বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ছিল মাত্র একটি অপূর্ণতা। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা টনি ক্রুসের জেতা হয়ে ওঠেনি একবারও। ক্যারিয়ারের সমাপ্তি রেখাতে দাঁড়িয়ে তিনি চেয়েছিলেন অধরা সেই শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে। কিন্তু মানুষ যা চায়, তা সব কি আর পায়!
টনি ক্রুসের ভাগ্যটা ততটাও সুপ্রসন্ন হল না। ক্লাব ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটায় তিনি জিতেছিলেন শিরোপা। জার্মানির হয়ে সেটা অবশ্য করা হয়ে উঠল না তার। নিজের শেষ ম্যাচটায় হারতে হয়েছে তাকে। ঘিরে ধরেছিল তাকে পরাজয়ের বিষাদ। তিনি অবশ্য প্রস্তুতই ছিলেন। সম্ভবত আন্দাজও করতে পেরেছিলেন স্পেনের বিপক্ষে ইউরো কোয়ার্টার ফাইনাল হতে চলেছে তার ফুটবল ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
তাইতো শুরু থেকে বড্ড বেশি অগোছালো ছিলেন তিনি। চিরায়ত টনি ক্রুসের দেখা মেলেনি। আগ্রাসী এক ভিন্ন ক্রুসকে দেখেছে সকলে। তার আগ্রাসনে মাত্র ৮ মিনিটের মাথায় তরুণ পেদ্রিকে ছাড়তে হয়েছে মাঠ। আবেগের ধূসর মেঘ জমাট হয়েছিল ক্রুসের মাথার উপর। এরপর তো ম্যাচে কতকিছু ঘটে গেল।
১১৮ মিনিটের মাথায় স্পেন ক্রুসের বিদায়কে নিশ্চিত করল। আর কোন কালক্ষেপণ নয়। শিরোপা থেকে দুই কদম দূরেই থেমে গেলেন টনি ক্রুস। কিন্তু পেছনে যে তিনি ফেলে এসেছেন দীর্ঘ একটা পথের স্মৃতি। রঙিন, বর্ণিল সেসব অবসর দিনের সঙ্গী।
বায়ার্ন মিউনিখে থাকাকালীন শুনেছিলেন তিনি নাকি বিশ্বমানের নয়। সেটাই বরং তাঁতিয়ে দিয়েছিল তাকে। ভয়ংকর ভাবে তিনি ছুটে বেড়ালেন ফুটবলের ময়দানে। দশকের সেরা মধ্যমাঠের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন অধিকাংশ সময়ে। ২০১৪ বিশ্বকাপে জেতার পর, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সম্ভাব্য সকল শিরোপাই জিতেছেন।
৩৪ খানা শিরোপা শোভা পাচ্ছে তার নামের পাশে। এতগুলো শিরোপাকে সঙ্গী করে তিনি বিদায় বলে দিলেন ফুটবলের জমকালো দুনিয়াকে। সিদ্ধান্ত বহু আগেই নিয়েছিলেন। ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল সময়েই সমাপ্তির রেখা টেনে দিয়ে জীবনকে দু’ভাগে ভাগ করে দেবেন। মাঝে উঠবে কাটাতারের বেড়া। ওপাশটা চলে গেলে ফেরা যাবে না আর পেছন দিকে।
ওই সাদা অ্যাডিডাসের বুট জোরা অবশেষে বিশ্রামের সুযোগ পেল। অ্যাডিডাসও সম্ভবত খানিকটা নিস্তার পেল। ক্রুস যে ছিলেন নাছোড়বান্দা। সেই কবেকার অ্যাডিপিউর নতুন করে স্রেফ টনির জন্যেই বানাতে হতো। সেটাও তো কম ঝামেলার নয়।
যাদের সকাল-সন্ধ্যে কাটে ফুটবলে মত্ত্ব হয়ে। তাদের হৃদয়ের নিশ্চয়ই অঝর ধারায় হচ্ছে বর্ষণ। একটু হলেও তো কষ্ট হচ্ছে সকলের। টনির সেই ডিফেন্স চেড়া পাসগুলো আর দেখা যাবে না। মাঝ মাঠ থেকে উইংয়ে বাড়িয়ে দেওয়া পিনপয়েন্ট লং বল গুলোও দেখা যাবে না। বার্নাব্যু থেকে আলিয়াঞ্জ এরেনার সবুজ গালিচা কি ক্রুসকে একটুও মিস করবে না? করবে হয়ত।