আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণ মেগা ইভেন্ট টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর এই বছর অক্টোবর – নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আয়োজক ভারত, মানে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)।
কিন্তু, করোনা ভাইরাসের মহামারি পরিস্থিতির প্রকোপে সেটি নিয়ে ঘোর সংশয় তৈরি হয়েছে। তাই এই বিষয়ে আগামী এক জুন বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছে।
সেদিন বিসিসিআইয়ের সাথে আইসিসির বৈঠকে অক্টোবর – ননভেম্বর উইন্ডোতে আইসিসির ফ্ল্যাগশিপ টুর্নামেন্ট আয়োজনকে ঘিরে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে যা ভারতের সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতির আলোকে খুবই গূরত্বপূর্ণ।
ভারতে এ বছর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ না হলে বিকল্প ভেন্যু হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম জোরালো হয়েছে ইতেমধ্যেই। এখানে গত বছর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সফলতার সাথে আইপিএল আয়োজন করেছিল। আরব আমিরাতে করোনা পরিস্থিতি, অন্যান্য দেশের ভ্রমণসহ যাবতীয় বিধি নিষেধ মোতাবেক টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করার পূর্ণ সামর্থ্য রাখে তাঁরা।
তবে এখনই কোন সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের মধ্যে ভালো মতো আলোচনা করার জন্য আগামী ২৯ মে একটা বিশেষ সাধারণ সভা ডেকেছে। সেখানে আসন্ন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রূপরেখা তৈরি করাই কেবল নয়, আসন্ন ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়েও গুরত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। তবে যাই হোক না কেন সৌরভ গাঙ্গুলীর বোর্ড কোন ঝুঁকি নেওয়ার পক্ষে নয়।
টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের কোন নতুন সিদ্ধান্তের সাথে ভারতের নয়টি রাজ্য জড়িত। কারণ গত সভায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড দেশের মাটিতে নয়টি রাজ্যের নয়টি ভেন্যুর সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করেছিল সেগুলি হলো – আমদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লী, ধর্মশালা, হায়দ্রাবাদ, কলকাতা, লখনৌ এবং মুম্বাই।
কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের মাটিতে এই সকল ভেন্যুতে ম্যাচ আয়োজনের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। ভারতের কোভিড পরিস্থিতি এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। এই কয়েকদিন সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছে। সরকারি হিসেবে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ আক্রান্ত এখনো ভারতে। তবে ২৯ মে বিসিসিআই এর সাধারণ সভাই এসব নিয়ে যাবতীয় আলোচনা হবে এবং এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী ১ জুন আইসিসির বিশেষ সভায়।
তাছাড়া ও আলোচনা কেন্দ্রে আছে এইবারের স্থগিত হওয়া আইপিএল। আইপিএল এর জৈব সুরক্ষা বলয়েও করোনা ঢুকে যাওয়ায় গত ৪ মে অনির্দিষ্টকালের জন্য আইপিএল স্থগিত করে বিসিসিআই। এবারের সভায় আইপিএল ও আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও বাকি ম্যাচ গুলা ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা আয়োজনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
২৯ টি ম্যাচ আয়োজনের পর আইপিএল স্থগিত করা হয়। এটা যে আর ভারতে চলতি বছর আয়োজন করা যাবে না – সেটা নিশ্চিত। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইপিএল শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা। তবে, সেটা দেশে হবে না, আরব আমিরাতে হতে পারে।’
যদিও, ইংল্যান্ডের কয়েকটি কাউন্টি আইপিএলের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) দাবী করছে, তাঁরা মাঠগুলোকে আইপিএলের জন্য সে সময় দরকার সেই অনুযায়ী বিসিসিআইকে দিতে পারবে না।
তবে, বিসিসিআইয়ের সব চিন্তার মূলে ভারতের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন। যা সবই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ১ এপ্রিল আইসিসির বিশেষ সভার পর। এই সম্পর্কে বিসিসিআইয়ের সচিব জয় শাহ বলেছেন, ‘ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে যে মহামারি পরিস্থিতি চলছে সেই পরিস্থিতির আলোকেই আসন্ন ক্রিকেট মৌসম নিয়ে আলোচলা হবে। বাস্তবতা হলো পরিস্থিতি এখনো ভালো হয়নি। এই কঠিন সময়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা বেশি জরুরী।
করোনা ভাইরাসের দাপটে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) আগেই আরব আমিরাতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এবার তার সাথে আইপিএলও সেখানে আয়োজনের জোর গুঞ্জন উঠেছে – অন্তত বিসিসিআইয়ের আলোচনায় সেটাই উঠে এসেছে। আর বিশ্বকাপের বিকল্প ভেন্যুও এই মরুর দেশ। ক্রিকেট বিশ্বের কাছে এখন একমাত্র সমাধান সম্ভবত এই আরব আমিরাত!