দিনটি থেকে বাংলাদেশের যা আশা করা উচিৎ ছিল – সেটা আসেনি। ৭৫ ওভারে বাংলাদেশ দল পালেকেল্লের দ্বিতীয় দিনে তুলেছে মোটে ১৭২ রান। হারিয়েছে দু’টি উইকেট। আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা ২৫ ওভার আগেই শেষ হয়। ফলে, বাংলাদেশকে আর চালকের আসনে রাখা যাচ্ছে না।
দেশের মাটিতে মুমিনুল হক আস্থা ও নির্ভরতার অপর নাম। কিন্তু দেশের বাইরে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন বড্ড অচেনা। দেশের মাটিতে দশটি সেঞ্চুরি করলেও দেশের বাইরে এই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি ছিলো না। অবশেষে ১৭ টেস্ট ও ৩৩ ইনিংস অপেক্ষার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই আক্ষেপ দূর করেছেন মুমিনুল হক।
টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি করার রেকর্ড আগে থেকেই মুমিনুলের দখলে ছিলো। আজ সেঞ্চুরির সংখ্যাটা ১০ থেকে ১১ তে নিয়ে গেলেন তিনি। আজ সেঞ্চুরি করে অনাকাঙ্খিত এক রেকর্ডের হাত থেকেও মুক্তি পেয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। এর আগে দেশের বাইরে সেঞ্চুরি না করে দেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশী সেঞ্চুরি করার রেকর্ড ছিলো তাঁর দখলে।
মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি, নাজমুল হোসেন শান্তর দেড়শো ছাড়ানো ইনিংস ও শেষ বিকালে মুশফিক-লিটনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় পাল্লেকেলে টেস্টের দ্বিতীয় দিনও নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। দিন শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৭৪ রান সংগ্রহ করেছে সফরকারীরা।
টেস্টের প্রথম দিন আক্রমণাত্মক বল করে মাত্র ২ উইকেট তুলে নিতে পারা শ্রীলঙ্কার বোলররা দ্বিতীয় দিন শুরু করে ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে। দিনের শুরু থেকেই তারা লাইন লেংথ বজায় রেখে রান আটকানোর চেষ্টা করে। শ্রীলঙ্কার বোলারদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসলেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দৃঢ়তায় কোন পরিবর্তন আসেনি।
গতকাল প্রথম দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, আজ দ্বিতীয় দিন যেন সেখান থেকেই শুরু করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। সকালের প্রথম সেশনটা দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। পরিস্তিতির দাবি মিটিয়ে এই দুই ব্যাটসম্যান এগিয়ে যান ঠান্ডা মাথায় ব্যাটিং করে। শ্রীলঙ্কার বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে দিনের প্রথম সেশনে দুজন যোগ করেন ৭৬ রান।
২ উইকেট ৩৭৮ রান নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। প্রথম সেশনেই ধৈর্যের পরিক্ষা দিয়ে ২২৪ বলে মুমিনুল হক তুলে নেন তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম ও দেশের বাইরে প্রথম সেঞ্চুরি। এর আগে দেশের বাইরে মুমিনুলের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ৭৭। আর নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ১৫৫ রানে।
তবে দ্বিতীয় শেসনের শুরুতেই বাংলাদেশের ইনিংসে আঘাত হানেন লাহিরু কুমারা। দারুণ খেলতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত ১৬৩ রান করে ফিরতি ক্যাচ দেন এই পেসারকে। শান্তর বিদায়ে ভাঙে ২৪২ রানের রেকর্ড গড়া জুটি। তৃতীয় উইকেটে আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি ছিলো ২৩৬ রানের।
২০১৮ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই ২৩৬ রানের ঐ জুটি গড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হক। এই রেকর্ড ভাঙলেও অল্পের জন্য জুটিতে সর্বোচ্চ বল খেলার রেকর্ড দখলে নিতে পারেননি শান্ত-মুমিনুল। এই দুজন খেলেন ৫১৪ বল। বাংলাদেশের হয়ে এক জুটিতে সর্বোচ্চ ৫১৮ বল খেলেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ আশরাফুল। সেটাও শ্রীলঙ্কা বিপক্ষেই, গলে ২০১৩ সালে।
দলীয় ৩৯৪ রানে নাজমুল হোসেন শান্ত বিদায় নেওয়ার পর বেশীক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি মুমিনুল হকও। ৩০৪ বলে ১২৭ রান করে আউট হয়ে যান বাংলাদেশের অধিনায়ক। এই দুই ব্যাটসম্যান ফিরে যাওয়ার পর পঞ্চম উইকেটে আবার ৫০ রানের জুটি গড়েন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। কিন্ত ২৫ ওভার বাকি থাকতেই আলোকস্বল্পতায় বন্ধ হয়ে যায় দিনের খেলা।
মুশফিকুর রহিম ৪৩ রান ও লিটন দাস ২৫ রান করে অপরাজিত রয়েছেন। আজ বাংলাদেশের পতন হওয়া উইকেট দুটি শিকার করেছেন কুমারা ও সিলভা। আর গতকাল দুটি উইকেট নিয়েছিলেন ফার্নান্দো।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর: (দ্বিতীয় দিন শেষে)
বাংলাদেশ: ৪৭৪/৪ (ওভার: ১৫৫; তামিম- ৯০, সাইফ- ০, নাজমুল- ১৬৩, মুমিনুল- ১২৭, মুশফিক- ৪৩*, লিটন- ২৫*) (ফার্নান্দো- ২/৬১, কুমারা- ১/৮৮, সিলভা- ১/১১২)