সফল অধিনায়কদের ‘দুর্ভাগ্য’

জয় ও পরাজয় - সে তো মানবজীবনেরই অংশ। কিন্তু এই যে সাফল্যের একদম দোর গোঁড়ায় গিয়েও ব্যর্থ হওয়ার গ্লানিটা বোধহয় একটু খানি বেশিই পোড়ায়। বলছিলাম ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ক’জন অধিনায়কের কথা যারা ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন।

জয় ও পরাজয় – সে তো মানবজীবনেরই অংশ। কিন্তু এই যে সাফল্যের একদম দোর গোঁড়ায় গিয়েও ব্যর্থ হওয়ার গ্লানিটা বোধহয় একটুখানি বেশিই পোড়ায়। বলছিলাম ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ক’জন অধিনায়কের কথা যারা ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

কোন দেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। আমরা অস্ট্রেলিয়া দলের গ্রেট অধিনায়ক দুইবার বিশ্বকাপজয়ী রিকি পন্টিং, ভারতের ক্যাপ্টেন কুল খ্যাত মহেন্দ্র সিং ধোনি, কিংবা পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ইমরান খানের মতো অনেক সফল অধিনায়ককে দেখেছি। সফলদের সাফল্য গাঁথা তো সকলেরই জানা।

আসুন, আজ আমরা জানব এমন কজন অধিনায়কের কথা, যারা বিশ্ব ক্রিকেটে গৌরব অর্জনের খুব কাছাকাছি গিয়েও সাফল্য পাননি।

  • কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড)

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে লর্ডসের মাটিতে অনুষ্ঠিত অসাধারণ ‘গ্র্যান্ড ফিনালে’ কেউ ভুলতে পারেনি। যেখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে  নিউজিল্যান্ড শুধুমাত্র বাউন্ডারি গণনার ভিত্তিতে ট্রফি থেকে সরে এসেছে। কেন উইলিয়ামসন কিউইদের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড টানা দ্বিতীয় বারের মতো খেলেও ব্যর্থ হয় শিরোপা জিততে।

নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড উভয় দলই ২৪১ রান করলে ম্যাচ টাই হয়। ‘টাইব্রেকার’ হিসেবে সুপার ওভার অনুষ্ঠিত হয় সেটিও টাই হয়। মূল ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ১৭ টি বাউন্ডারি হাঁকায়, অন্যদিকে ইংল্যান্ডের বাউন্ডারি ছিল ২৬ টি বাউন্ডারি; ফলে বাউন্ডারি গণনা নিয়মে ইংল্যান্ড জয়লাভ করে। ম্যাচটিকে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বাধিক নাটকীয় হিসেবে ধরা হয়।

এরপর ২০২১ সালে কেন উইলিয়ামসন আরব আমিরাতের মাটিতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও একই দৃশ্য দেখেন। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে যায় তাঁর দল। যদিও, কাছাকাছি সময়ে তিনি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন।

  • সৌরভ গাঙ্গুলি (ভারত)

‘বেঙ্গল টাইগার’ সৌরভ গাঙ্গুলিও তার রাজত্বের পাঁচ বছরের নেতৃত্বে অনেক ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যের প্রমাণ রেখেছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনাল, যেখানে ভারতীয় দল ১২৫ রানের ব্যবধানে অজিদের কাছে নির্মমভাবে পরাজিত হয়েছিল।

এই বিশ্বকাপ পরাজয়ের কারণে ২০০৫ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের কাছে তার অধিনায়কত্ব হারাতে হয়েছিল। ফলে গাঙ্গুলি তার পুরো অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারে কোনো বিশ্বকাপ ট্রফি অর্জন করতে পারেননি। তবে, শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়াসুরিয়ার সাথে যৌথ ভাবে জিতেছেন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।

  • মাহেলা জয়াবর্ধনে (শ্রীলঙ্কা)

সৌরভ গাঙ্গুলির মতোই মাহেলা জয়াবর্ধনে তাঁর অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন বলে এই তালিকায় তার নাম রাখা হয়েছে। ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে  শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক জয়াবর্ধনের দল টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছেছিল। কিন্তু দলটি রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন দল অস্ট্রেলিয়ার হাতে পরাজিত হয়। এই বিপর্যয়ের পর  লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড দলের অধিনায়ক পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

তাঁর বদলে কুমার সাঙ্গাকারাকে দলের দায়িত্ব দেয়া হয়। যদিও, সেই ফাইনাল নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। পরের বিশ্বকাপে ২০১১ সালে কুমার সাঙ্গাকারার নেতৃত্বে খেলেও রানার আপেই সন্তুষ্ট হতে হয় শ্রীলঙ্কাকে।

  • ব্রেন্ডন ম্যাককালাম

ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, যিনি  বর্তমানে ইংলিশ দলের টেস্ট ফরম্যাটের প্রধান কোচ, তিনিও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ ২০১৫ এর ফাইনালে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন।

কিংবদন্তি ড্যানিয়েল ভেট্টরির বিদায়ের পর ম্যাককালাম দলের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন। ক্যারিয়ারের শেষটা ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ জিতে রাঙিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ভয়ডরহীন এই ক্রিকেটার – কিন্তু পারেননি।

  • বিরাট কোহলি

ভারতের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল ফরম্যাটে মহেন্দ্র সিং ধোনি’র পর বিরাট কোহলি অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সদ্য অধিনায়কত্ব থেকে সাবেক বনে যাওয়া বিরাট কোহলি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু বিরাটের নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি হলো তিনি অধিনায়ক থাকাকালীন সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট দল গুরুত্বপূর্ণ কোনো শিরোপা জিততে পারেনি।

তাঁর নেতৃত্ব ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারত গেলেও পাকিস্তানের কাছে বিশাল বড় ব্যবধানে হেরে ট্রফি খোয়াতে হয়। আবার ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতীয় দলকে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। একজন চমৎকার ক্রিকেটার এবং যোগ্য অধিনায়ক হওয়া সত্ত্বেও বিরাটের ভাগ্যরেখা ধরা দেয়নি। অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালও হারেন।

  • ইনজামাম উল হক ( পাকিস্থান)

ইঞ্জি ডাকনামে পরিচিত পাকিস্তানের সাবেক এই ক্রিকেটারকে পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা ব্যাটারদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল মেয়াদে তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। আর অধিনায়ক হিসেবেও তিনি সফলকাম।

ইনজামামকে সে দেশের সেরা অধিনায়কদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০০৭ সালে কোচ বব উলমারের রহস্যজনক মৃত্যুর পর পিসিবি তার থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নিলে দলের হাল ধরেন শহীদ আফ্রিদি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিখ্যাত ইঞ্জি তার সময়কালে দেখা পাননি কোন বিখ্যাত ট্রফির।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...