লোকে ডাকে প্রফেসর, চলাফেরাতেও আর আট দশজন ফুটবলারের মত চঞ্চল নন। খানিকটা আড়ালে থাকাটাই বেশি পছন্দ – বলছি টনি ক্রুসের কথা, যিনি বরাবরই নীরবে নিভৃতে নিজের কাজ করে যান। তবে তিনি নীরব থাকলেও তাঁর নামটা শোনা যায় জোরেশোরেই, ফুটবলের যেকোনো আলোচনায় সবচেয়ে উঁচু গলায় তর্ক করা ছেলেটা কতশত বার তাঁর নাম বলে সেটার ইয়াত্তা নেই।
বলবেই না কেন, প্রজন্মের সেরা মিডফিল্ডার বললেই তো এই জার্মানের চেহারা মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। না, লুকা মদ্রিচ কিংবা জাভি-ইনিয়েস্তাদের টেনে এনে তুলনা করার দরকার নেই। বরং তিনি নিজের জায়গাতে সর্বোচ্চ সেরা, সবচেয়ে নিখুঁত একজন। যখন মাঠে নামেন তখন পুরো ম্যাচের গতি তাঁর নিয়ন্ত্রণেই থাকে, নিয়ন্ত্রণ করেন।
যদিও ফুটবলের নিখাঁদ প্রদর্শনী এখন সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে, প্রাণপ্রিয় খেলাটাকে বিদায় বলে দিতে যাচ্ছেন এই মিডফিল্ডার। চলতি মৌসুম শেষেই অবসর নিবেন তিনি। এর আগে অবশ্য খেলবেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল এবং ঘরের মাঠে ইউরো কাপ। এরপরই সব শেষ, মৃদু ছন্দে হাত নাড়তে নাড়তে স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যাবে তাঁকে; আর কখনো চিরচেনা রূপে ফিরবেন না।
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ক্লাব ফুটবলে অভিষেক হয়েছিল তরুণ ক্রুসের। সেদিন মিরোস্লাভ ক্লোসাকে দুই দুইবার অ্যাসিস্ট করে সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। তারপর কখনোই পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে, দিন দিন হয়ে উঠেছিলেন দুর্দমনীয়।
পাসিং অ্যাকুরেসি, অ্যাসিস্ট কিংবা অন্য কোন পরিসংখ্যান সবকিছুতেই এই সুদর্শন ফুটবলার থাকবেন একেবারে ওপরের দিকেই। কিন্তু এসব বাদ দিলে? তখন থাকবে কেবল অপূর্ব শৈলী আর অপার বিস্ময়। কিভাবে এক নিমিষে প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষাভাগ ছিন্নভিন্ন করে দেয়া যায়, কিভাবে মুহূর্তের মাঝে আক্রমনের দিক পরিবর্তন করা যায় এসব শেখা যাবে সংখ্যাতত্ত্বের বাইরে গেলে।
আপনি হয়তো গড়পড়তা দর্শক, ফুটবলের অতও অতও বিশ্লেষণ আপনার জানা নেই। তাহলে কি আপনি বুঝবেন না একজন ‘টনি’র গুরুত্ব? নিশ্চিতভাবেই বুঝবেন, যে ম্যাচে তিনি খেলছেন সেই ম্যাচে না বুঝলেও যে ম্যাচে খেলছেন না সেটা দেখলেই বুঝে ফেলবেন মাঝমাঠে বিশেষ একজন নেই।
জার্মান স্নাইপার হয়তো ফুটবলকে ছাড়তে পারবেন, কিন্তু তিনি আজীবন থেকে যাবেন ভক্তদের হৃদয়ে। তাঁকে মনে রাখতে হবে ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের দুঃস্বপ্ন হিসেবে, মনে রাখতে হবে বায়ার্নের ট্রেবল আর রিয়াল মাদ্রিদের থ্রি-পিট জয়ের নায়ক হিসেবে; কিংবা নিজের বুট নিজেই পরিষ্কার করা এক সাদাসিধে মানুষ হিসেবে।