ভারতের নতুন একাদশের রূপকল্পনা

তৃতীয় বারের মতো নিউজিল্যান্ড বনে গেলো ভারতের শিরোপা জয়ের বাঁধা। ওয়ানডে বিশ্বকাপ, তারপর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। এখন আবার চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে গেলো ভারতের নিউজিল্যান্ডের জয়ে।

ভারতের শেষ ম্যাচের আগে প্রতীক্ষা ছিল আফগানিস্তানের জয়ের। কিন্তু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিউজিল্যান্ড আট উইকেটের বিশাল জয় তুলে নেয় আফগানিস্তানের বিপক্ষে এবং তাতেই বিদায় ঘন্টা বেজে যায় ভারত শিবিরে। রবিন্দ্র জাদেজা ঠিক যেমনটা বলেছিলেন ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাবেন বাড়িতে তেমনটাই হয়ত করে ফেলতে চাইছিলেন ভারতের খেলোয়াড়েরা। কিন্তু কি আর করার নিয়ম রক্ষার ম্যাচের জন্যে থেকে যেতে হয়েছে আরো একটি দিন।

সে আলাপ এখন গত। ভাবতে হবে ভবিষ্যৎ নিয়ে। আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিন বাকি সর্বসাকুল্যে বছর খানেক কিংবা তার থেকেও খানিক কম। নিঃসন্দেহে একটি বাজে সময় পার করেছে ভারত ক্রিকেট দল। তাঁরা চাইবে এখন নতুন করে নিজেদের খুঁজে পেতে। সময় হাতে খুবই কম। এই পরিস্থিতি সামলে গড়ে তুলতে হবে এক নতুন দল।

বিশ্বকাপ ফাইনালের তিনদিন পরেই শুরু হবে ভারত-নিউজিল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। সেই সিরিজকে কেন্দ্র করে টি-টোয়েন্টি দলে আসতে পারে বেশকিছু পরিবর্তন। এমন পরিবর্তন আসাটাও স্বভাবিক এবং যুক্তিযুক্ত যখন আপনার পাইপলাইনে উপযুক্ত খেলোয়াড়দের কমতি থাকবে না। তাই ভারতের অনুষ্ঠিতব্য সিরিজের টি-টোয়েন্টি একাদশটা কেমন হতে পারে সে বিষয়ে ছোটখাটো এক আলোচনা সেরে ফেলার পালা।

  • রোহিত শর্মা (অধিনায়ক)

যেহেতু বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি আগেই জানিয়েছেন যে তিনি বিশ্বকাপ শেষে ইস্তফা দেবেন তার অধিনায়কত্বের পদ থেকে, সেহেতু রোহিত শর্মা ব্যতীত দলে যোগ্য অধিনায়ক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাই নতুন সাজানো ভারত টি-টোয়েন্টি একাদশের কাপ্তান হবে রোহিত শর্মা।

তাঁর ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে বিশেষ বলবার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তিনি নিজের দিনে যে কি পরিমাণ বিধ্বংসী তা সকলেরই জানা। তাতে তাঁকে একাদশে ওপেনিং থেকে সরাবার কোন যুক্তি নেই।

  • রুতুরাজ গায়কোয়াড়

১৬ ম্যাচে ৬৩৫ রান। দুই ম্যাচে নটআউট ১০১ অপরাজিত সর্বোচ্চ স্কোর। এগুলো ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের সদ্য সমাপ্ত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের পরিসংখ্যান। তিনিই ছিলেন এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। শুধু কি এই বিবেচনায় তিনি জায়গা করে নেবেন একাদশে?

হ্যাঁ, এই বিবেচনায় তিনি জায়গা পাওয়ার যোগ্য। তাঁর এই যোগ্যতার পাশাপাশি দারুণ সব ক্রিকেটীয় শট এবং পাওয়ারপ্লের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার তাঁকে রোহিত শর্মার যোগ্য ব্যাটিং সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করতে যথেষ্ট।

  • ঈশান কিষাণ (উইকেটরক্ষক)

দলের ম্যানেজমেন্ট ঈশান কিশানকে বিবেচনায় রেখেছেন একজন ওপেনিং বিকল্প হিসেবে। তবে গত বছর আইপিএল এ তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে খেলেছেন নাম্বার তিন ব্যাটার হিসেবে। সাফল্যও পেয়েছেন এই বা-হাতি ব্যাটার। তার বা-হাতি ব্যাটিং একটি বাড়তি সুবিধা যোগ করতে পারবে দলের ব্যাটিং অর্ডারে। তার পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ উইকেট কিপারও বটে। সুতরাং তাঁকে তিনি নম্বর ব্যাটার হিসেবে একাদশে জায়গা দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

  • সুরিয়াকুমার যাদব

দলের মিডেল অর্ডারে সুরিয়াকুমার যাদবের মতো একজন ভার্সেটাইল ব্যাটার থাকা অতীব জরুরি। উইকেটের চারদিকে ব্যাটিং করার সক্ষমতা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সুরিয়াকুমারের রয়েকছে এই গুন। তাছাড়া তিনি নির্ভীক চিত্তে নিজের পেশিশক্তি যথাযথ ব্যবহারে দারুণ পটু। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসেট বনে যেতে পারেন।

  • শ্রেয়াস আইয়ার

শ্রেয়াস আইয়ারের সবচেয়ে বড় গুণ তিনি খেলার পরিস্থিতি ঠিক ঠিক পড়তে জানেন। তিনি জানেন কখন আক্রমণ করে খেলতে হয় এবং কখন রক্ষণে দিতে হয় মন। তাঁর এই গুণ মিডেল অর্ডারে স্বস্তি যোগাবে। পাশাপাশি তিনি টুকটাক লেগ স্পিনটাও করতে জানেন। তাকে একজন পার্টটাইম বোলার হিসেবেও কাজে লাগানো যেতে পারে।

  • ভেঙ্কটেশ আইয়ার

সদ্য সমাপ্ত আইপিএলে নিজের সক্ষমতার নিদর্শন দিয়েছেন ভেঙ্কেটেশ আইয়ার। একজন স্লগার হিসেবে শেষের দিকে দ্রুত রান তুলতে সক্ষম ভেঙ্কেটেশ হতে পারেন দলের ষষ্ঠ বোলিং বিকল্প। ব্যাটিং এর পাশাপাশি বোলিংটাও নিজ আয়ত্ত্বে রেখেছেন তিনি।

  • অক্ষর প্যাটেল

বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েও বাদ পড়ে যাওয়া নেহাৎ এক দুর্ভাগ্য। এমন অভাগাদের তালিকায় আক্সার প্যাটেলের নামও যুক্ত হয়েছে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ১৫ জনে দলে জায়গা পেয়েও শেষমেশ অতিরিক্ত খেলোয়াড় হয়ে গিয়েছিলেন আরব আমিরাতে। তবে তাঁর মতো একজন বোলারকে অন্তত সুযোগ দেওয়া যেতেই পারে। নির্দিষ্ট লাইন লেন্থ মেনে গতিতে বৈচিত্র্যতা এনে ব্যাটারকে দ্বিধাদ্বন্দে ফেলে দেওয়ার মত সক্ষমতা রয়েছে প্যাটেলের। ব্যাটিং ও ঠিকঠিক করতে পারেন অক্ষর।

  • হার্শাল প্যাটেল

স্লোয়ার ও কাটারের সমন্বয় আইপিএলের বাঘা-বাঘা সব ব্যাটারদের বোকা বানিয়ে বনে গেছেন এবারের আসরের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। ৩২টি উইকেট শিকারি এই বোলার ভারতের বোলিং অ্যাটাকের জন্যে উপযুক্ত। দলের প্রয়োজন মাফিক সার্ভিস দিতেও পারদর্শী হার্শাল।

  • দীপক চাহার

পাওয়ারপ্লেতে উইকেট শিকারের দক্ষতার পাশাপাশি একজন পরিপক্ক ডেথ-বোলার হিসেবেও নিজেকে তৈরি করে নিয়েছেন দীপক চাহার। তাঁর আঙুলের কারসাজিতে করা স্লোয়ার বলের সাথে নাকেল বল করবার সক্ষমতা তাঁকে একজন ভয়ংকর বোলারে রুপান্তরিত করেছে। তাই নতুন এক ভারত দলের একাদশে চাহার একজন ভাল চয়েজ।

  • আবেশ খান

এ বছরের আইপিএল এ ২৪ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী আবেশ খান হতে পারেন ভারতের বোলিং আক্রমণের নতুন কাণ্ডারি। উপযুক্ত গতিতে বল করার পাশাপাশি আদায় করে নিতে পারেন ভাল বাউন্সও। তাছাড়া তিনি সক্ষম পিনপয়েন্ট ইয়োর্কার বল করতেও। এর পাশাপাশি নতুন বল উইকেট তুলে নেবার মতো সুযোগ সৃষ্টিতেও তিনি দক্ষ।

  • যুজবেন্দ্র চাহাল

ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে ছিলেন না যুজবেন্দ্র চাহাল। তবে তার মতো সুদক্ষ বোলারের ঘাটতি চোখে পড়েছে ভারতের বিশ্বকাপ যাত্রায়। তাই আশা করাই যায় চাহাল আবার ফিরবেন দলে এবং একাদশে। তাঁর অসাধারণ লেগ স্পিন আর গুগলিতে কাবু করবেন বিশ্বসেরা ব্যাটারদের।

এটি একটি সম্ভাব্য একাদশ। ভারতের নির্বাচক প্যানেল, বিশেষ করে নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড় নিশ্চয়ই চাইবেন এক শিরোপা জয়ী দল গঠন করে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের শিরোপা জয় করতে। সঠিক পরিকল্পনা এবং যোগ্য ব্যক্তিদের সুযোগই কেবল এনে দিতে পারে শিরোপা। তা ভারতের নিশ্চয়ই জানা।

– টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link