বিশ্বকাপের চূড়ান্ত হতভাগা যারা

সর্বশেষ বিশ্বকাপ দলে ছিলেন না। ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জেতার মুহূর্তে এ জন্য উদযাপনটাও করতে পারেননি। নিজেকে তাই একটু দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন করিম বেনজেমা। যা হোক, সেসব দু:সময় পেছনে ফেলে এবারের বিশ্বকাপে দলে নিজের জায়গা নিশ্চিত করেছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যেন এবারও পিছু ছাড়ল না তাঁর।

বিশ্বকাপ শুরুর দিনে এসে জানা গেল ইনজুরির কারণে এবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ফুটবলার করিম বেনজেমাকে আর কাতার বিশ্বকাপে দেখা যাবে না। অর্থাৎ টানা দুই বিশ্বকাপ কাটাতে হচ্ছে মাঠের বাইরের দর্শক হিসেবে। এই মুহূর্তে ক্যারিয়ারের ফর্মের চূড়ায় আছেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপের মত আসরে তাঁকে বাইরে থাকতে হচ্ছে- বড্ড অসহনীয় একটা ব্যাপার। তবে বেনজেমার মত এমন অনেক ফুটবল গ্রেটই এমন দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন। মূলত তাদের নিয়েই খেলা ৭১ এর আজকের আয়োজন। 

  • হুগো সানচেজ (মেক্সিকো) 

সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে আশির দশকে হুগো সানচেজের নামডাক বেশ ভালই ছিল। কিন্তু, সানচেজের বিশ্বকাপ ভাগ্য অতটাও ভাল ছিল না। তিনটা বিশ্বকাপ খেলেছেন বটে। এর মধ্যে ছিয়াশির বিশ্বকাপে একটি গোলও করেছিলেন তিনি।

কিন্তু, ক্যারিয়ার যখন দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে সেই ১৯৯০ সালে বাছাই পর্বের ধাক্কা পার করতে পারেনি সানচেজের মেক্সিকো। তাই সে বিশ্বকাপ আর খেলা হয়নি তাঁর। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে দলে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু সেবারের বিশ্বকাপে বেশিরভাগ সময় বেঞ্চে বসেই কাটিয়ে দিতে হয় তাঁকে। 

  • রাউল গঞ্জালেজ (স্পেন) 

রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তিদের তালিকা করতে বসলে রাউল গঞ্জালেজের নাম নিশ্চিতভাবেই আসবে। এমনি স্পেন ফুটবলেও ছিলেন বড় একটা নাম।

কিন্তু, স্পেনের সোনালি প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিল তাঁকে ছাড়াই। ২০০৮ আর ২০১২ ইউরো, মাঝখানে ২০১০ এ বিশ্বকাপ, কোনো শিরোপা জয়ের সময়েই রাউল গঞ্জালেজ দলে ছিলেন না। তাই স্পেনের হয়ে তাঁর শিরোপাও আর উঁচিয়ে ধরা হয়নি। 

  • আলফ্রেড ডি স্টেফানো (আর্জেন্টিনা ও স্পেন) 

ডি স্টেফানোর জন্ম আর্জেন্টিনায়। ১৯৪৭ সালে সেই আর্জেন্টিনার হয়েই তিনি কোপা আমেরিকা জেতেন। কিন্তু কনমেবলের সাথে একটি বিতর্কিত ইস্যুর কারণে তিনি পরবর্তীতে স্পেনে পাড়ি জমান। আর সেখানেই লালিগার নতুন সেনসেশন বনে যান স্টেফানো।

একই সাথে রিয়াল মাদ্রিদেরও বড় একটা নাম হয়ে ওঠেন। রিয়ালের হয়ে অনেক শিরোপাও জেতেন। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য! ১৯৫৮ এবং ১৯৬২, টানা দুইবারই তিনি ইনজুরির জন্য বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ে যান। ফুটবল ক্যারিয়ারটা তাই বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ না খেলেই কাটিয়ে দিতে হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি এ ফুটবলারকে।

  • জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ (সুইডেন)

সুইডেনের হয়ে সর্বোচ্চ ৬২ টি গোল করার রেকর্ড তাঁরই গড়া। কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপে কখনোই গোল পাননি ইব্রাহোমোভিচ। অবশ্য সুইডেনের হয়ে বিশ্বকাপ ম্যাচে খেলার সুযোগও পেয়েছেন কম । সুইডেনের হয়ে ২০০২ ও ২০০৬ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। কিন্তু, বয়সে তরুণ হওয়ায় ২০০২ বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে খেলারই সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র ৪৬ মিনিট। এরপরের বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচে ২০৭ মিনিট খেলেছিলেন অবশ্য।

ইব্রাহোমোভিচের সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল, ক্যারিয়ারে যখন দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন তখন সুইডেন বিশ্বকাপের বাছাই পর্বই পার করতে পারেনি। এ কারণে ২০০৬ বিশ্বকাপই হয়ে যায় তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ।

২০১৮ বিশ্বকাপে সুইডেন বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করলে ইব্রাহিমোভিচ অবসর ভেঙে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আর রাখা হয়নি তাঁকে। তবে এবারের বিশ্বকাপ দিয়ে ফিরে আসার সুযোগ ছিল ইব্রার। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের দলেও তিনি ছিলেন। কিন্তু এবারও সেই বাজে ভাগ্যের বলি দিতে হয় ইব্রাকে। আগের বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করলেও এবারের কাতার বিশ্বকাপে আর বাছাই পর্বের বাঁধা টপকাতে পারেনি সুইডেন।

  • মার্কো রিউস (জার্মানি)

দুর্ভাগ্য কাকে বলে, সম্ভবত সংজ্ঞা এবং এটার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারেন জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ফুটবলার মার্কো রিউস। ২০১৪ বিশ্বকাপ মিস করেছিলেন চোটের কারণে।

এরপর ২০১৬ ও ২০২০ ইউরোতেই সেই ইনজুরির কারণেই দলে জায়গা হয়েছিল না তাঁর। টানা দুর্ভাগ্যের সেই রেশ টেনে এনেছেন এবারও। এবারের বিশ্বকাপে সেই চোটের কারণেই আবারও তাঁর খেলা হচ্ছে না। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ৪ টি বড় আসর মিস করতে যাচ্ছেন তিনি।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link