রেডিও অফিস থেকে মহাবিপদ সংকেত দেয়া হয়েছে, আপনি সেই সংকেত জেনে প্রস্তুতিও নিয়েছেন। তবু বিপর্যয় ঠেকাতে পারেননি, ঠিক সেই সময় প্রকৃতির দিকে অসহায় চোখে চেয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ম্যাচে ঠিক একই অভিজ্ঞতা হয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালসের। ট্রাভিস হেড নামক মহাবিপদের কথা জানতো তাঁরা, প্রতিরোধের কথাও নিশ্চয়ই ভেবেছিল; কিন্তু মাঠে যা ঘটলো সেটা স্রেফ অলৌকিক।
চলতি আইপিএলে হেড অভাবনীয় ভাবে শাসন করে চলছেন বোলারদের। দিল্লির বিপক্ষেও তাঁর ব্যাট খোলা তরবারি হয়ে উঠবে সেটা অনুমান করা গিয়েছিল বটে; কিন্তু বাস্তবতা ছাড়িয়ে গিয়েছে দূরতম কল্পনাকেও। বাইশ গজে যে সুনামি উঠেছে সেটা আগে কখনোই দেখেনি কোন চোখ, আগে কখনোই ভাবেনি কোন হৃদয়।
এদিন মাত্র ৩২ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলেছেন এই ব্যাটার। সবমিলিয়ে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে এগারোটি চার ও ছয়টি ছয়। প্রায় ২৮০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে দলকে কেবল উড়ন্ত সূচনা-ই এনে দেননি তিনি, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের নব দিগন্ত উন্মোচনও করেছেন।
শুরু থেকেই খুনে মেজাজে আবির্ভূত হয়েছিলেন এই বাঁ-হাতি, প্রথম ওভারেই এক ছয় ও দুই চার হাঁকান। এরপর তৃতীয় ওভারে একাই আদায় করেন ২২ রান, সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটে ষষ্ঠ ওভারে। সেই ওভারে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ২৬ রান। ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরির জন্য অবশ্য এতক্ষণ অপেক্ষা করেননি এই ওপেনার। তৃতীয় ওভারের শেষ বলেই ছয়ের সাহায্যে পূর্ণ করেছিলেন মাইলফলক। মাত্র ১৬ বলে ফিফটি – চলতি আসরে এটিই যৌথভাবে দ্রুততম অর্ধশতকের রেকর্ড।
পাওয়ার প্লে যখন শেষ হয় ততক্ষণে তাঁর নামের পাশে শোভা পাচ্ছিলো ২৬ বলে ৮৪ রান! অবিশ্বাস্য নাকি অতিমানবীয় – কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করবেন এই ব্যাটিংকে। যেই বিশেষণ ব্যবহার করা হোক না কেন, সেটি কম হয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। অজি তারকার এমন পারফরম্যান্সের কল্যাণে শুরুর ছয় ওভারে ১২৫ রান করেছিল হায়দ্রাবাদ, আইপিএলের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ।
ভাগ্যিস, নবম ওভারে কুলদীপ যাদব আউট করেছিলেন ট্রাভিস হেডকে। তা নাহলে হয়তো ক্রিকেটের অনেক রেকর্ডই নতুন করে লিখতে হতো; রেকর্ড বই নতুন করে বানাতে হতো। তবু তিনি যা করেছেন সেটা নেহাৎ মানবিক কিছু নয়। তাই তো আইপিএলের এবারের আসরে বোলাররা তাঁকে মহাআতঙ্ক ভাবলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।