নতুন প্রত্যয়ে শুরু করতে চেয়েছিল পাকিস্তান। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনেও ইফতিখার আহমেদ বলেছিলেন, জবাব দেওয়ার কথা। কিন্তু, সেই জবাব পাওয়া গেল না। বরং, জিম্বাবুয়েই পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে নতুন এক গাদা প্রশ্নের সম্মুখীন করে ফেলল। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিল এক রানে। রুদ্ধশ্বাসের আরেক নতুন নজীর দেখা গেল চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে বাজে পারফরম্যান্স করতে থাকা আসিফ আলীকে দলের বাইরে রেখে পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রকে এদিন দলে নিয়েছিলো পাকিস্তান। জিম্বাবুয়েও তাদের পেসার টেন্ডাই চাতারার জায়গায় এদিন দলে সুযোগ দেয় আরেক পেসার ব্র্যাড ইভান্সকে।
পার্থ স্টেডিয়ামে টসে জিতে শুরুতেই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা ওয়েসলি মাধবিরে এদিন জিম্বাবুয়ের ওপেনিংয়ে সুযোগ পান। তিনি আর অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন মিলে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন। আগের দিন ১৯ রানে চার উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে এদিন পঞ্চম ওভারেই বিনা উইকেটে ৪০ রান পূর্ণ করেন। তবে ওই ওভারের শেষ বলে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ও এরপরের ওভারে আরেক ওপেনার ওয়েসলি মাধেভিরে সাজঘরে ফিরলে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইন যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়তে থাকে।
দুই উইকেট পতনের পর ব্যাট করতে নামা অলরাউন্ডার শীন উইলিয়ামস একদিকে অবিচল থাকলেও ওপর প্রান্তের ব্যাটাররা ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে। দশম ওভারে মিল্টন শুম্বা আউট হয়ে গেলে দশ ওভার শেষে দলের রান দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬৭। ইনিংসের চতুর্দশ ওভারে শাদাব খানের পরপর দুই বলে আউট হন শীন উইলিয়ামস ও রেগিস চাকাভা। জোড়া ধাক্কার পরের ওভারে আবারও জোড়া আঘাত হানেন দলে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। তিনি টানা দুই বলে সিকান্দার রাজা ও লুকে জঙ্গওয়েকে ফেরান।
৯৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে যখন লজ্জার সামনে দাঁড়িয়ে জিম্বাবুয়ে শেষ দিকে অলরাউন্ডার রায়ান বার্ল ও ব্র্যাড ইভান্সের সৌজন্য সম্মানজনক স্কোর পায় তারা। ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ১৩০ রানে থামে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। পাকিস্তানের মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান আবারো ব্যর্থ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ব্র্যাড ইভান্সের বলে বাবর আজম ও এরপরের ওভারেই ব্লেসিং মুজারাবানির বলে আউট হয়ে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। এসময় দলের হাল ধরেন আগের ম্যাচের ঘুরে দাঁড়ানোর দুই নায়ক শান মাসুদ ও ইফতিখার আহমেদ।
পাওয়ারপ্লের ছয় ওভার শেষে দলের রান দাঁড়ায় দুই উইকেট হারিয়ে ২৮। মাত্র ১৩ রান যোগ করার পর লুকে জঙ্গওয়ে ইফতিখার আহমেদকে উইকেট কিপার রেগিস চাকাভার ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরালে ৩৬ রানে তিন উইকেট হারায় পাকিস্তান। তবে একপ্রান্তে শান মাসুদ ব্যাট হাতে দলকে এগিয়ে নেন। দশ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান দাঁড়ায় তিন উইকেটে ৫৫ রান। শেষ দশ ওভারে জয়ের জন্য আরো প্রয়োজন ৭৭ রান।
চতুর্থ উইকেটে শান মাসুদ ও শাদাব খানের ৩৬ বলে ৫২ রানের জুটি পাকিস্তানকে জয়ের পথেই রেখেছিলো তবে সিকান্দার রাজা চতুর্দশ ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে শাদাব খান ও হায়দার আলীর উইকেট তুলে নিলে আবারো ম্যাচে ফিরে আসে জিম্বাবুয়ে। এক ওভারের ব্যবধানে শান মাসুদ সিকান্দার রাজার বলে স্ট্যাম্পড হয়ে ফিরে গেলে পাকিস্তানের জন্য জয়কে অনেকটা দূরের যাত্রা মনে হচ্ছিল।
তবে উইকেটে টিকে থাকা মোহাম্মদ নাওয়াজ তখনো পাকিস্তানের আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলছিলেন। ব্র্যাড ইভান্সের করা শেষ ওভারে পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১ রান। তবে মোহাম্মদ নাওয়াজ ও মোহাম্মদ ওয়াসিম মিলে ৯ রান করতে তুললে ১ রানে ম্যাচ হেরে যায় পাকিস্তান। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৯ রান করে পাকিস্তান।
শান মাসুদ পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৮ বলে ৪৪ রান করেন। জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা চার ওভারে ২৫ রান দিয়ে তিন উইকেট তুলে নেন। এই জয়ে দুই ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে জিম্বাবুয়ে। অন্যদিকে দুই ম্যাচে দুই হারে শূন্য পয়েন্টে গ্রুপের পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাবর আজমের পাকিস্তান।