টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের ষোলতম ওভারে একজন স্পিনার রান দিয়েছেন মোটে পাঁচ। পাঁচটি রানই এসেছে সিঙ্গেল থেকে। ব্যাটিংয়ে তখন দুই সেট ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ফখর জামান। নিজের বুদ্ধিদিপ্ত লেগ স্পিনিং দিয়ে এই দুই ব্যাটারকে বিরত রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা।
ব্যাটারের উদ্দেশ্য আগে থেকেই পড়তে পেরে তিনি সেই মোতাবেক বল ছুড়তেও ওস্তাদ। সেই ওভারেই ফখর জামানকে ডাউন দ্য উইকেটে আসতে দেখেই বোলের গতি বাড়িয়ে পরাস্ত করেন জাম্পা। বড় শট খেলার অভিপ্রায় অপূর্ণ থেকে যায় ফখর জামানের মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে একটি রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে।
সেমিফাইনালের জাম্পার এমন বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং-এ হাত খুলে ব্যাট চালাতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তানের ব্যাটাররা। এর ফলে যা হয়েছে তাঁর উপর একটি অদৃশ্য প্রত্যাশা এসে ভর করেছে। খেলা চলাকালীন প্রতিপক্ষের ইনিংসের মধ্যভাগে জাম্পা হতে পারেন একজন কার্যকরী বোলার। রানরেটে স্থিরতা আনতে বেশ ভালভাবেই সক্ষম অ্যাডাম জাম্পা। এক ম্যাচ বিবেচনায় নয়। সামগ্রিক পারফর্মেন্স বিবেচনায় তাঁর প্রতি প্রত্যাশার চাপ আসাটা খুব স্বাভাবিকই বটেই।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিবেচনায় লেগ স্পিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বোলিং বিকল্প। দলের প্রয়োজনের সময়ে উইকেট তুলে নেওয়ার সক্ষমতা সাধারণত বিদ্যমান থাকে লেগ স্পিন বোলারদের। জাম্পার শারীরিক গঢ়ন বিবেচনয়া তিনি বলকে স্কিড করাতে পারেন অনায়াসে। তাছাড়া তাঁর কন্ট্রোলেও সমানতালে পারদর্শী। বোলিং এও রয়েছে বেশ কয়েক রকমের ভেরিয়েশন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে পাওয়ার প্লে-এর ঠিক পরমুহূর্তেই তিনি বোলিং করতে এসে তাঁর বোলিং ভ্যারিয়েশনে রান তোলার গতিকে রেখেছিলেন স্তিমিত। বাবর আজম এবং রিজওয়ান ছিলেন ব্যাটিং এ। ফিল্ডিং অনুযায়ী বোলিং করতে জানেন জাম্পা। বাবর আজমকে বারেবারে প্রভাবিত করেছিলেন স্লগ সুইপ খেলতে। অপরদিকে টপস্পিন, গুগলিতে ব্যস্ত রেখেছিলেন ফখর জামানকে। যা প্রকাশ করে ব্যাটার বুঝে বল করার দক্ষতাও।
সাধারণত লেগ স্পিনাররা যেমন উইকেট শিকারে পারদর্শী হন ঠিক তাঁর বিপরীত চিত্রও ঘটে তাঁদের সাথে। প্রচুর রান খরচা করে ফেলেন তাঁরা। তবেটি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে জাম্পার বোলিং অন্তত সেই দিকটা প্রকাশ করে না। এই টুর্নামেন্টে তিনি খেলেছেন ছয় ম্যাচ। এই ছয় ম্যাচে তাঁর ইকোনমি রেট ছয়ের নিচে। ৫.৬৯ ইকোনমি রেট টি-টোয়েন্টি বিবেচনায় বেশ প্রশংসনীয়।
জাম্পার উইকেট সংখ্যাও প্রসংসনীয়। ছয় ম্যাচে বারো উইকেট নিয়ে রয়েছেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে। ১৩১ রানের বিপরীতে ১১.৫ স্ট্রাইকরেটে তিনি উইকেট সংগ্রহ করেছেন এখন পর্যন্ত খেলা ছয় ম্যাচে। বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের এক ম্যাচেই পাঁচ উইকেট নিয়ে ধ্বস নামিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে। সুতরাং ফাইনালে জাম্পার উপর ভরসা রাখতেই পারে শিরোপা প্রত্যাশি অস্ট্রেলিয়া।
নিজের উপর অস্ট্রেলিয়া দলের প্রত্যাশার ব্যাপারে অ্যাডাম জাম্পা বলেন, ‘আমি জানি আমি দলে রয়েছি মিডেল ওভার গুলোতে উইকেট তুলে নেওয়ার প্রত্যাশায়। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাকে হয়ত আরো দেরীতে বল করতে হতে পারে। তবে আমি আমার দলে আমার কাজ সম্পর্কে বেশ ভালভাবেই অবগত আছি। টি-টোয়েন্টিতে মিডেল ওভারে স্পিন বোলিং করা বেশ কষ্টসাধ্য বিষয় কিন্তু আমি আমার বোলিং উপভোগ করি। বিশেষ করে এই টুর্নামেন্টে আমি চেষ্টা করেছি আমার সামর্থ্য এবং শক্তিমত্তা অনুযায়ী বল করে গিয়েছি। মিডেল ওভারে উইকেট নেওয়াটাই আমার কাজ এবং সৌভাগ্যবশত আমি নিয়মিত উইকেট পাচ্ছি।’
আগামী রবিবার ১৪ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শিরোপার লড়াইয়ে নামবে অস্ট্রেলিয়া। অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে নিজের সেরাটা দিতে মুখিয়ে আছেন জাম্পা। এছাড়া দলের প্রয়োজন মাফিক প্রত্যাশা মেটাতে বদ্ধ পরিকর অস্টেলিয়ান লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা।