আমরা নুতন যৌবনেরই দূত

অবশেষে বহুপ্রতীক্ষিত ঐতিহাসিক ফাইনাল, দুই অবাছাই তরুণী, যারা কেউই এখনো বিশ বছর বয়সের গন্ডি টপকাননি, একজন ফাইনালে উঠেছিলেন ৩ জন প্রথম পাঁচে থাকা খেলোয়াড়কে হারিয়ে, আরেকজন কোয়ালিফাইং পর্ব থেকে টানা ৯ টি ম্যাচে একটিও সেট না হারিয়ে।

অবশেষে দুর্দান্ত ঘাতপ্রতিঘাতপূর্ণ ম্যাচে জয়লাভ করলেন এমা রাডুকানু, যিনি এই বছরেই উইম্বলডনে তাঁর প্রথম গ্রান্ড স্ল্যাম খেলেছেন! ফলাফল যতই দেখাক ৬-৪, ৬-৩; প্রায় শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। রাডুকানু বাছাই পর্ব থেকে নিয়ে একটিও সেট না হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন। এই জয়ের ফলে এই অষ্টাদশী উঠে এলেন বিশ্ব রাঙ্কিং ২৩ এ, বছরের শুরুতে যিনি ছিলেন ৩৪৬ নম্বরে এবং ইউএস ওপেন শুরুর আগে ১৫০ নম্বরে।

লায়লা ফার্নান্দেজ হেরে গেলেও, এই টুর্নামেন্টে তিনি যা করে দেখিয়েছেন তা অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হয়। তাই এই ফাইনালে দুজনেই কিন্তু সফল, জয়ী হয়তো একজন। কিন্তু কেউ ব্যর্থ নন। ভবিষ্যতের দুই তারকার হয়তো জন্ম হলো আর্থার আশে।

আশা করবো, ক্যারিয়ারের শুরুতেই এমন চোখ ধাঁধানো সাফল্য পেয়ে এই দুই তরুণীর ফোকাস নড়ে যাবে না। অতীতে আমরা দেখেছি, কম বয়সে সাফল্য পাবার পরে টেনিস ছেড়ে অন্যান্য দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে অনেক উদীয়মান তারকা হারিয়ে গেছেন।

ইউজিনি বুশার্ড এমন একজন, যাঁকে ভবিষ্যতের গ্রান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন ধরা হয়েছিল, কিন্তু মাত্র দু বছর প্রথম দশে থাকার পর মডেলিং ক্যরিয়ার শুরু এবং টেনিসে ব্যর্থতার পর ব্যর্থতা। মারিয়া শারাপোভা যেমন ক্যারিয়ারের শুরুতেই সেরিনা কে হারিয়ে উইম্বলডন জেতার পরে মডেলিং, স্পনসরশিপ, বিসনেস এইসবে বেশি মন দিতে গিয়ে সেভাবে আর ধারাবাহিকতা দেখতে পারলেন না, যদিও ৫ টি গ্রান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন তিনিও।

কোকো ভ্যান্ডেওয়েগ ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন এবং ২০১৭ তে ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে উঠে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন, কিন্তু তারপরে আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে সিমোনা হালেপ, স্ভিতোলিনা, কেরবার বা মুগুরুজার মতো সাবেক চ্যাম্পিয়ন অথবা প্রতিশ্রুতিমান তারকাদের একটু হলেও ফর্ম ও ধারাবাহিকতার অভাব আমরা দেখেছি। আশা করবো এমা রাডুকানু এবং লায়লা ফার্নান্দেজ নিজেদের ফোকাস টেনিসে ধরে রাখবেন এবং ভবিষ্যতে অনেক অনেক সাফল্য লাভ করবেন।

অপরদিকে পুরুষদের সিঙ্গেলস এ প্রত্যাশিতভাবেই ফাইনালে উঠলেন প্রথম এবং দ্বিতীয় বাছাই জোকোভিচ এবং মেদভেদেভ। মেদভেদেভ সহজেই স্ট্রেট সেট এ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আলিয়াসিম কে হারালেও, জোকোভিচ কে লড়াই করতে হয় ৫ সেট অবধি, এবং অবশেষে অলিম্পিক সোনাজয়ী দীর্ঘদেহী আলেক্সান্ডার জভেরেভকে হারিয়ে তিনি পৌঁছে যান ফাইনালে।

জোকোভিচ আবারো প্রমান করলেন, ফর্ম থাকুক বা না থাকুক, নিজের সেরা দিনে তাঁকে হারানো যেমন অসম্ভব, তাঁর খারাপ দিনেও তিনি লড়াই করে, কামব্যাক করে হারিয়ে দেবেন তার প্রতিপক্ষকে। নোভাক কে হারাতে পারেন একমাত্র তিনি নিজেই। তাই স্বচ্ছন্দে বলে দেওয়া যায়, ১৯৬৯ এর পরে, পুরুষদের সিঙ্গেলস এ আবার ক্যালেন্ডার স্ল্যাম হতে চলেছে। মেদভেদেভ বা জভেরেভ কে হয়তো আরো এক দু বছর অপেক্ষা করতে হবে গ্রান্ড স্ল্যাম জেতার জন্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link