যে ধরনের ব্যাটিং এর জন্য আমরা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আমাদের মন জয় করেছিলেন, সাগরিকায় সেই রিয়াদেরই দেখা মিললো অনেকদিন বাদে। স্মৃতির পাতায় ভেসে আসলো নিদহাস ট্রফিতে ছয় মেরে ম্যাচ জেতানো রিয়াদের ছবিটা। বলের লাইনে গেলেন, ব্যাটের হালকা একটা ছোঁয়ায় বল সীমানা পার ও শূন্যে উড়তে থাকা রিয়াদ।
সেই রিয়াদকে বাংলাদেশ খুঁজে পাচ্ছিল না অনেকদিন ধরেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রিয়াদের সেই ইমপ্যাক্ট বাংলাদেশ দল খুঁজে বেড়াচ্ছে বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটায়। যদিও দলটার অধিনায়ক এই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই। তবে বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলটায় বেশ পরিবর্তন হয়েছে, হচ্ছে।
যদিও এই আলোচনাটা অনেক আগে থেকেই হচ্ছিল। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশে তরুণ ক্রিকেটারদের প্রয়োজন। যারা ভয়ঢরহীন ক্রিকেট খেলতে পারবে। এই ফরম্যাটের মেজাজটা ধরতে পারবে। আসলে তরুণ, অভিজ্ঞ এই শব্দ গুলো দিয়ে দলটাকে ভাগ করাও ভুল হচ্ছে। ব্যাপারটা হওয়া উচিৎ পারফর্মেন্স। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমাদের আসলে পারফর্মার প্রয়োজন, এই ফরম্যাটের ধরণটা বুঝে সেই অ্যাপ্রোচটা মাঠে দেখাতে পারেন এমন ক্রিকেটার প্রয়োজন।
কয়েক বছর আগেও সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির মেজাজটা সবচেয়ে ভালো ধরতে পারতেন এই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তবে গত দুই বছরে প্রেক্ষাপট বদলেছে অনেক। তামিম ইকবাল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে সাময়িক অবসর নিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি দলে মুশফিকের জায়গা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
রিয়াদ যে আলোচনা-সমালোচনার বাইরে ছিলেন তাও না। এই ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটিং করার ধরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ ছিল। প্রশ্ন তোলাও হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করে অনেক বেশি ডট বল খেলছিলেন। এই ফরম্যাটে তাঁর স্ট্রাইকরেটও অভাবনীয় ভাবে কমে এসেছিল।
তাঁর পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩০ এর আশেপাশে। তবে গত মৌসুমে যে ১৩ টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন সেখানে তা নেমে হয়েছে মাত্র ৯৭.৭৭। এছাড়া ২০২১-২২ মৌসুমের ১১ ম্যাচ খেলার পর তাঁর স্ট্রাইকরেট ১১১.১১।
এছাড়া তাঁর পুরো ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়েই নানারকম সমালোচনা জায়গা ছিল। অনেক সময় তাঁর ধীরগতির ইনিংসের কারণেও দলকে ম্যাচ হারতে হয়েছে। বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর ইনিংস নিয়েও ছিল সমালোচনা। ফলে অধিনায়ক রিয়াদ আসল মন জয় করতে পারছিলেন না।
এমন অবস্থায় আজ চট্টগ্রামের দেখা মিললো অন্য এক রিয়াদের। আসলে বলা ভালো পুরনো সেই রিয়াদের। যেই রিয়াদকেই আমরা দেখে অভ্যস্ত। যেই রিয়াদকে বাংলাদেশ দল খুঁজে বেড়াচ্ছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
প্রথমে তামিমের সাথে ব্যাট করতে নেমে খানিকটা সময় নিয়েছেন। স্কোরবোর্ড সচল রেখেছেন। এরপর তামিম আউট হবার পর রিয়াদ নিজের মত করে পুরো ইনিংসটা সাজান। কুমিল্লা মাঝে যখন রান করতেই ভুগছিল তখন তিনি হাত খোলা শুরু করলেন।
ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে রিয়াদ শেষ দিকে ঝড় তুললেন। শেষ পর্যন্ত ৪১ বলের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেললেন। ১৭০.৭৩ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করে করেছেন ৭০ রান। ইনিংসটিতে ছিল ৩ টি চার ও ৪ টি ছয়। তাঁর এই ইনিংসে চড়েই কুমিল্লা বোর্ডে ১৮১ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায়।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যে এই কাজটা পারেন তা আজ নতুন জানা হলো না। রিয়াদ তাঁর ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের হয়ে এমন অনেক ইনিংস খেলেছেন। যে কারণেই রিয়াদ সাইলেন্ট কিলার হয়ে উঠেছিলেন। তবে সেই রিয়াদ কেমন নিভু নিভু হয়ে আসছিলেন। তবে আজ আবার রিয়াদের দিরে আসার একটা আভাষ পাওয়া গেল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এই রিয়াদকেই প্রয়োজন।