লজ্জার কাব্য!

বায়ার্ন মিউনিখের কাছে যে বার্সেলোনা যে কোনো দিনই হেরে যেতে পারে, সেটা খুব কট্টর বার্সা-সমর্থকও জানতেন। কারণ, বার্সেলোনার মুখোমুখি হবার আগে যে ২৭ টা প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ তাঁরা খেলেছে, জিতেছে তাঁর ২৬ টিতেই। তবে, হারটা এভাবে হবে সেটা নিশ্চয়ই ঘোরতর বার্সা-বিরোধী স্বপ্নেও ভাবেননি!

২-৮ গোলের এই ব্যবধানটা প্রমাণ করে, ম্যাচে আর যাই হোক ফিনিশিং লাইনে তুখোড় পাওয়ার ফুটবল খেলেছে বায়ার্ন মিউনিখ। আর এটাও প্রমাণ করে যে, বার্সেলোনা প্রচণ্ড ভয়াবহ এক দু:সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

এই অবস্থায় কি দরকার? অবশ্যই প্রথমে দরকার পরিবর্তন। বার্সেলোনা ক্লাবের সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তেমিউ শুধু পরিবর্তন নয়, বিরাট পরিবর্তনেরই অভাস দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘এটা খুবই কঠিন একটা রাত। বার্সার সমর্থক ও সদস্যদের কাছে আমি দু:খ প্রকাশ করছি। ক্লাবের সভাপতি হিসেবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কিছু সিদ্ধান্ত এর মধ্যেই নেওয়া হয়ে গেছে। সামনের কয়েকটা দিনে আরো কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সামনের সপ্তাহে আমরা বড় কিছু ঘোষণা দিবো। তখনই ঘোষণা আসবে, যখন পরিস্থিতি শান্ত হবে।’

প্রথম ‘কোপ’টা অবশ্যই পড়বে কোচ কিকে সেতিয়েনের ওপর। গেল জানুয়ারিতে কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দেকে বরখাস্ত করার পর এই স্প্যানিশ কোচ নিয়োগ পেয়েছিলেন। এই দফায় তিনি সম্ভবত চাকরিটা খোয়াবেন। অবশ্য আগে থেকেই আভাস ছিল, চলতি মৌসুম শেষেই তাঁর বিদায় হবে। কাতালানদের মৌসুম শেষ। এবার কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা।

আরো একটা বিরাট পরিবর্তন আসতে পারে বার্সা শিবিরে। লিওনেল মেসির সাথে ক্লাবটির ‍চুক্তি ২০২১ সাল পর্যন্ত। চুক্তির মেয়াদ বাড়বে কি বাড়বে না – সেই নিয়ে অনেকদিন যাবৎ চলছে তর্ক বিতর্ক। এবার বায়ার্নের বিপক্ষে এই লজ্জার পর আবারো পিছিয়ে আসতে পারে বার্সা ম্যানেজমেন্ট। এমনও হতে পারে যে, মেসির বার্সা-অধ্যায়ের এখানেই ইতি। আগামী মাস দুয়েকে অনেক কিছুই ওলট-পালট হবে।

সাবেক ইংলিশ ডিফেন্ডার রিও ফার্ডিনান্ড তো বলেই দিলেন, ‘এখন প্রশ্ন হল মেসি কি ভাবছে? ও কি চিন্তা করতে করতে বাড়ি ফিরবে? ওর কি এখন বসে অপেক্ষা করার সময় আছে। জীবনে ফুটবল আসে, আর খুব অল্প সময় পরেই চলে যায়। ওর জন্য সামনের দুই বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ও কোথায় গিয়ে নিজের খেলা দিয়ে আগের মত প্রভাব ফেলবে – এখন সেটাই দেখার ব্যাপার। ও কি এখনো বড় ট্রফি জিততে চায়? আমি জানি না।’

আর লুইস সুয়ারেজকে যে বিক্রি করে দিতে চায় বার্সেলোনা – সে তো পুরনো খবর। তাহলে, নিজেদের আক্রমণভাগ ঢেলে সাজাবে তারা। মানে অর্থ একটাই, এই মুহূর্তে পরিবর্তনের বিকল্প নেই।

শেষে একটা ছোট্ট তথ্য দেই। ২০০৪-০৫ মৌসুমের পর এবারই প্রথমবারের মত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে নেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কিংবা লিওনেল মেসি। এটাকে দুই বিশ্বসেরা তারকার যুগের আনুষ্ঠানিক ইতির আগাম আভাস হিসেবে ধরা যায়। তবে, বার্সেলোনা যখন এমন দু:সহ ও বেদনাবিধুর রাত কাটায় তখন, ফুটবল বিশ্বের অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সুযোগ কোথায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link