টটেনহ্যাম সভাপতি ডেনিয়েল লেভি যখন গত এপ্রিল মাসে জোসে মরিনহোকে বরখাস্ত করেছিলেন, তখন মনে হয়েছিল সিদ্ধান্তটা ঠিকই আছে। যদিও তাদের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে কোচকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত যেকোনো সময়েই ব্যাকফায়ার করেছে দুই দিন পরেই। রয়্যান মেসনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে। অন্তর্বর্তীকাল শেষ হয়ে গিয়েছে, শুরু হয়েছে টটেনহ্যামের কোচ খোজা। কিন্তু কতটাই বা সফল সেখানে লেভি?
পর্তুগিজ কোচকে যখন ২০১৯ সালে টটেনহ্যামের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তখনই অনেকেই তার শেষ দেখেছিলেন। পচেত্তিনো ছিলেন কোচ হিসেবে নরম-সরম, খেলোয়াড়দের বুঝতেন। তার বদলে আনা হয়েছিল মোরিনহোকে, যিনি তার পুরো জীবন চলেছেন ‘উইন-অ্যাট-অল-কস্ট’ নিয়মে। জয়ের জন্য সব করতে প্রস্তুত তিনি।
কিন্তু ১৭ মাস পরেই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল কারাবাও কাপের ফাইনালের ৪ দিন আগে। তখন থেকেই নতুন কোচের সন্ধানে ব্যস্ত তারা। কম লোকজনের দিকে হাত বাড়ায়নি তারা। তবুও নিজেদের ডাগ-আউটে কাউকে আসতে ম্যানেজ করতে পারেনি তারা।
জুলিয়ান নাগেলসম্যান এবং অ্যান্তোনিও কন্তের সাথে কথা শুরু হওয়ার পরও ভেস্তে গিয়েছে। গত ৪৮ ঘন্টায় তাদের সাথে কথা ভেস্তে গিয়েছে আরো ২ জনের। টটেনহ্যামের দায়িত্ব নিতে রাজি না হওয়া কোচের সংখ্যা হলো ৮।
- জুলিয়ান নাগেলসমান
স্পার্সের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বেশ আগ্রহী ছিলেন এই জার্মান। বুন্দেসলিগায় নিজেকে প্রমাণ করার পর চাচ্ছিলেন নিজেকে প্রিমিয়ার লিগে প্রমাণ করতে। পূর্বসূরি ক্লপ-টুখেলকেই আইডল ভাবছিলেন তিনি।
কিন্তু হুট করে হ্যান্সি ফ্লিকের বায়ার্ন ছাড়ার ঘোষণা আসার পরেই তাকে দলে নেওয়ার জন্য উঠেপরে লাগে বায়ার্ন মিউনিখ। সে সুযোগ আর না করেননি তিনি। তাই টটেনহ্যামের চাকরি রিজেক্ট করে জার্মানিতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নাগেলসম্যান।
- ব্রেন্ডন রজার্স
রজার্স যদিও লেস্টারকে শিরোপা জিতিয়েছেন, কিং পাওয়ারে আছেন রাজার বেশে। তবুও তাকে পাওয়ার আশা ছাড়েনি স্পার্স। ডেনিয়েল লেভি ভেবেছিলেন টাকা-পয়সার লোভ দেখিয়ে হয়তো তাকে টটেনহ্যামে ফেরত আনা যাবে। কিন্তু কিং পাওয়ার তাদের কোচকে আরো বড় প্রজেক্টের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যে কারণে লেভিকে মুখের উপর না করে দিয়েছেন তিনি।
- অ্যান্তোনিও কন্তে
জুভেন্টাসের ৯ বছরের সিরি-আ ডমিনেন্স ভেঙ্গেছেন তিনি। তাও বার ইন্টার মিলানের মতন দলকে নিয়ে। একেবারে নিজেকে গড়েছেন শুণ্য থেকে, ইন্টারকে নিয়ে বেশ ভালোই প্ল্যাওমাফিক এগুচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ইন্টারকে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে তাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়, যে কারণে বোর্ডের সাথে দ্বিমতে দল ছেড়েছেন তিনি। খুজছেন নতুন দল।
যে কারণে লেভি চেয়েছিলেন দ্রুত তাকে দলে ভেড়াতে। কিন্তু টটেনহ্যামের সাথে আলোচনা করে উল্টো পথে হেঁটেছেন তিনি। তার ইচ্ছে এখন দুটবল থেকে একটা ব্রেক নেওয়ার। টটেনহ্যামের সাথে প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলে সম্ভবত ফুটবল কোচিং করানোর ইচ্ছেই হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়, লেভির মতন মানুষকে নিজের প্রজেক্ট বোঝানো সহজ কাজ নয়। কন্তের সাথে প্রজেক্ট নিয়ে মিল না হওয়াতেই আর কথা আগাননি তিনি।
- মাউরিসিও পচেত্তিনো
পাঁচ বছর আগে যে প্রজেন্ট শুরু করেছিলেন, তা মাঝপথেই ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হয়েছিল তাকে। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলার পরের মৌসুমে তাকে করা হয়েছিল বরখাস্ত। তিনি সেই টটেনহ্যাম ছেড়ে যোগ দিয়েছেন পিএসজিতে। লেভি জোসেকে ছেড়ে আবারও তার হাতে সোপর্দ করতে চেয়েছিলেন প্রজেক্ট। কিন্তু ততদিনে নেইমার-এমবাপ্পেতে মজে গিয়েছেন তিনি। তাই আর টটেনহ্যামে ফিরতে চাননি তিনি।
এর আগেও তার সাথে এমনটা করা হয়েছিল। প্রজেক্টের কথা বলে বেশ স্বপ্ন দেখিয়ে আবার তা কেড়ে নিয়েছিল বোর্ড। যে ঘটনার সম্মুখীন আর হতে চাননা এই আর্জেন্টাইন। যে কারণে এবার লেভি আসলেও তাকে খালি হাতে ফিরিয়েছেন তিনি।
- হুলেন লোপেতেগি
প্রাক্তন স্পেন আর রিয়াল মাদ্রিদ কোচকে লেভি চেয়েছিলেন সেভিয়া থেকে ছিনিয়ে আনতে। চেয়েছিলেন ইংলিশ লিগে তাকে বড় প্রজেক্ট দিতে। কিন্তু রজার্স আর পচেত্তিনোর মতো তিনিও টটেনহ্যামকে না করে দিয়েছেন, নিজের বর্তমান দলকে সময় দেওয়ার জন্য।
এছাড়াও লোপেতেগিকে নিয়ে আসতে হলে বেশ ভালো পরিমাণ টাকা দিতে হবে সেভিয়াকে। যা দিতে রাজি নন লেভি। যে কারণে এই স্পেনিয়ার্ডের সাথেও কথা আটকে গিয়েছে মাঝপথে। স্পার্সের খুঁজে পাওয়া ‘বিকল্প’ থাকছেন র্যামন সানচেজ পিজজুয়ানে থাকবেন।
- জেসে মার্শ
কোচ হিসেবে অতোটা পরিচিত নন মার্শ। আতবি সালসবার্গের কোচ হিসেবে মোটামুটি পরিচিত ছি লতার। তাকেও একসময় তালিকায় রেখেছিল তারা। মূলত জোসে চলে যাওয়ার পরেই, রয়্যানের হাতে দায়িত্ব দেওয়ার আগে আগে। কিন্তু মার্শের হাতে ছিল আরবি সালসবার্গ থেকে আরবি লাইপজিগে যাওয়ার সুযোগ। তা আর হাতছাড়া করেননি তিনি। তাই রিজেক্ট করে দেন টটেনহ্যামকে।
- পাওলো ফনসেকা
টটেনহ্যাম থেকে বরখাস্ত হওয়া জোসে মোরিনহোকে নিয়োগ দিয়েছে রোমা। ফলে রোমায় থাকা পাওলো ফনসেকা হারিয়েছেন নিজের জায়গা। আর টটেনহ্যামের শূণ্যস্থান পূরণ করতে তাকেই ডাকার কথা ভেবেছিল স্পার্স। সে অনুযায়ী কথাবার্তাও অনেকদূর এগিয়েছিল।
কিন্তু, কিছুদূর যেতে না যেতেই তাও ভেঙে পরে। মূলত ট্যাক্স সংক্তান্ত বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় তাদের ডিল ভেঙ্গে পরে দ্রুতই। ট্যাক্সের কারণে ইংল্যান্ডে আয় করা অর্থের অর্ধেকটাই দিয়ে দিতে হবে ইংলিশ সরকারকে, যে কারণে কথা এগুতে গিয়েও থেমে গিয়েছে।
- জেনেরো গাত্তুসো
গাত্তুসো মৌসুম শেষেই ছেড়েছিলেন নাপোলি। দলকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে না নিতে পারার দায় মাথায় নিয়ে চাকরি থেকে চলে গিয়েছেন। চাকরি খুঁজে পেতেও বেশি সময় লাগেনি। সিরি-আ তে যেভাবে কোচের রদবদল চলছে, সেখানে খুব সহজেই জায়গা করে নিয়েছিলেন গাত্তুসো।
ফিওরেন্তিনা বেশ জাকজমক করেই দলে টেনেছিল তাকে। কিন্তু ২২ দিন যেতে না যেতেই তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তারা। গাত্তুসোর দাবি তাকে যে পরিমান সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে বলা হয়েছিল, তা দেওয়া হচ্ছে না। যে কারণে এই চাকরিতে থাকাও সম্ভব হচ্ছে না।
টটেনহ্যাম চেয়েছিল সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে, কিন্তু তাদেরই বা নির্দিষ্ট ট্রান্সফার পলিসি কবে ছিল? যে কারণে কথা শুরু হওয়ার পরপরই ভেঙে গিয়েছে।
আগের দুই কোচকে বরখাস্ত করে এখন নিজেরাই আট-আটজন কোচের কাছ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। তাতেও আশা ছাড়েন টটেনহ্যাম বোর্ড। নতুন মৌসুমে দলের দায়িত্বে রয়্যান মেসন থাকছেন না নিশ্চিত। নতুন কোচের তালিকায় এখনও আসা বাকি অনেকের। শেষ পর্যন্ত এই হটসিটে কে বসেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা!