স্প্যানিশ সুপার কাপ দিয়ে শুরু, এরপর লা লিগা আর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় – অন্যতম সেরা একটি ফুটবল মৌসুম এবার কাটিয়েছে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। এমন সাফল্যের নেপথ্যের নায়কদের আলোচনায় প্রথমেই বলা হয় করিম বেনজেমার কথা। বলা হয় তরুন ভিনি জুনিয়র কিংবা বর্ষীয়ান লুকা মদ্রিচের কথা। কিন্তু কেন যেন, পুরো মৌসুম জুড়ে রিয়ালকে অনেকবার রক্ষা করা থিবো কোর্তায়ার নামটা আড়ালে থেকে যায়।
এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের কথাই ধরুন। ভঙ্গুর ডিফেন্সের সুযোগ নিয়ে বারবার যখন রিয়াল মাদ্রিদের আশার প্রদীপ নিভিয়ে দিতে চেয়েছিল লিভারপুল, ততবারই দলের অগ্নিশিখা আগলে রেখেছেন তিনি। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, সমানতালে সামলেছেন সালাহ-মানে দের প্রচেষ্টা। কারো কারো মতে, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা গোল কিপিং পারফরম্যান্স আজ দেখিয়েছেন বেলজিয়ান তারকা।
ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই ফাইনালে নয়টি সেভ করা প্রথম এবং একমাত্র গোলরক্ষক এখন থিবো কোর্তায়া। আজ থেকে কয়েক বছর পরে ম্যাচের স্কোরশিট দেখলে যে কেউ বলবে, রাতটা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের। বলারই কথা, সেখানে শুধু গোলের সংখ্যা আর গোলদাতার নামই তো লেখা থাকে।
তবে ম্যাচটি দেখা প্রতিটি চোখ জানে কিভাবে ঠাণ্ডা মাথায় দুই দলের যুদ্ধে নিজ দলকে জয়ী করেছেন কোর্তোয়া। আজ থেকে কয়েক বছর পরেও কেউ রিয়ালের ১৪ তম শিরোপার কথা ভাবলেই, কল্পনায় ভেসে উঠবে এক জোড়া প্রতিরোধী হাত।
৫৯ মিনিটে করা ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গোলটা বাদ দিলে পুরো ম্যাচের হাইলাইটসের অনেকটুকু জুড়ে থাকবেন অবিশ্বাস্য দক্ষতায় একের পর এক গোল বাঁচিয়ে দেয়া কোর্তোয়া। প্রতিদান পেতেও সময় লাগেনি তার, সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টের প্লেয়ার অব দ্য ফাইনালের পুরস্কারটা জিতে নিয়েছেন তিনি।
তবে একা শুধু গোলরক্ষকের স্তুতি গাইলে অবিচার হবে। কোর্তোয়া’র পাশাপাশি বলতে হয় নিজেদের সবটুকু উজাড় করে ডিফেন্স করে যাওয়া দানি কারভাহাল কিংবা আলাবার কথা। এছাড়া ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোকে অনেকদিন পর দেখা গিয়েছে স্বরুপে। কখনো বক্সের ভিতর তিন নম্বর সেন্টার ব্যাক কখনো বা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে লিভারপুলের ফরোয়ার্ডদের আটকে দিয়েছেন ব্রাজলিয়ান ট্যাংক।
শুধু এই ফাইনাল নয়, প্রায় পুরো আসর জুড়ে অনেক বেশি ধারাবাহিক থিবো কোর্তায়া। যদিও ক্লিনশিট কম থাকায়, জেতা হহয় জামরো ট্রফি। তারপরও থিবো কোর্তায়া শ্রেষ্ঠত্বের কোন সন্দেহ জাগে না। অ্যালিসন, এডারসনদের মত বিশ্বসেরাদের চেয়ে কোন অংশে কম নন দীর্ঘদেহী এই গোলরক্ষক।
তার পাশাপাশি এডার মিলিটাও, ডেভিড আলাবারাও পুরো মৌসুম জুড়ে প্রতিরক্ষা জুটি গড়েছিলেন। বিশেষ করে সার্জিও রামোস এবং রাফায়েল ভারানে একইসাথে বিদায় নেয়ার পরে দলের মাঝে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল তা অনেকটাই মিটিয়ে দিয়েছেন তারা।
বিশেষ করে সাবেক বায়ার্ন তারকা আলাবা রীতিমতো দক্ষ সেনাপতির মতই গুছিয়ে রেখেছেন ব্যাকলাইন। সবমিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্য-ভরা একটি মৌসুমের নায়ক যদি হয় বেনজেমা, ভিনি জুনিয়ররা, তবে নিঃসন্দেহে তাদের নায়ক হিসেবে বেড়ে উঠার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে রিয়ালের গোলকিপার এবং ডিফেন্ডাররা।
ফুটবল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক গোলরক্ষকরা ক্লাবটির কিংবদন্তি বটে। অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড বাহুতে বেঁধে প্রায় এক যুগ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুকে রক্ষা করা ইকার ক্যাসিয়াস কিংবা অলহোয়াইটদের টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানো কেইলর নাভাসের কথা এক্ষেত্রে বলা যায়।
তাদের মত অত উঁচুতে এখনো হয়তো যেতে পারে নি, তবে চাইলে থিবো কোর্তায়াকে নিয়েও গর্ব করতে পারে রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তরা। আর এমন মোহনীয় ফর্মের ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে নি:সন্দেহে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে যাবে একজন থিবো কোর্তোয়া’র গল্প; সান্তিয়াগো বার্নাব্যুয়ের আভিজাত্য রক্ষার্থে নিবেদিত এক আত্মার গল্প।