Social Media

Light
Dark

উসমান খাজা দ্য ওপেনার

আসলেন, দেখলেন, জয় করলেন। না দেখলেন না ঠিক খেললেন তারপর যথারীতি জয় করে নিলেন। অস্ট্রেলিয়ার মিডেল অর্ডার ব্যাটার উসমান খাজার ক্ষেত্রে প্রবাদ বাক্যের খানিকটা পরিবর্তন ঘটিয়ে ব্যবহার করাটাই যথার্থ। কি অসাধারণ দুই ইনিংস খেললেন খাজা।

একেবারে চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্স তাও আবার প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে। দলে এসেই এমন পারফর্মেন্স মুগ্ধ করেছে সবাইকে। কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজের শুরু থেকেই মিডেল অর্ডারের অজিদের ভরসার নাম ছিল মার্নাস লাবুশেন ও ট্রাভিস হেড।

দু’জন বেশ দূর্দান্ত পারফর্ম করেছেন প্রায় অধিকাংশ ম্যাচেই। কিন্তু চতুর্থ টেস্টের আগে বাঁধ সাধে কোভিড। আক্রন্ত হলেন হেড। অগ্যতা তাঁকে দলের জায়গাটা ছেড়ে দিতেই হলো। সেই জায়গায় চতুর্থ টেস্টে সুযোগ পান খাজা। ২০১৯ এর আগস্টে শেষ খেলেছিলেন খাজা অজিদের হয়ে। খুব একটা প্রত্যাশা হয়ত তাঁর উপর করেনি টিম অস্ট্রেলিয়া।

কিন্তু খাজা প্রমাণ করলেন নিজেকে। বাউন্সি উইকেটে ইংল্যান্ডের জেমি অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডের মতো বোলারদের সামলে দুই ইনিংসেই তুলে নেন শতক। প্রথম ইনিংসে ১৩৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১০১ রানে ছিলেন অপরাজিত। অভাবনীয় এক প্রত্যাবর্তন তা বলাই যায়। তার থেকেও বড় বিষয় অপ্রত্যাশিতভাবে ভাল খেলা।

সেই যে এক প্রশ্নের কথা বলছিলাম সেই প্রশ্নটার উত্তর অবশ্য এখন রয়েছে যে খাজা অ্যাশেজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলার সুযোগ পাবেন কিনা। কেননা ফর্মে থাকা ট্রাভিস হেড করোনামুক্ত হয়ে পুরোপুরি ফিট হয়েই অপেক্ষায় ছিলেন পরবর্তী ম্যাচে সুযোগের জন্যে। যেহেতু তাঁর পরিবর্তেই দলে এসেছিলেন খাজা, সুতরাং তাঁর বাদ পড়া নিয়েই প্রশ্ন জেগেছিল সবার মনে। দূর্দান্ত পারফর্মেন্সের পর তাঁকে দল থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হলে তা নিতান্তই এক পাপের সামিল। 

দারুণ দুশ্চিন্তার মাঝে অবশেষে অস্ট্রলিয়ার নবনিযুক্ত টেস্ট অধিনায়ক প্যাট কামিন্স জানিয়ে দিয়েছেন খাজা খেলবেন শেষ টেস্টে। বাদ যাচ্ছেন মার্কাস হ্যারিস। তরুণ এই ওপেনার খুব যে ভাল একটা ফর্মে রয়েছেন তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। যদিও তাঁর একার দোষ নয়। পুরো অ্যাশেজ জুড়ে দুই দলের ওপেনিং পার্টনারশীপ যে খুব একটা বড় হয়েছে তা নয়। তবুও ফর্মের তুঙ্গে থাকা খেলোয়াড়কে জায়গা করে দিতে হলে তো কাওকে না কাওকে বাদ পড়তেই হবে। এক্ষেত্রে নামটা মার্কাস হ্যারিস।

হ্যারিসের এই বাদ পড়াকে নিয়ে কামিন্স বলেন, ‘আমি মনে করি উজি (উসমান খাজা) ও ডেভি (ডেভিড ওয়ার্নার) তাঁরা দলে তাঁদের জায়গা অর্জন করে নিয়েছে। তবে বাস্তাবতা হচ্ছে তাঁদের বয়স ৩৫ বছর। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ওপেনার লাগবেই।’ এখন আরো একটা প্রশ্নের উদয় হতে পারে। উসমান খাজা তো ওপেনার নন। তিনি খেলবেন কি করে সেখানে?

মশাই আপনি হয়ত জানেন না খাজার ওপেনিং অভিজ্ঞতা রয়েছে। এটা না হয় নিতান্তই একটা তথ্য। কিন্তু চমকপ্রদ তথ্য এই পজিশনে তাঁর ব্যাটিং গড়। ৯৬.৮০। অসাধারণ, দূর্দান্ত, অভাবনীয়! একজন মিডেল অর্ডার ব্যাটারের ওপেনিং গড় দেখে এইসকল বিশেষণ একেবারেই অবধারিত। ওপেনিং পজিশনে খাজা খেলেছেন পাঁচটি ম্যাচ। এর মধ্যে সাতটি ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

দুইবার পার করছেন শতরানের গণ্ডি। শুরু যে পার করেছিলেন তা নয় পৌঁছে গিয়েছিলেন দেড়শ রানের কাছাকাছি। একবার করেন ১৪৫ আরেকবার ১৪১। তাছাড়া অর্ধ শতক পেরোনো ইনিংসও রয়েছে দুইটি। একটিতে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৮৫ ও আরেকটিতে ছিলেন ৭৯ রানে অপরাজিত।

সুতরাং খাজার উপর ভরসা রেখে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পঞ্চম টেস্টে দলের ব্যাটিং ইনিংসের ওপেনিং করার।  সাথে থাকছেন অভিজ্ঞ ডেভিড ওয়ার্নার। তাছাড়া যেহেতু খাজার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং সে নিজেকে ওপেনিং এ প্রমাণও করেছেন।

অতএব, তাঁকে নিয়ে খুব বেশি ঝক্কি হয়ত পোহাতে হবে না অস্ট্রেলিয়াকে। তবে মার্কাস হ্যারিসদের মতো তরুণদের আরেকটু সুযোগ দেওয়ার বিকল্পও নেই। তবে এটাও সত্যি ভাল পারফর্মেন্সের উপহার তো খেলোয়াড়েরা আশাই করতেন পারেন। 

এখন অপেক্ষা আগামী পাঁচ দিনের। শেষমেশ উসমান খাজা নিজেকে নতুন আরেকটি ব্যাটিং পজিশনে মানিয়ে নিতে পারেন কিনা। তবে অধিনায়ক কামিন্স বেশ আশাবাদী তাঁকে নিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘উজির (খাজা) ওপেনিং এ ব্যাট করা নিয়ে আমি বেশ আত্মবিশ্বাসী। সে একজন ক্ল্যাসি খেলোয়াড়। আর আমি এটাও বিশ্বাস করি যে তিনি যেকোন ব্যাটিং পজিশনের খেলতে বেশ পারদর্শী।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link