অটি কাপ ও কানাডা-আমেরিকার ক্রিকেট দ্বৈরথ

ক্রিকেটের উৎপত্তি ইংল্যান্ডে সেটা সবাই জানে। সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা সবাই এক বাক্যে শিকার করবেন ক্রিকেট প্রথম জনপ্রিয় হয় ইংল্যান্ডে। কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে, ক্রিকেট সর্বপ্রথম বিকাশ হয় মার্কিন মুল্লুকে। হ্যাঁ, আমেরিকায়।

ক্রিকেটের উৎপত্তি ইংল্যান্ডে সেটা সবাই জানে। সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা সবাই এক বাক্যে শিকার করবেন ক্রিকেট প্রথম জনপ্রিয় হয় ইংল্যান্ডে। কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে, ক্রিকেট সর্বপ্রথম বিকাশ হয় মার্কিন মুল্লুকে। হ্যাঁ, আমেরিকায়।

আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কথা যদি আসে, তাহলেই ক্রিকেট সমর্থকরা এক বাক্যে শিকার করবেন প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিলো ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। কিন্তু জানেন, এই তথ্যটা ভুল না হলেও পুরোপুরি সত্যিও না।

সঠিক তথ্য হলো প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে, যদিও তাঁর কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। সেটি ছিলো দুই দেশের দুই ক্লাবের মধ্যে। কিন্তু ম্যাচটি অফিসিয়ালি স্বীকৃত না হওয়ায় সেটাকে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে গণ্য করা হয় না। তাই, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচকে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যাই হোক, ১৮৪৪ সালের সেই ঘটনা থেকে এখন ফিরে আসি এখনকার সময়ের এই যুগে। আবারো ক্রিকেট মাঠে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবার আর কোনো ক্লাব নয়, মুখোমুখি হবে দুই দেশের জাতীয় দল। যদিও, এই ম্যাচেরও কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই।

ক্রিকেটে সবচেয়ে পুরাতন এই  দ্বৈরথের নাম হলো অটি কাপ। অটি কাপের এইবারের আসর বসবে কানাডাতে। এই সিরিজে থাকবে পঞ্চাশ ওভারের তিনটি ম্যাচ। জুলাইয়ের ২৬ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত হবে এই দৈরথ। কানাডা স্বাস্থ্য কতৃপক্ষে সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে কানাডার কোন কোন ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে এই ম্যাচগুলো।

বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে কানাডার সরকার উওর আমেরিকার পেশাদার বিভিন্ন ক্রীড়া লিগের দলগুলো কানাডা আমেরিকা সীমান্ত নিয়মিত অতিক্রম করতে নিষেধ করেছে। এছাড়াও কানাডাতে কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম অনেক কঠোর হবার কারণে অনেক দেশই কানাডায় যেতে চাচ্ছে না। এই কারণেই ২০২০-২১ মৌসুমে এনবিএ এর দল টরেন্টো র‍্যাপটরস তাঁদের হোম ভেন্যু হিসেবে অস্থায়ী ভাবে ব্যবহার করছে ফ্লোরিডার টাম্পা শহরের একটি মাঠকে।

 

কানাডা সীমান্ত পেরানোর ঝামেলার কারণে মেজর লিগ বেসবলের দল টরেন্টো ব্লু ২০২০ মৌসুমে তাঁদের সকল হোম ম্যাচ খেলেছে নিউইয়র্কের বাফেলোতে। কানাডা থেকে ছাড়পত্র না পাওয়ায় ২০২১ মৌসুমে ফ্লোরিডার ডানেডিনে ইতিমধ্যে তাঁরা তাঁদের হোম ম্যাচ খেলা শুরু করে দিয়েছে।

যদি, টরেন্টোতে তাঁরা অনুমতি না পায় তাহলে আসন্ন গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে টরেন্টো ব্লু তাঁদের হোম ম্যাচ নিউয়র্কে খেলবে।  এছাড়াও এনএইচএল কতৃপক্ষ জানিয়েছে কানাডার সাতটি ফ্রাঞ্চাইজি একই বিভাগে অবস্থান করায়, তাঁদের কে সীমান্ত পার হতে হবে না। কিন্তু স্ট্যানলি কাপের বাছাই পর্ব খেলার জন্য আমেরিকা কানাডা সীমান্ত পার হতে হবে।

২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিলো কানাডাতে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বকাপ স্থগিত হওয়ার কারণে বাছাই পর্ব আর অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ২০২২ সালে। আর এই বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের সম নির্ধারণ করা হয়েছে এই বছরের জুলাইয়ের ১৭ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত। আর এর তিন দিন পরেই শুরু হবে কানাডা এবং মার্কিন আমেরিকার মধ্যকার অটি কাপ।

যাই হোক, সরকারি নিয়ম মেনে খোলা মাঠে এই টুর্নামেন্ট মানতে কোনো বাঁধা নেই। কিন্তু এর মধ্যে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন মানা বাধ্যতামূলক। কানাডার সরকারের সকল নিয়ম মেনে কোয়ারেন্টাইনের প্রথম তিন দিনের জন্য খরচ হবে এক হাজার ডলার। হোটেল ভেদে খরচ গিয়ে ঠেকতে পারে দুই হাজার ডলার।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের মতে, ফেব্রুয়ারিতে টরেন্টো কতৃপক্ষ জুলাই পর্যন্ত খোলা জায়গায় সকল ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছে। শুধু পেশাদার ক্রীড়া লিগের ম্যাচ গুলো আয়োজন করার অনুমতি দিয়েছে। আর এর জন্য কানাডা জনস্বাস্থ্য বিভাগ এবং শহর কতৃপক্ষের কাছে অনুমতি নিতে হবে।

সর্বশেষ ৩০ বছরে কানাডা বৃহত্তর টরেন্টোর বাইরে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করে নাই। সাম্প্রতিক সময়ে কানাডার ঘরের মাঠ হলো কিং সিটি, যার অবস্থান টরেন্টো থেকে ৫০ কিলোমিটার উওরে অন্টারিওতে । অন্টারিওর বাইরে সর্বশেষ অটি কাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৯১ সালে রিলে পার্কে। রিলে পার্কে থাকা উইকেট কৃত্রিমভাবে তৈরি।

অটি কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই দ্বৈরথ সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ২০১৭ সালে অন্টারিওতে। ১৯৯১ সালের আগে অটি কাপে কখনো কানাডাকে হারাতে পারেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিক্ষিপ্ত সময়ে এই টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়েছে। ১৯৯৫-২০১১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছর এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১১ সালের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্করণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অটি কাপ।

সময়ের সাথে সাথে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি,অ্যাশেজ, ট্রান্স তাসমিনিয়ান টুর্নামেন্টের মত এই টুর্নামেন্টও আলাদা অবস্থান তৈরি করবে এবং দুই দেশের ক্রিকেটের উত্তেজনা বাড়াবে এটাই আশা করতে পারি আমরা। আর এইভাবেই শুরু হোক ক্রিকেটে বিশ্বায়ন।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link