বিস্ময়কর বিদায়ের ক্ষণগণনা

ক্রিকেটটা বদলে যাচ্ছে। খানিক ধীরগতিতে। তবে বহমান একটা নদীর মত করেই পরিবর্তনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। ওয়ানডে ক্রিকেটটা হঠাৎ করেই যেন কেমন একটা জৌলুশ হারিয়ে ফেলছে। এর জন্যে হয়ত অনেকে দায়ী করবেন টি-টোয়েন্টির মহাজাগরণকে। আবার কেউ কেউ আঙুল তুলবেন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দিকে। এসব কিছুকে দোষারোপ করা যায়। সামনের দিনে হয়ত করবেও।

তবে দোষারোপ করে তো আর পরিবর্তনের ধারা বদলে দেওয়া যাবে না। ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে খেলার পরিমাণ বেড়েছে বহু গুণে। এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোই ক্রিকেটে বেশি প্রচলিত। এই দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, আইসিসির টুর্নামেন্ট ও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে খেলতে খেলোয়াড়রা হাপিয়ে উঠছেন। এত চাপ সইতে পারছেন না অনেকেই। নিয়ে নিচ্ছেন অবসর। এই ক্ষেত্রে পছন্দের ফরম্যাট ওয়ানডে। এই যেমন ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা বেন স্টোকস ছেড়ে দিয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেট।

শঙ্কা রয়েছে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর বেশ কিছু খেলোয়াড় অবসর নিতে পারেন রঙিন পোশাকের এই ফরম্যাটটাকে। এমন কিছু খেলোয়াড়দের নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।

  • হার্দিক পান্ডিয়া (ভারত) 

ইনজুরির সমস্যা রয়েছে হার্দিক পান্ডিয়ার। এই একটা কারণে হয়ত তিনি বিদায় জানাতেন পারেন ওয়ানডে ফরম্যাটটাকে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপটা অনুষ্ঠিত হবে ভারতের মাটিতে। ঘরের মাঠে ঘরের দর্শকদের সামনে নিশ্চয়ই পারফরম করতে চাইবেন হার্দিক। আর তাছাড়া তাঁকে দলেও নিশ্চয়ই চাইবে ভারত। কেননা তিনি দলের ভারসাম্য বজায় রাখেন।

যদিনা তাঁর কিংবা ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনার পরিবর্তন হয়। হার্দিক যদি টেস্ট ক্রিকেটে ফেরেন তবে ওয়ানডে ফরম্যাট ছেড়ে দেওয়া সময়ের ব্যাপার। তবে দীর্ঘদিন হার্দিকে সার্ভিসটা পেতে চাইলে তাঁকে টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব দিয়ে সংক্ষিপ্ত দুই ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলাটা চালিয়ে রাখার একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

  • ট্রেন্ট বোল্ট (নিউজিল্যান্ড)

নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের অন্যতম অস্ত্র ট্রেন্ট বোল্ট। বা-হাতি এই পেসার নিউজিল্যান্ডের তিন ফরম্যাটের দলেই রয়েছেন। আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন সমানভাবেই। তবে আসন্ন ২০২৩ বিশ্বকাপের পর হয়ত তাঁকে আর দেখা যাবে না ওয়ানডে ফরম্যাটে। নিজের বয়সের কথা মাথায় রেখে চাপ কমাতে এমন সিদ্ধান্ত হয়ত নিতে পারেন ট্রেন্ট বোল্ট।

অন্যদিকে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে প্রয়োজন ব্ল্যাকক্যাপসদের। আর নিজের জন্যে হয়ত বোল্ট খেলে যেতে চাইবেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এমন জৌলুশের যুগে সহসাই হারিয়ে যেতে চাইবেন না বোল্ট। তাই হয়ত ওয়ানডে ফরম্যাট ছেড়ে দেওয়াটাই শ্রেয় মনে করতে পারেন বোল্ট।

  • সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)

যেকোনো ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।  এটা নিয়ে কোনো তর্কের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। আর এটাও ঠিক সব ফরম্যাটে সাকিব বাংলাদেশকে দিয়েছেন বিস্তর আনন্দের উপলক্ষ্য।

তবে, সব ভালরই তো শেষ আছে। আর সাকিবের চেয়ে ভাল কিই বা আছে। হ্যাঁ, ২০২৩ বিশ্বকাপ দিয়ে সাকিবও বিদায় জানাতে পারেন ওয়ানডেকে। হয়তো, এরপর তিনি মুলত টি-টোয়েন্টি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেই বেশি মন দিবেন। বয়সটাও তো কম নয়।

  • রবীন্দ্র জাদেজা (ভারত)

ভারত দলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন রবীন্দ্র জাদেজা। সময়ের পরিক্রমায় তিনি একজন সম্ভাবনাময় তরুণ ক্রিকেটার থেকে হয়েছেন এই সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। দীর্ঘ এই পথচলায় বহুবার ইনজুরি আক্রান্ত হয়েছেন জাদেজা। তাইতো ওয়ানডেতে এখন আর তাঁকে নিজের কোটার পুরোটা বল করতে দেখা যায় না। আর ক্রিকেটের চাপে নিজেকে প্রস্তুত করবারও সময় নেই।

এমনটা হতেই পারে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর সবাইকে রীতিমত চমকে দিয়ে অবসর গ্রহণ করতে পারেন। টেস্ট ক্রিকেটের এলিট অলরাউন্ডারদের কাতারে নিজের নামটি তুলে ফেলার মত প্রলোভন এড়িয়ে যাওয়া দুষ্কর। তাই এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে, আর সেজন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখাটা হবে ভক্তদের কাজ।

  • মিশেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন মিশেল স্টার্ক। জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার পর থেকে বা-হাতি এই পেসার দলের জয়ে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার চেষ্টা করেছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর পারফরমেন্স গ্রাফটা ক্রমশ নিম্নমুখী।

তবুও তিনি শেষ চেষ্টাটা করবেন হয়ত ২০২৩ বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নেওয়ার। তাঁর মত অভিজ্ঞ একজনকে নিশ্চয়ই দলে চাইবে অজিরা। তবে এরপর হয়ত ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন বর্ষীয়ান এই ক্রিকেটার।

  • এনরিচ নরকে (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ইতোমধ্যে প্রায় সমান সংখ্যক ওয়ানডে ও টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলেছেন এনরিচ নরকে। গতিবান এই বোলারকে প্রোটিয়াদের প্রয়োজন লাল বলের ক্রিকেটে। এর পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও নরকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। হয়ত এই দুইটি ফরম্যাটের মধ্যেই সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টাটা করবেন নরকে।

এর ফলে হয়ত ওয়ানডে ফরম্যাটটাই ত্যাগ করতে চাইবেন নরকে। এই ফরম্যাটটায় হয়ত আহামরি কিছু করে দেখাবার বাকি নেই তাঁর। তাছাড়া বর্তমান সময়ে তিন ফরম্যাট এক সাথে চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন বিষয়। ইনজুরিমুক্ত থাকতে খেলোয়াড়দের যেকোন একটা ফরম্যাটের মায়া অন্তত ছেড়ে দিতেই হত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link