নিয়মিত যারা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ অনুসরণ করেন টিম ডেভিড তাঁদের কাছে বেশ পরিচিত নাম। বিশেষ করে সবশেষ বিগ ব্যাশে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর নজর কাঁড়েন তিনি। হোবার্ট হ্যারিকেন্সের হয়ে ২০১৯-২০ বিগ ব্যাশে সেরা পারফরমার্দের একজন ছিলেন ডেভিড।
টিম ডেভিড, বেন ম্যাকডারমট আর নাথান এলিস ছাড়া গত আসরে হোবার্টের তেমন বিগ পারফরমার বলতে কেউই ছিলেন না। জায়গায় দাঁড়িয়ে অনায়াসেই ছক্কা মারতে পারেন ডেভিড। বিগ ব্যাশের গত আসর যারা দেখেছেন টিম ডেভিডের পাওয়ার হিটিং অ্যাবিলিটি নিয়ে তাঁরা ভালোই জানেন। দেখলাম আসন্ন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বাকি অংশের জন্য রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু তাঁকে দলে নিয়েছে। ব্যাঙ্গালুরুর জন্য সেরা একটা সাইনিং নি:সন্দেহে!
বিভিন্ন জায়গায় খেয়াল করলাম এবার বিগ ব্যাশে তাঁর পাওয়ার হিটিংয়ের কারণেই তাঁকে দলে নিছে। কিন্তু না! বিগ ব্যাশের পরই ওই মাসে আইপিএলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সিঙ্গাপুরের অলরাউন্ডার টিম ডেভিডের ভিত্তিমূল্য ছিলো মাত্র ২০ লাখ রুপি! কিন্তু নিলামে তিনি অবিক্রিত থাকেন। অর্থাৎ বিগ ব্যাশের পারফরম্যান্স দিয়ে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষের নজর কাঁড়তে ব্যর্থ হয়েছিলেন ডেভিড।
সবশেষ ইংল্যান্ডের ঘরোয়া লিগ রয়্যাল ওয়ানডে টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে তাণ্ডব দেখান ডেভিড। ওই টুর্নামেন্টে ১০ ম্যাচে ৬৮ গড়ে ৩৪০ রান করে ডেভিড। ২ সেঞ্চুরির সাথে ১ ফিফটি। কিন্তু স্ট্রাইক রেট কত জানেন? ১৫০.৪৪! একটা ওয়ানডে টুর্নামেন্টে প্রায় ১৫১ স্ট্রাইক রেটে ৬৮ গড়ে ব্যাটিং করছেন তিনি!
টানা তিন ম্যাচে ১৪০*, ৫২* ও ১০২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। মূলত এই টুর্নামেন্ট দিয়েই আইপিএলে টিকে গেছেন ডেভিড। এছাড়া পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) শেষ আসরে ৬ ম্যাচে ৪৫ গড়ে ১৬৬ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ১৮০! গেলো বিগব্যাশে ১৪ ম্যাচে ৩১ গড়ে ২৭৯ রান করে ডেভিড। যেখানে স্ট্রাইক রেট ছিলো ১৫৩। বিগব্যাশ দিয়ে লাইমলাইটে এলেও পিএসএলের পর মূলত রয়্যাল টুর্নামেন্ট তাঁর ব্যাটিং তাণ্ডব তাঁকে টেনে এনেছে আইপিএলের মঞ্চে।
তবে ব্যাঙ্গালুরুর বর্তমান যে স্কোয়াড; এখানে সুযোগ পাওয়াটাই যেনো বড় চ্যালেঞ্জ। বিদেশি চারজনের মধ্যে এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল একাদশে থাকছেন। কিউই অলরাউন্ডার কাইল জেমিসনের সাথে হয়তো নব্য লঙ্কান তারকা ওয়ানিন্দু হাসারঙ্গাকেই দেখা যাবে বিদেশি কোটায়। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাইবো অন্তত ২ ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হোক ডেভিডকে।
আরব আমিরাতের তুলনামূলক স্লো উইকেটে সে কতটা কার্যকর হবে সেটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে বিগ ব্যাশে স্লোয়ার বোলারদেরকেও বেদম পিটিয়েছেন ডেভিড। এমনকি বেশ কয়েকটা স্লোয়ার বলে ছক্কাও মেরেছেন। আর ডেভিডের জন্য একটা এক্সট্রা অ্যাডভান্টেজ তাঁর উচ্চতা। এই উচ্চতার কারণে বাউন্সার গুলাও সহজেই বাউন্ডারির বাইরে নিয়ে ফেলতে পারেন তিনি। তবে আমার মতে শারজাহ-দুবাইয়ের উইকেট গুলা ডেভিডকে খেলানোর জন্য আদর্শ উইকেট।
সিঙ্গাপুরের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ডেভিড। ১৪ ম্যাচে ৪৬ গড়ে ৫৫৮ রান করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও স্ট্রাইক রেট ১৫৯ ছুঁইছুঁই। তাঁর বাবা রদ্রিগ ডেভিডও সিঙ্গাপুরে হয়ে খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের এক বছর আগেই বিগ ব্যাশে পার্থ স্কর্চাসের হয়ে খেলার সুযোগ পান তিনি। স্ট্রাইক রেট ভালো থাকলেও প্রথম দুই মৌসুম বিগব্যাশে ভিত গড়তে পারেননি তিনি।
তবে, সবশেষ আসরে হোবার্ট হ্যারিকেন্সের মিডল অর্ডারের সেরা খুঁটি ছিলেন তিনি। ছোট দলের এই বড় তারকার জন্য আইপিএল অবশ্যই অনেক বড় মঞ্চ। প্রথম সিঙ্গাপুরিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে খেলবে আইপিএলে। মাত্র এক টুর্নামেন্টের ব্যবধানে নিলামে অবিক্রিত থাকা ডেভিড এখন ব্যাঙ্গালুরুতে।
ডেভিড সিঙ্গাপুর জাতীয় দলে খেললেও বাবার সূত্রে তিনি অস্ট্রেলিয়ান বংশদ্ভুত। যদিও ডেভিডের জন্ম সিঙ্গাপুরেও। বাবা রড ডেভিড পেশার ইঞ্জিনিয়ার হলেও ক্রিকেট খেলতেন। সিঙ্গাপুর দলে সুযোগ পেলেও নব্বইয়ের দশকের এই ক্রিকেটার কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাননি। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি খেলেন। তবে, সময় পাল্টে গেছে। এই চাইলে রডের ছেলে ডেভিড হতে পারেন টি-টোয়েন্টির ‘দ্য নেক্সট বিগ থিঙ’!