মানুষ মাত্রই ভুল হয়।
ভুল করে মানুষ কতকিছুই না করে। ভুলোমনা মানুষদের নিয়ে গল্পের অভাব নেই। কিন্তু ভুল করে এক ক্লাবের জন্য থাকা ট্রান্সফার ফি অন্য ক্লাবে পাঠিয়ে দেওয়া? এমনটা হয়তো আগে শোনেননি। তবে সেটাই করে বসেছে ইতালিয়ান ক্লাব লাৎজিও। তরুন তারকা পেদ্রো নেতোকে কেনার টাকা সাবেক ক্লাব ব্রাগার বদলে লিসবনকে দিয়ে দিয়েছে তারা।
বর্তমান যুগ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। প্রতিদিন কত মানুষের সাথে কতরকম কথা হয়, কত বিষয়ে কথা হয়। ভুল করে ভুল মানুষকে ভুল জিনিস দিয়ে দেওয়ার মতন ঘটনা ঘটেনি এমন খুব কম মানুষই আছে। একই নামের একজনকে একটা ছবি পাঠাতে গিয়ে অন্য একজনকে পাঠিয়ে দেওয়ার মতন ঘটনা ঘটায়নি এমন খুব কম মানুষই আছে। তবে সেটা যদি হয় টাকা-পয়সার মামলা, তবে তাতে বড়সর ঝামেলাতেই পরতে হয় বটে। তেমনই ঝামেলায় জড়িয়েছে পর্তুগিজ তারকা পেদ্রো নেতোর সাবেক ক্লাব লাৎজিও। এক ক্লাবকে ট্রান্সফার ফি দিতে গিয়ে অন্য ক্লাবকে দিয়ে ফেলেছে ইতালিয়ান ক্লাবটি।
ঘটনার শুরু ২০১৭ সালে। ১৩ বছর বয়স থেকেই পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং ক্লাব ব্রাগার খেলোয়াড় নেতো। প্রায় চার বছর যুব দলে কাটানোর পর ২০১৭ সালে মূল দলে প্রমোট করা হয় পর্তুগিজ ইয়াংস্টারকে। কিন্তু মূল দলে আসার কয়েক মাসের মাথায় ইতালিয়ান ক্লাব লাৎজিওতে ধারে পাঠায় ব্রাগা। ধারের চুক্তিতে সময় ছিল ২ বছর। আর এরপর যদি খেলোয়াড়কে পছন্দ হয় দুই বছর পর সেই লাৎজিও তাকে পাকাপাকিভাবে কিনে নিতে পারবে।
নেতোর সঙ্গে আরেক তরুণ তারকা ব্রুনো জর্ডানকেও ধারে দেয় ব্রাগা। কথা ছিল দুই বছর পর তাঁদেরকে দলে রাখতে হলে মোট ২৬ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করতে হবে লাৎজিওকে। নেতোর জন্য ১২ আর জর্ডানের জন্য ১৪। ঘটনার সূচনা ২ বছর পর থেকে।
২০১৯ সালে পাকাপাকিভাবে নেতোকে কেনার সিদ্ধান্ত নেয় লাৎজিও। যদিও ২০১৮ সাল থেকেই ভাবনা চিন্তা চলছিল। তাই এক মৌসুম পর থেকেই ইন্সটলমেন্টে তা পরিশোধ করার কথা ভবতে শুরু করে লাৎজিও। সে অনুযায়ী তারা তা পরিশোধও করে দেয়। কিন্তু তার এক মাস পরই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারাসের কাছ থেকে পেদ্রোর জন্য ভালো প্রস্তাব পায় লাৎজিও। তাই সেখানে ১৮ মিলিয়নে বিক্রি করে দেয় ইতালিয়ান দলটি।
সমস্যা দেখা যায় এবছর ব্রাগা যখন দেখে তাদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাই জমা পড়েনি পেদ্রো নেতোর বাবদে। পর্তুগিজ স্ট্রাইকারকে কেনার জন্য দুই দফায় যে টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল তার কোনোটাই জমা পরেনি স্পোর্টিং ব্রাগার অ্যাকাউন্টে। ব্রাগার লোকজন অবাক। তার চেয়েও অবাক লাৎজিওর লোকজন। তাহলে টাকা গেলো কোথায়?
টাকা জমা পরেছে আরেক পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনের অ্যাকাউন্টে! বোঝেন কাণ্ড!
ঘটনা অদ্ভুত হলেও সত্যি, দুটো ক্লাবের নামের পার্থক্য শুধু শহরের নামে। ‘স্পোর্টিং ক্লাব ব্রাগা’ আর ‘স্পোর্টিং ক্লাব লিসবন’ এর পার্থক্য তাড়াহুরোয় হয়তো ভুল করা সম্ভব। কিন্তু এতোবড় ভুল এতদিন কেন কারো চোখে পরল না তাও ভাবনার বিষয়। তবে ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। ব্রাগার অ্যাকাউন্টে টাকা না পাওয়াও ব্রাগাও নিজেরা চুক্তিপত্র ঘাটতে শুরু করে। সেখানে দেখা যায় আরো বড় সমস্যা। ব্রাগার সঙ্গে চুক্তিপত্রে দেখা যায়, যদি লাৎজিও ইতালিয়ান লিগের টপ হাফ অর্থাৎ ১০-এর উপর থেকে নিজেদের লিগ শেষ করতে পারে তবে তাঁদেরকে কিনতে হতো নেতোকে। সেজন্য প্রথম মৌসুম শেষে ব্রাগাকে মোট ৭ মিলিয়ন ইউরো ও পরে আরো ৫ মিলিয়ন মিলে মোট ১২ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু তা পরিশোধ করেনি লাৎজিও। লাৎজিওর অ্যাকাউন্ট ঘেটে উদ্ধার করা গেল সে রহস্য।
২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত লাৎজিও অ্যাকাউন্টের সাথে ব্রাগার অ্যাকাউন্টের কোনো লেনাদেনাই হয়নি। বরং লেনাদেনা হয়েছে স্পোর্টিং লিসবনের সাথে। লিসবনকে ২০১৮ সালের ১ জুলাই প্রথম ৮.৫ মিলিয়ন ইউরোর চেক দেয় ইতালিয়ান ক্লাবটি। আর পরের বছর মার্চের ১৭ তারিখ আরো ২.৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়তে পাকাপাকিভাবে তাকে কিনে নেয় লাৎজিও। কিন্তু সব টাকাই গিয়েছে লিসবনের পকেটে; ব্রাগার নয়।
যদিও লাৎজিও জেনারেল সেক্রেটারি আরমান্দো ক্যালভারি এটিকে নিতান্তই ভুল বলে দাবি করেছেন, ‘আমরা খেলয়াড় কিনেছি স্পোর্টিং ক্লাব ব্রাগার কাছ থেকে, স্পোর্টিং ক্লাব লিসবন থেকে নয়। আমাদের ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের সামান্য ভুলের কারণে এই সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করছি এটির খুব দ্রুতই সমাধান আমরা করে ফেলবো।’
স্পোর্টিং লিসবনও এই বিষয়টিকে ভুল হিসেবেই নিয়েছে, ‘এটা সম্পূর্ণ তাদেরই একটা ভুল ছিল। সে (নেতো) কখনও আমাদের খেলোয়াড় ছিল না। তাই তার জন্য দেওয়া অর্থ আমরা ব্যবহার করতে পারি না এবং করিওনি। এই বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা লাৎজিও ক্লাব ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুতই এটির সমাধান হয়ে যাবে।’
যদিও পেদ্রো নেতো দুই ক্লাব থেকে দূরে এসে ক্যারিয়ারের সেরা সময়টাই কাটাচ্ছেন, এই মৌসুমে ১৮ ম্যাচ খেলে ইতিমধ্যে ৪ গোলের দেখা পেয়েছেন। পর্তুগিজ কোচ নুনো ইস্পারিতোর অধীনে ২১ বছর বয়সী খেলোয়াড়ের সেরা সময়টাই কাটছে বলা যায়।