স্বয়ং শচীন রমেশ টেন্ডুলকার বলেছিলেন, ‘যদি খেলার প্রতি সৎ ও দায়িত্ববান হও, তাহলে খেলাটা নিজেই তোমার খেয়াল রাখবে। যদি শেষ লড়াই ভাল করো, তাহলেই ভারতের হয়ে তোমার খেলার স্বপ্নটা দুয়ারে চলে আসবে।’
সুরিয়াকুমার যাদব শচীনের কথাটা শুনেছিলেন কি না, জানা নেই। তবে, এটা ঠিক যে তিনি খেলাটার প্রতি সৎ ও দায়িত্ববান ছিলেন। তবে, জাতীয় দলের স্বপ্ন তিনি আদৌ তিনি দেখতেন কি না বলা মুশকিল!
ভারতে কিংবা উপমহাদেশে ৩০ বছর বয়সে কারো আসলে এই স্বপ্ন দেখা বড্ড কঠিন। তবে, তিনি একধাপ করে এগোতেন। প্রতিটা মৌসুমেই একটু একটু করে নিজের ভেতরের তাগিদটা বাড়াতেন। আরেকটু ভাল করতেন, জাতীয় দলের আরেকটু কাছে পৌঁছাতেন।
গেল আইপিএলের পারফরম্যান্সের পর ধারণা করা হচ্ছিল – অস্ট্রেলিয়া সফরের দলেই তাঁর ডাক আসবে। সেটা আসেনি। নির্বাচক আবে কুরুভিল্লা বলে রেখেছিলেন, ‘স্কাই কা টাইম আয়েগা!’
কথাটায় বিন্দুমাত্র হাসি ফোঁটায়নি সুরিয়ার ঠোঁটে। কারণ, সেই তরুণ বয়স থেকে তিনি এই কথাটা শুনতে শুনতে ক্লান্ত। আইপিএলে কি ছিল তাঁর পারফরম্যান্স? ১৬ ম্যাচে ৪৮০ রান, ৪০ গড়। চারটা হাফ সেঞ্চুরি। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স যে আইপিএলের শিরোপা জিতলো – তাতে ব্যাট হাতে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল এই সুরিয়াকুমারের।
তাতে কি! সুরিয়ারর ক্যারিয়ারের সুর্য তো এবারো উঠলো না। সারা জীবন খেলাটার প্রতি সৎ থাকা সুরিয়া এবার একটু ভেঙেই পড়লেন। রীতিমত নাওয়া খাওয়া ছেড়েই দিলেন। সারাজীবন হাল না ছাড়া সুরিয়া কি এবার হাল ছেড়ে দিলেন তাহলে?
নাহ, ভারতীয় দলে ডাক না পাওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়ার পরদিনই তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলেন ম্যাচ জেতানো ৭৯ রানের এক ইনিংস। ইনিংসে ছিল ১০ টি চার ও তিনটি ছক্কা – ব্যাটের ঝড়ে তিনি বলতে চেয়েছেন, ‘ম্যায় হু না!’ শুধু এবার নয়, এভাবেই ক্যারিয়ারের গোড়া থেকে নানা প্রতিকূলতাকে জয় করেছেন সুরিয়া।
২০১১ সালের কথা। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টি খেলছিলেন। আঙুলে ইনজুরির ধকল তখনও কাটেনি। নেটে ব্যাটিংয়ে একটু সমস্যা হচ্ছিল। তাই, তখনই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় সুরিয়াকে।
ফিরে শুনলেন, একটা অনূর্ধ্ব ২২ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হচ্ছে। তখন একদমই তরুণ বয়স সুরিয়ার। লোভ সামলাতে না পেরে খেলে ফেললেন। তিন দিনের ম্যাচে খেললেন ১৮২ রানের ইনিংস। ব্যাথাটা যেন ভুলেই গেলেন।
রহস্যটা কি? ২০ ওভারের ক্রিকেটে খেলার যার ফিটনেস নেই তিনি তিন দিনের ম্যাচে নেমে ১৮২ করে বসলেন? কিভাবে?
অনুমতি ছাড়া সেই আসরে খেলায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স কর্তৃপক্ষ একটু ক্ষেপে গিয়েছিল বটে, তবে তাকে আবার ফিরিয়ে আনা হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। ফিটনেস টেস্ট নেওয়া হয়। পাশ করেন সুরিয়া, টুর্নামেন্ট খেলেন। মুম্বাই চ্যাম্পিয়ন হয়।
সাদা বলের ক্রিকেটে বিশেষ করে আইপিএলে তিনি এতটাই প্রোলিফিক পারফর্মার যে, তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার সামর্থ্য বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) ছিল না। অপেক্ষা ছিল কেবল সঠিক সময়ের। সেই সময়টা আসতেই গেল একটু দেরি হয়ে গেল।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে আছেন তিনি। আবে কুরুভিল্লা ভুল বলেননি। সত্যি সত্যিই সুরিয়ার সময় চলে এসেছে।