তখনও বয়স তার ১৭ পার হয়নি। সেই সময় চট্টগ্রাম দলের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট অভিষেক হয়ে গিয়েছিলো। ফলে কাগজে কলমে তার প্রথম শ্রেনীর ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় পাঁচ বছর। কিন্তু বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকায় সেভাবে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে নিয়মিত হতে পারেননি।
আসলে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে এই বছরে এসেই সিরিয়াস হতে পারলেন। আর প্রথম বছরেই একটার পর একটা ফিফটি করে নিজেকে চেনাচ্ছিলেন। কিন্তু আফসোস থেকে যাচ্ছিলো-ইনিংসটা বড় হচ্ছে না। অবশেষে সেই আফসোস দূর করলেন। স্রেফ সেঞ্চুরি নয়, একেবারে ডাবল সেঞ্চুরি করে সময়টা বাঁধিয়ে রাখলেন এক সময়ের যুব তারকা তৌহিদ হৃদয়।
আর প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে এই প্রথম বিশাল সেঞ্চুরির পর হৃদয় বললেন, এমন একটা বড় ইনিংসের অপেক্ষায়ই ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে হৃদয় খুব পরিচিত একটা নাম। টানা প্রায় চার বছর খেলেছেন যুব দলে; দুটি বিশ্বকাপ দলে ছিলেন। বাংলাদেশক এনে দিয়েছেন একটা বিশ্বকাপ শিরোপাও। যুব ক্রিকেটের এক দিনের ফরম্যাটে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। একসময় বাংলাদেশ দলের অধিনায়কও ছিলেন।
ফলে হৃদয়কে নিয়ে স্বপ্নটা অনেক দিনেরই।
সেই স্বপ্নপূরণের বছর বলা যায় এটাকে। এই বছরই বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার পর এই বছরই এসে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে নিজেকে চেনাতে শুরু করেছেন। ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল অবধি ক্যারিয়ারে মাত্র ৪টি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচ খেলেছেন। তার মধ্যে কোনো ফিফটিও ছিলো না। আর এই বছরে চলতি ম্যাচের আগেই ৪ ম্যাচে করেছেন ৪ ফিফটি। আর এই ফিফটিগুলোই হৃদয়ের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছিলো।
তিনি এই ছোট ছোট ইনিংস নিতে পারছিলেন না। বলছিলেন, ‘আমার লক্ষ্য ছিল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বড় ইনিংস খেলা। কিন্তু জোড়া ফিফটি করেও সেঞ্চুরি পাচ্ছিলাম না। ফলে এটা নিয়ে বেশি ভাবছিলাম। বেশি ফোকাস করতে গিয়ে আরও সমস্যা হচ্ছিলো। তাই এই ম্যাচের আগে ঠিক করলাম, যা হওয়ার হবে; নিজের মত করে খেলবো।’
সেটার যে ফল হাতেনাতে পেয়েছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ৬০৩ মিনিট ব্যাট করে, ৩৮৭ বল সামলে করেছেন ২১৭ রান। এই ইনিংসে ১৬টি চার ও চারটি ছক্কা মেরেছেন।
তবে প্রথম সেঞ্চুরিটা এভাবে ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে যাবে, সেটা আসলেই ভাবেননি হৃদয়। মজার ব্যাপার হলো, প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট তো দূরে থাক, কোনো স্তরেই হৃদয় এর আগে কখনো ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পাননি। ফলে দিনশেষে খুব খুশি হয়েই বলছিলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। খুব ভালো লাগছে। আমি আসলে ডাবল সেঞ্চুরির কথা আগে ভাবিনি। ভাবছিলাম, সেঞ্চুরিটা পেতে হবে। তবে সেঞ্চুরি পাওয়ার পর ভেবেছি, অন্তত দেড় শ রানের একটা ইনিংস খেলা দরকার। সেটা হয়ে গেলে ভাবছিলাম, ডাবলের যত কাছে যাওয়া যায়।’
হৃদয়ের এখন স্বপ্ন দেখার পালা।
ইতিমধ্যে তাদের বিশ্বকাপজয়ী দলের চার সদস্য জাতীয় দলে ডাক পেয়ে গেছেন। নিউজিল্যান্ড সফরেও গেছেন দু জন। এর মধ্যে তার বন্ধু মাহমুদুল হাসান জয়ের অভিষেকও হয়ে গেছে টেস্টে। ফলে হৃদয়ের এখন স্বপ্ন দেখা আর অপেক্ষা করার পালা। তবে হৃদয় বলছিলেন, তার ওরকম অস্থির হওয়ার কিছু নেই, ‘আসলে জাতীয় দল তো সবারই আলটিমেট ড্রিম। আমারও স্বপ্ন তাই। কিন্তু ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। আমি রান করতে থাকলে একসময় নিশ্চয়ই ডাক আসবে। আমি আপাতত নিজের খেলাটা নিয়েই ভাবছি।’