বড় দল, ছোট দল- দুই ভিন্ন চেহারা রশিদের
গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথেই দুঃসহ স্মৃতি আছে তাঁর, এবার নিশ্চয়ই চেষ্টা করবেন মুদ্রার অন্য পিঠটা দেখার
রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন – প্রবাদের মতই একটা দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ভারত বনাম আফগানিস্তান ম্যাচে। রোহিত শর্মার তান্ডবে যখন স্রেফ উড়িয়ে যাচ্ছিল দলের বাকি বোলাররা, রশিদ খান তখন ফিল্ডিং করছিলেন মনোযোগ দিয়ে।
অবাক করার মতই ব্যাপার, ভারতীয় কাপ্তানের এমন ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পরেও নিজের সেরা অস্ত্রকে ষষ্ঠ বোলার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন হাসমতউল্লাহ শহীদি। শেষমেশ যখন আক্রমণে এসেছিলেন রশিদ, ততক্ষণে ভারতের জয় প্রায় নিশ্চিত। তবে চেষ্টা করেছেন তিনি, দুই ওপেনারের উইকেট তুলে নিয়েছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে – কিন্তু দেরি হয়ে গিয়েছিল অনেকটাই।
আফগান কোচও ঠিকঠাক জানেন না, কেন এই লেগস্পিনারকে এত অপেক্ষা করতে হয়েছে বোলিংয়ে আসার জন্য। তবে ট্রটও চান আরো আগে যেন তাঁকে ব্যবহার করা হয়।
অবশ্য বিশ্বকাপে কিংবা বড় দলগুলোর বিপক্ষে রশিদ খান যে একেবারে অপ্রতিরোধ্য এমনটাও নয়। ছোট দলগুলোর সাথে যতটা দুর্দান্ত তিনি সেই হিসেবে, র্যাংকিংয়ের ওপরে থাকা দলের বিপক্ষে ভাল করতে পারেননি।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রায় ১৯ গড়ে ১৭৪ উইকেট শিকার করেছেন এই ডানহাতি; অথচ ‘টপ সিক্স’-এর বিরুদ্ধে উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১৩ টি, গড় ৪৪ এর বেশি।
আফগানিস্তানের পোস্টার বয়কে সবচেয়ে ভালভাবে সামলেছন শেন ওয়াটসন। কোনবারই আউট না হয়ে এই বোলারের ৭৩ বলে ১০৮ রান নিয়েছেন তিনি। আর এই অজি ব্যাটারের মতে, রশিদ মূলত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ফর্ম ওয়ানডেতে টেনে আনতে পারছে না।
তিনি বলেন, ‘মাঝের ওভারগুলোতে চারজন বাইরে থাকায় ব্যাটারদের ঝুঁকি নিতে হয় না। তাঁরা সহজে বাউন্ডারি বের করতে পারে, স্ট্রাইক রোটেট করতে পারে। আবার সবাই জানে সে (রশিদ) আফগানিস্তানের প্রধান অস্ত্র, তাই তাঁকে সাবধানে খেলাটা সবার পরিকল্পনার অংশ।’
এসবের পাশাপাশি এই ডানহাতিকে খেলার উপায়ও বাতলে দিয়েছেন ওয়াটসন। তিনি বলেন, ‘সে গুগলিতে বেশি উইকেট নিয়েছে। লেগস্পিনে তাঁর খুব বেশি টার্ন হয় না। তাই আমি ব্যাটিংয়ের সময় অফ স্ট্যাম্প কভার করতে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতাম তাঁকে।’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘শুরুর দিকে উইকেট না পেলে সে আরেকটু ফুলার লেন্থে বা আরেকটু ধীর গতিতে বল করে – আর এর মানে কিন্তু ব্যাটারদের জন্য রান করার সুযোগ বাড়ে।’
ভারতের বিপক্ষেও এমনটা দেখা গিয়েছে। উইকেটের জন্য নিজের লাইন লেন্থে খানিকটা বদল এনেছিলেন আফগান তারকা। রোহিত একটা বল চার মারার পর আরেকটু ফুলার ডেলিভারি দেন তিনি, সেটাও বাউন্ডারি হওয়ায় পরেরটা স্ট্যাম্পে গুগলি করেন – ফলাফল বিশাল ছয়। যদিও শেষমেশ ভারতীয় কাপ্তানকে তুলে নিতে পেরেছেন এই লেগি।
রশিদ খানের সামনে এখন ইংলিশ পরীক্ষা। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথেই দু:সহ স্মৃতি আছে তাঁর, এবার নিশ্চয়ই চেষ্টা করবেন মুদ্রার অন্য পিঠটা দেখার। দুই হাত প্রসারিত দৌড় অথবা ব্যাটারকে টার্নে পরাস্ত করা – তাঁর কাছ থেকে এমন দৃশ্য দেখতে চাইবে পুরো আফগানিস্তানও।