ব্যক্তিগত অর্জন কিংবা রেকর্ডে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কখনোই তেমন পিছিয়ে ছিল না। বরং কিছু কিছু রেকর্ড বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের হাত দিয়েই ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ঠাঁই পেয়েছে। এই যেমন, রাবাদা তাঁর ওয়ানডে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করার কীর্তি গড়েছিল। সেই কীর্তির কথা যতবার উঠে আসবে ঠিক ততবারই বাংলাদেশের তাইজুল ইসলামের নাম উচ্চারিত হবে। কারণ ওয়ানডে অভিষেকে প্রথম হ্যাটট্রিকের ইতিহাসটা গড়েছিলেন সেই তাইজুলই।
যাহোক, বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের গড়া এমন পাঁচটি রেকর্ড নিয়েই খেলা ৭১ এর আজকের আয়োজন। যা অদূর ভবিষ্যতে ভাঙ্গা বেশ কঠিন হবে। যদিও রেকর্ড গড়া হয় ভাঙার জন্যই। তারপরও এইসব রেকর্ডগুলো অনেক বছর ধরে থাকতে পারে অক্ষতম অবিকৃত। চলুন সেই সব রেকর্ডের গল্প দিয়েই শুরু করা যাক।
- সাকিব আল হাসান (এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও দশ উইকেট)
সাকিবের আগে এক টেস্টে শতকের পাশাপাশি ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছিলেন আরো তিন জন। ১৯৬০ সালে অ্যালান ডেভিডসনকে দিয়ে এই বিরল রেকর্ডের পথযাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৮০ সালে ইয়ান বোথাম আর ১৯৮৩ সালে ইমরান খান এই রেকর্ডের পাশে নিজেদের নাম লেখান। তবে সেই ১৯৮৩ সালের পরে দীর্ঘ তিন দশক ধরে সেই রেকর্ডের ধারের কাছেও কেউ আসতে পারছিলেন না। অবশ্য সেঞ্চুরির পাশাপাশি ১০ উইকেট, বেশ অবিশ্বাস্য রকমেরই রেকর্ড বটে।
তবে ২০১৪ সালে সেই অবিশ্বাস্য কাজটাই করে দেখান সাকিব আল হাসান৷ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলার পর বল হাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন ১০ উইকেট। আর এতেই ডেভিডসন, বোথাম, ইমরানদের পাশে বসে যান সাকিব। একই সাথে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এ বিরল কীর্তি গড়েন তিনি। এখন দেখার পালা, এই শতাব্দীতে সাকিবের এ কীর্তির পাশে কে নাম লেখান।
- মোহাম্মদ আশরাফুল (সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান)
আশরাফুলের করা এ রেকর্ডটির বয়স পেরিয়ে গেছে দুই দশক। সহসায় সে রেকর্ডটি কেউ ভাঙবেন সেটিও এই মুহূর্তে নিছক কল্পলোকে গল্প করার মতো। কারণ সতেরো বছর বয়সে এখন কোন ব্যাটারকেই বা টেস্ট অভিষেক হতে দেখা যায়! অথচ আশরাফুল ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে। আর এর মধ্য দিয়ে তার ৪১ বছর আগে গড়া পাকিস্তানের মুশতাক মোহাম্মদের রেকর্ডটি তিনি ভেঙে দেন। মুশতাক মোহাম্মদ ১৯৬০ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৭ বছর ৭৮ দিন বয়সে।
- আবুল হাসান রাজু -(অভিষেকে ১০ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি)
আবুল হাসান রাজুর ক্যারিয়ারটা দীর্ঘায়িত হয়নি। তবে ক্যারিয়ারে প্রথম টেস্টেই তিনি যে রেকর্ডটি গড়েছিলেন তা এই মুহূর্তে ভাঙা প্রায় অসম্ভবই বটে। আবুল হাসানের আগে টেস্টে ১০ নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন আরো ৩ জন। তবে ওয়াল্টার রিড, রেজি ডাফ, প্যাট সিমকক্সের গড়া সেই রেকর্ডের পাশে নাম লেখানো আবুল হাসান রাজুর অনন্যতা ছিল অন্য জায়গায়।
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম এবং একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে দশ নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েছিলেন আবুল হাসান। ২০১২ সালে নিজের অভিষেকে টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি ১১৩ রানের ইনিংস খেলেন। আর সেই ইনিংসের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আবুল হাসান রাজুর কীর্তিতে ভাগ বসাতে পারেনি কেউ।
- সোহাগ গাজী- (একই টেস্টে হ্যাটট্রিক এবং সেঞ্চুরি)
সোহাগ গাজীর ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল একদম ঝলমলে আলোয় আলোকিত। সেই আলোর উদ্ভাসে তিনি একটি অনন্য রেকর্ডও গড়েছিলেন। ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেই সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন সোহাগ গাজী। নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি অবশ্যই স্পেশাল কিছু। কিন্তু সেটি তো আর রেকর্ড হতে পারেনা।
সোহাগ গাজী ভিন্ন এক কীর্তির জন্ম দিলেন যখন নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে গেল। পরপর তিন বলে কোরি অ্যান্ডারসন, বি জে ওয়াটলিং, ব্রেসওয়েলের উইকেট তুলে নিয়ে করলেন হ্যাটট্রিক। আর এতেই দারুণ এক রেকর্ডের জন্ম দিলেন সোহাগ গাজী। কারণ তাঁর আগে কিংবা পরে কেউই তো এখন পর্যন্ত এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়তে পারেনি। সোহাগ গাজী সেখানেই অনন্য।
- মুস্তাফিজুর রহমান- (অভিষেক ওয়ানডে এবং অভিষেক টেস্টে ম্যাচ সেরা)
‘ড্রিম ডেব্যু’ বলে যদি কোনো উপমা থাকে সেটিই হয়েছিল মুস্তাফিজুর রহমানের বেলায়। ক্যারিয়ারের শুরুতেই সমস্ত লাইমলাইট নিজের করে নিয়েছিলেন। একই সাথে ভিন্ন এক রেকর্ডেও নিজের নাম লিখিয়েছিলেন। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচেই ৬ উইকেট তুলে নিয়েই হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। ক্রিকেট ইতিহাসে অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচে অনেকেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন।
তাই দ্য ফিজের সেই ম্যাচে ম্যাচসেরা হওয়াটা ভিন্ন কোনো রেকর্ড নয়। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজের অভিষেক টেস্টেই আবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন মুস্তাফিজ। আর এখানেই নতুন কীর্তি গড়ে ফেলেন তিনি। কারণ তাঁর আগে তো কেউ নিজের অভিষেক টেস্ট আর অভিষেক ওয়ানডেতে ম্যাচসেরা হয়নি। মুস্তাফিজ সেখানেই ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র।