আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক ঘটেছিল শচীন টেন্ডুলকারের সাথে, পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে। একই দিনে প্রতিপক্ষ দলে ওয়াকার ইউনুসেরও অভিষেক ঘটে। পরবর্তীতে শচীন ও ইউনুস বিশ্ববিখ্যাত ক্রিকেটার বনে গেলেও, ভাগ্যদেবী তাঁর সহায় ছিল না। ঠিকই ধরেছেন, সলিল আঙ্কোলার কথা বলছিলাম।
৫৪ বছর বয়েসী সাবেক এই ক্রিকেটার জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করেছেন। জীবনটা তাঁর বেশ নাটকীয় বলা যায়। ক্যারিয়ার এর শুরুতে ছিলেন ক্রিকেটার, পরবর্তীতে ক্রিকেটে ব্যর্থ হয়ে বনে গেলেন অভিনেতা। বেশ কয়েকটি বলিউড সিনেমা ও হিন্দি সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। এরপর বুঁদ হয়ে গেলেন অ্যালকোহলের দুনিয়ায়।
যার কারণে জীবন থেকে হারাতে হয়েছিল প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের। দীর্ঘ সময় ধরে অ্যালকোহলিক থাকার পর নিজেকে শুধরে নিতে পেরেছেন। ইতোমধ্যেই রিয়া নামের এক মহীয়সী তাঁর জীবনে এসেছেন, নতুন করে ঘর বাঁধলেন দুজনে। সলিল আঙ্কোলা আবার ফিরে আসলেন ক্রিকেটের দুনিয়ায়। নাহ ক্রিকেটার হিসেবে নয়, ২০২১ সালে মুম্বাইয়ের চীফ সিলেক্টর হিসেবে আবারও ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করলেন তিনি।
পহেলা মার্চ ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করা সলিল আঙ্কোলা মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছিলেন। ছিলেন মূলত বোলার।। মহারাষ্ট্রের পক্ষে ধারাবাহিকভাবে ভালো বোলিং করায় তাঁকে ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে পাকিস্তান সফরের জন্য ভারত দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৫ নভেম্বর ১৯৮৯ তে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে তাঁর অভিষেক ঘটে।
ইনজুরির কারণে পরের টেস্টে বাদ পড়েন। তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার তাই একটি টেস্টে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। ১৯৯৩ সালে ভারতের ওয়ানডে দলে খেলার ডাক পান। ১৯৯৬ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপেও দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তাঁর ক্যারিয়ারে তিনি কেবল ২০ টি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
২৮ বছর বয়সে বাম পায়ে শিন বোনে (অস্টিয়ড অস্টিওমা) টিউমারের ফলে খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন তিনি। প্রায় ২ বছর চলাফেরা করতে পারেননি। জীবনের এই পর্যায়ে তিনি নিজের ভাগ্যের প্রতি চরম অসন্তুষ্ট ছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর অভিনয় জগতে নাম লেখালেন। ওই সময়ের স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, ‘আমি একদমই অভিনয় জানতাম না। ওরা সম্ভবত আমার সুঠাম দেহের জন্য আমাকে কাজ দিত।’ ধীরে ধীরে অভিনয়ে পারদর্শী হয়ে উঠেন তিনি।
কিন্তু অতৃপ্তি থেকে সেই যে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন, আর ফিরেও তাকালেন না ক্রিকেটের দুনিয়ার দিকে। এমনকি তখন ভারতীয় দলে কারা খেলছেন সেই খোঁজ ও নিতেন না। কখনো ম্যাচও দেখতেন না। সলিল আঙ্কোলা এতোটাই ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছিলেন মনে!
প্রায় এক দশকের বেশি সময় পর মুখ ফিরিয়ে নেয়া ক্রিকেটে আগ্রহ দেখিয়ে ২০১১ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি দেখেছিলেন। কারণ শচীনের শেষ বিশ্বকাপ ছিল এটি। সেই শচীন, যার সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুনিয়ায় পথচলাটা শুরু হয়েছিল তাঁর! তাঁর মনে শচীন যে একটা বিশেষ জায়গার দাবিদার, তা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন।
এরপর আবার ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। একেবারে অ্যালকোহল তাঁকে গ্রাস করে ফেলল। ২০০৪ থেকেই মদ্যপে আসক্ত ছিলেন। প্রথম স্ত্রী ও সন্তানেরা তাঁর থেকে দূরে চলে গেল। জীবনে অ্যালকোহল ছাড়া আর কিছু রইলো না তাঁর। ফেসবুকের মাধ্যমে ২০১২ তে দ্বিতীয় স্ত্রী রিয়ার সাথে পরিচয় হয়।
পেশায় ডাক্তার রিয়া তাঁর অ্যালকোহলের নেশাকে একটি রোগ হিসেবে নিলেন। তিনিই আঙ্কোলাকে অনুধাবন করাতে পেরেছিলেন এই রোগ থেকে তাঁকে মুক্তি পেতে হবে। কারণ ইতোমধ্যেই ২০১২-২০১৪ সময়ের মধ্যেই সলিল আঙ্কোলা ৯-১০ বার আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন আঙ্কোলার মনে হলো তিনি আসলে মরছেনও না, এবং শান্তিতে বেঁচে থাকছেন ও না। এই আত্ম উপলব্ধির পর তিনি রিহ্যাবে স্বেচ্ছায় ভর্তি হলেন এবং অ্যালকোহল থেকে নিজেকে সরিয়ে আনলেন।
প্রায় ৫৩ বছর বয়সে তাঁর মনে হলো যেহেতু তিনি ক্রিকেটার ছিলেন, ক্রিকেটে সম্পৃক্ত থাকলেই তিনি সবচেয়ে ভালো থাকবেন। তখন ২০২১ সালে তিনি মুম্বাইয়ের প্রধান নির্বাচক হিসেবে যোগ দেন। এভাবে তিনি ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসা-কে পুনরায় খুঁজে পেলেন। যাক, শেষ অবধি আবারও অনেক জল গড়ানোর পর হলেও মানুষটা ক্রিকেটেই ফিরলেন।