দিস ইজ সামথিঙ আনবিলিভেবল!

বাংলাদেশের জন্য বাকি রাস্তাটা একাই সাফ করেছেন তাসকিন! মিলার, প্রিটোরিয়াসরা ভীত গড়ার চেষ্টা করলেও তাসকিনের আঘাতে খুব বেশিদূর যেতে পারেননি এই দুই ব্যাটার। প্রিটোরিয়াস ২০ ও মিলার ১৬ রানে ফিরলে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রানেই গুড়িয়ে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস!

বল সীমানার বাইরে। ধারাভাষ্যকক্ষে আতাহার আলী খান চিৎকার করে উঠলেন, ‘দিস ইজ সামথিঙ আনবিলিভেবল।’ সত্যিই তাই! যেখানকার কন্ডিশন বাংলাদেশের জন্য এতটাই বিরুদ্ধ যে, আগে কখনোই জিততে পারেনি একটাও ম্যাচ। সেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেই, তাঁদেরই বিপক্ষেই যেকোনো ফরম্যাটে প্রথমবারের মত সিরিজ জিতল বাংলাদেশ দল।

এইতো সবশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়! বাংলাদেশ ক্রিকেটের যেনো এক নতুন শুরু। তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ ভালো একটি দল। ওয়ানডে ফরম্যাট বিবেচনায় নিলে অনেক বড় দলের চেয়েও খানিকটা এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।

সেটার প্রমাণও দিলো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের ৯ উইকেটে হারিয়ে ২-১ এ ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনিং জুটিতে ৪৬ রান তুলে দুই প্রোটিয়া ওপেনার জেনম্যান মালান ও কুইন্টন ডি কক। এরপর দলীয় ৪৬ রানে মেহেদি মিরাজের ঘূর্ণিতে লং অফে মাহমুদউল্লাহর হাতে ধরা পড়েন ডি কন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে কাইল ভেরেইনের সাথে ২০ রান যোগ করতে তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মালান। প্রোটিয়াদের পতনের শুরুটাও এখানেই! এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। তাসকিনের গতি আর বাউন্সে মুখ থুবড়ে পড়ে প্রোটিয়াদের ব্যাটিং শিবির।

দলীয় ৭১ রানে সাকিবের বলে টেম্বা বাভুমা ও ৮৩ রানে শরিফুলের বলে ভ্যান ডার ডুসেন আউট হলে ৪ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের জন্য বাকি রাস্তাটা একাই সাফ করেছেন তাসকিন! মিলার, প্রিটোরিয়াসরা ভীত গড়ার চেষ্টা করলেও তাসকিনের আঘাতে খুব বেশিদূর যেতে পারেননি এই দুই ব্যাটার। প্রিটোরিয়াস ২০ ও মিলার ১৬ রানে ফিরলে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রানেই গুড়িয়ে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস!

ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ও দেশের বাইরে প্রথমবার পাঁচ উইকেট নেন তাসকিন। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম বোলার হিসেবে শিকার করেন ফাইফর। এছাড়া সাকিব নেন ২ উইকেট। প্রোটিয়াদের পক্ষে মালান সর্বোচ্চ ৩৯ ও কেশব মহারাজ করেন ২৮ রান।

জবাবে লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলতে থাকে দুই বাংলাদেশী ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। ধীরে ধীরে প্রোটিয়া বোলারদের উপর চড়াও হন তামিম। এরপর তামিম-লিটনের ব্যাটে দ্রুত রান এগোতে থাকে। ৫২ বলে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন তামিম। তামিম ঝড়ে রেহাই পাননি লুঙি-রাবাদা কিংবা শামসি-প্রিটোরিয়াসরা। ১৭ ওভারেই ওপেনিং জুটি একশো পার!

ওপেনিং জুটিতে আসে ১২৭ রান! জয় থেকে হাত ছোয়া দূরত্বে থাকতে ব্যক্তিগত ৫৭ বলে ৪৮ রানের অসাধারণ ইনিংস শেষে কেশব মহারাজের শিকার হয়ে ফিরেন লিটন। তবে তামিম-সাকিবের ব্যাটে বাকি পথটা সহজেই পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। তামিমের অপরাজিত ৮৭ ও সাকিবের ১৮ রানে ২৩.৩ ওভার বাকি থাকতে ৯ উইকেটের ঐতিহাসিক এক জয় পায় বাংলাদেশ।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা – ১৫৪/১০ (৩৭ ওভার); মালান ৩৯ (৫৬), মহারাজ ২৮ (৩৯), প্রিটোরিয়াস ২০ (২৯); তাসকিন ৯-০-৩৫-৫, সাকিব ৯-০-২৪-২, মেহেদী মিরাজ ৫-০-২৭-১।

বাংলাদেশ – ১৫৬/১ (২৬.৩ ওভার); তামিম ৮৭ (৮২)*, লিটন ৪৮ (৫৭), সাকিব ১৮* (২০); মহারাজ ৭-০-৩৬-১।

ফলাফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: তাসকিন আহমেদ (বাংলাদেশ)

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...