হিসেবে থাকছেন উনাদকাত।

  • পঙ্কজ সিং

পঙ্কজ সিংকে একসময় বেশ সম্ভাবনাময়ী ভাবা হলেও ইনজুরি আর বাজে ফর্মের কারণে কখনোই লাইমলাইটে আসতে পারেননি তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে ৬০০ এর বেশি উইকেট নেওয়া পঙ্কজ ভারতের হয়ে ২ টেস্ট আর ১ ওয়ানডে খেলে শিকার করেছেন ২ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৮ বার পাঁচ উইকেট ও ৫ বার ১০ উইকেট শিকার করেন এই ডানহাতি পেসার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...