লিভারপুলের সর্বকালের সেরা একাদশ

ছয়বার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জয়ী, ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল ফুটবল দলের একটি নি:সন্দেহে লিভারপুল ফুটবল ক্লাব। অল রেডদের সোনালি সময়ে তথা ১৯৬০, ৭০ এবং ৮০’র দশকে রজার হান্ট, কেভিন কিগান এবং কেনি ডালগ্লিশরা কপের মধ্যমণি হয়েছিলেন।

হাল আমলের মোহাম্মেদ সালাহ, সাদিও মানে এবং ভার্জিল ভ্যান ডাইকরাও লিভার পাডলিয়ানদের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন, হয়েছেন অ্যানফিল্ডের ইতিহাসের অংশ। এত তারকার মাঝে মাত্র এগার জনকে বেছে নেওয়া কিছুটা কষ্টকর তো বটেই তবু ৪-৩-৩ ফরমেশনে এটাই করার প্রচেষ্ঠা আজ।

  • গোলরক্ষক: রয় ক্লেমেন্স

অ্যালিসন বেকার হয়তো একসময় রয় ক্লেমেন্স কে ছাড়িয়ে হয়ে যাবেন লিভারপুলের ইতিহাসের সেরা গোলরক্ষক। তবে তা সুদূর ভবিষ্যতে এখন রয় ক্লেমেন্স অটোমেটিক চয়েস।

১৯৬৮ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত অল রেডদের জার্সিতে ৬৬৫ খেলেছেন তিনি, লিভারপুলের ইতিহাসে আর মাত্র তিনজন এর চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন।

মাত্র আঠারো হাজার পাউন্ডে স্কানথর্প থেকে লিভারপুলে এসেছিলেন, জিতেছেন পাঁচটি লিগ শিরোপা, তিনটি ইউরোপিয়ান কাপসহ মোট আঠারোটি মেজর ট্রফি।

  • রাইট ব্যাক: ফিল নিল 

ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ড কেন নয়? অনেকই এই প্রশ্ন করে বসবেন। অল রেডদের একাডেমি থেকে উঠে আসা ২৩ বছর বয়সী এই লিভারপাডলিয়ান তারকা হয়তো সেরাদের সেরা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন ভবিষ্যতে কিন্তু অ্যানফিল্ডের সবচেয়ে সজ্জিত ফুটবলার ফিল নিলকে আজ তার জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।

১৯৭৪ সালে বব পেইসলি লিভারপুলের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ফিল নিলকে তিনি সবার প্রথম দলে ভেড়ান । ১৯৮৫ সাল অবধি লিভারপুলের হয়ে ৬৫০ ম্যাচ খেলে করেন ৫৯ টি গোল এবং সেইসাথে আটটি লিগ শিরোপা,চারটি ইউরোপিয়ান কাপ, চারটি লীগ কাপ, একটি উয়েফা কাপ এবং একটি সুপার কাপ জেতেন।

দুইটি ইউরোপিয়ান ফাইনালে গোল করা এই ফুটবলার ট্রেন্টের মত হয়তো বল ক্রস করায় পারদর্শী ছিলেন না কিন্তু অলরেডদের জন্য তিনি নি:সন্দেহে একজন কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন।

  • সেন্টার ব্যাক: অ্যালেন হ্যানসেন

অলরেডদের জার্সি গায়ে তোলা অন্যতম সেরা সেন্টার ডিফেন্ডার এই স্কটিশ ফুটবলার। লিভারপুল দলের অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন প্রায় দুশোর বেশি ম্যাচে।

ইনজুরির কবলে পরে ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার আগে খেলেছেন ৪৩৪ টি ম্যাচ, জিতেছেন ১৭ টি মেজর ট্রফি। পরবর্তিতে তিনি বিবিসির একজন ফুটবল বিশ্লেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

  • সেন্টার ব্যাক: ভার্জিল ভ্যান ডাইক

হাল আমলের তারকা ভার্জিল ভ্যান ডাইক তার ক্যারিয়ার শেষে অ্যালেন হ্যানসেনকে কে সেরা সেন্টার ব্যাক সেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার  দাবি রাখেন। ২০১৮ সালে তৎকালীন ক্লাব রেকর্ড ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ডে সাউথহ্যাম্পটন থেকে লিভারপুলে যোগ দেন এই ডাচ তারকা।

শূন্যে বলের দখল নিতে যেমন পারদর্শী তেমনি ট্যাকল না করেও আটকে দিতে পারেন বিপক্ষ দলের আক্রমণ। ডিফেন্স থেকে করেন বলের নির্ভুল সরবরাহ, তাকে ছাড়া ইউর্গেন ক্লপের আমলে লিভারপুলের যে সাফল্য তা কখনোই সম্ভব হত না। 

  • লেফট ব্যাক: অ্যান্ডি রবার্টসন

১৯৮৯ সালে ফুটবলার অফ দ্য ইয়ার জেতা স্টিভ নিকোল এবং জেরি বাইরন যিনি ১৯৬৫ সালের এফএ কাপের ফাইনালের প্রায় পুরোটা সময় ভাঙা কলারবোন নিয়ে খেলেন তাদের বাদ দিয়ে দলে জায়গা করে নিয়েছেন অ্যান্ডি রবার্টসন।

২০১৭ সালে প্রায় নিভৃতেই হাল সিটি থেকে লিভারপুলে যোগদান করেন তিনি। ইউর্গেন ক্লপের অধীনে হয়ে ওঠেন আধুনিক ফুটবলের আক্রমণাত্মক ফুলব্যাকের নিদর্শন। অলরেডদের জার্সিতে যখনই মাঠে নামেন নিজেকে উজাড় করে দেন আর তাই অলরেডদের বর্তমান সাফল্যের অন্যতম দাবিদার এই স্কটিস লেফট ব্যাক।

  • সেন্টার মিডফিল্ডার: গ্রায়েম সুনেস

এখন গ্রায়েম সুনেসকে অনেকে একজন ফুটবল বিশ্লেষক হিসেবে চিনলেও তিনি একসময় ছিলেন ব্রিটিশ ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। শক্তিশালি শট এবং দুর্দান্ত বল সরবরাহ করার দক্ষতা ছিল এই স্কটিস মিডফিল্ডারের। লিভারপুলের হয়ে ছয় বছরে খেলেছেন ৩৫০ টি ম্যাচ, জিতেছেন পাঁচটি লিগ শিরোপা,তিনটি ইউরোপিয়ান কাপ, চারটি লিগ কাপ। 

১৯৮৪ সালে রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে শেষবার অলরেডদের জার্সিতে দেখা যায় তাকে, অধিনায়ক হিসেবে দলকে জিতিয়ে মাঠ ত্যাগ করেন তিনি। পরবর্তীতে ম্যানেজার হিসেবে এসে একটি এফএ কাপ জেতেন, যদিও তার সময়টা তখন খুব ভাল যাচ্ছিল না।

  • সেন্টার মিডফিল্ডার: স্টিভেন জেরার্ড 

ক্যাপটেন ফ্যান্টাস্টিক স্টিভেন জেরার্ড দলকে প্রায় ৫০০ বার অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। লিভারপুলের সবচেয়ে সেরা ফুটবলার হিসেবে তার নাম উঠে আসবে। মাত্র দুই জন খেলোয়াড় তার চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে মার্সিসাইদের এই ক্লাবটির হয়ে, মাত্র চারজনের আছে তার চেয়ে বেশি গোল।

একজন দুর্দান্ত ফুটবলার যার ড্রিবলিং, ট্যাকল, বল সরবরাহ, করার সমান দক্ষতা রয়েছে । ডি বক্সের যে কোন জায়গা থেকে শট নিয়ে অহরহ গোল করার উদাহরণ আছে তার। এই একাদশে আউটফিল্ডে যে কোন পজিশনে খেলার ক্ষমতা রাখেন তিনি।

  • রাইট উইঙ: মোহাম্মদ সালাহ

২০১৮ সালে অ্যানফিল্ডে পদার্পণের পর থেকেই মোহাম্মদ সালাহ গোল করার ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অন্য উচ্চতায়, যেখানে তিনি নিজেই নিজের মাপকাঠি।

মাত্র ১৫৯ ম্যাচে ১০০ গোল করেন এই ইজিপশিয়ান, একমাত্র রজার হান্ট এবং জ্যাক পারকিন্সন তার চেয়ে কম ম্যাচ খেলে ১০০ গোল করেন। সালাহ ইতিমধ্যে ক্লাবের সর্বোচ্চ ১০ গোলদাতাদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন।

বিগত পাঁচ মৌসুমে তিনি তিনটি প্রিমিয়ার লিগ গোল্ডেন বুট, দুইটি পিএফএ প্লেয়ার অফ দি ইয়ার এবং দুইটি ফুটবলার অফ দি ইয়ারের পুরস্কার জেতেন যা লিভারপুলের খেলায় তার কি প্রভাব তার বিন্দু মাত্র ধারনা দেয়।

  • অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার: কেনি ডালগ্লিশ

কিং কেনি লিভারপুল সমর্থকদের কাছে তিনি এক অসাধারন ব্যক্তিত্ব। তার নামে অ্যানফিল্ডের একটি স্ট্যান্ডেরও নাম করণ করা হয়েছে। মার্সিসাইডের এই ক্লাবের ইতিহাসে তিনি একজন আইকন হয়ে থাকবেন । খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে তার মত সফল হতে পারেনি আর কেউ।

১৯৭৭ সালে কেভিন কিগানের বদলি হিসেবে তাকে দলে ভিড়ানো হয়। অলরেডদের হয়ে ৫১৫ ম্যাচে ১৭২ গোল করেন তিনি, এই সময় ইয়ান রাশের সাথে এক দুর্ধর্ষ আক্রমণ জুটি গড়ে তোলেন তিনি। 

১৯৮৫ সালে প্লেয়ার ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দলকে লিগ শিরোপা এবং কাপ জেতান। ১৯৮৯’র হিলসবরো বিপর্যয়ের পরবর্তী সময় তার কর্মকাণ্ড সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা আরো পাকাপোক্ত করে দেয়। সমর্থকদের কাছে তিনি এমন একজন যাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না কেও।

  • লেফট উইঙ: জন বার্নস

গতি এবং ফুটবলীয় দক্ষতায় সমৃদ্ধ জন বার্ন্স শুরু থেকেই লিভারপুল সমর্থকদের নজর কাড়েন। ১৯৮৭ সালে ওয়াটফোর্ড থেকে অলরেডদের দলে যোগদানের পর প্রথম তিন মৌসুমেই দুইটি লিগ শিরোপা এবং একটি এফএ কাপ জেতেন তিনি। জন আলরিজড এবং পিটার বিয়ার্ডসলি কে নিয়ে গড়ে তোলেন এক অভাবনীয় আক্রমণভাগ যা ক্লাবটির ইতিহাসে জায়গা করে নেয়।

ইনজুরির কারণে সংকুচিত হয়ে যায় তার কারিয়ারের সেরা সময়টি। ১৯৯৭ সালে যখন তিনি ক্লাব ত্যাগ করেন তার পূর্বে অলরেডদের জার্সি গায়ে খেলে ফেলেছেন ৪০০’র বেশি ম্যাচ এবং করেছেন ১০০’র বেশি গোল ।

  • সেন্টার ফরওয়ার্ড: ইয়ান রাশ

লিভারপুলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ইয়ান রাশ, এই একটি বাক্যই যথেষ্ট এটা বোঝার জন্য কেন কেভিন কিগান, রবি ফাওলার, মাইকেল ওয়েন, ফার্নান্দো তোরেস, লুইস সুয়ারেজ এবং রবার্তো ফিরমিনোরা এই দলে থাকছে না।

অলরেডদের হয়ে ৬৬০ ম্যাচে ৩৪৬ গোল করেন রাশ। মার্সিসাইদের এই ক্লাবটির হয়ে জেতেন ১৪ টি মেজর ট্রফি। লিভারপুলের ইতিহাসে একজন দুর্দান্ত ফরওয়ার্ড এবং দুর্ধর্ষ ফিনিশার হিসেবে তিনি অম্লান হয়ে থাকবেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link