এখনও সেই পদ-ধোনি

শেষ চার বল, প্রয়োজন ১৬ রানের।

স্ট্রাইকে মহেন্দ্র সিং ধোনি। ক্রিকেট দুনিয়ার অন্যতম সেরা এই ফিনিশারের জন্য এই রান খুব বেশি কিছু নয়। কিন্তু বয়সের ভারে আগের সেই ফর্মটা নেই। ধোনির সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় গুটিকয়েক সমর্থক ছাড়া কারোই হয়ত প্রত্যাশা ছিল না এই ম্যাচে ধোনি জেতাতে পারবেন। আগের সেই বিধ্বংসী রূপে ম্যাচটা জিতিয়ে মাঠ ছাড়বেন সেই ধারণা হয়ত মনে মনেও কেউ পোষণ করেননি। কিন্তু সবার প্রত্যাশা ছাপিয়ে বহুদিন পর দেখা মিলল সেই চিরচেনা ধোনির।

জয়দেব উনাদকাতের পরের চার বলে – ছয়, চার, দুই ও চার! চার বলে ১৬ রান নিয়ে দলকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল চার রানের। সেখান থেকে ফাইন লেগের উপর দিয়ে শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রোমাঞ্চকর এক জয় তুলে নেয় ধোনি।

আইপিএল ইতিহাসে শেষ চার বলে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ডে এটি আছে চতুর্থতে। তৃতীয় নামটিও ধোনির! ২০১৬ সালে রাইজিং পুনে সুপার জায়েন্টসের হয়ে শেষ ওভারে অক্ষর প্যাটেলের শেষ ৪ বলে ১৬ রান নিয়ে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়েছিলেন ধোনি।

অবশ্য উনাদকাতকে পেলেই যেন ব্যাট হাতে ফু্ঁসে উঠেন ধোনি। আইপিএলে এখন পর্যন্ত উনাদকাটের বিপক্ষে খেলা ৪৩ বল থেকে ধোনি আদায় করেছেন ১০৫ রান! ৮ চার ও ৭ ছক্কার পাশাপাশি ব্যাট হাতে স্ট্রাইক রেট ২৪৪ এর বেশি। ২২ গজে উনাদকাটের যমদূর যেখানে ধোনি সেখানে শেষ ওভারে তাঁকে বোলিংয়ে এনে যেন চেন্নাইকে ম্যাচটি উপহার হিসেবেই দিয়ে দিয়েছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিত শর্মা।

বয়সটা এখন ৪১ ছুঁইছুঁই। এই বয়সে গুটিকয়েক বাদে সব ক্রিকেটারই ব্যাট-প্যাড উঠিয়ে রেখে কোচিং কিংবা অন্য কাজে যোগ দেন। কেউ আবার পরিবারকে নিয়ে বাকি জীবনটা আরামে কাটাতে চান। সেই বয়সেই ব্যাট হাতে ২২ গজে বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখাচ্ছেন ধোনি। ব্যাট হাতে সেই পুরনো, চিরচেনা, আগ্রাসী ধোনির দেখা মিলল বহুদিন বাদে।

 

‘ধোনি ফুরিয়ে গেছেন’ – এমনটা মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ম্যাচের আগেও কেউ অস্বীকার করেছে বলে মনে হয় না। অবশ্য অস্বীকার করার কারণও নেই। ২০২০ আসরে ১৪ ম্যাচে মাত্র ২৫ গড়ে ২০০ রান। ২০২১ আসরে ১৬ ম্যাচে মাত্র ১৬ গড়ে ১১৪ রান। গেল দুই আসরের গড় স্ট্রাইক রেট ১১১ প্রায়! নেই কোনো ফিফটি। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন সেটাও শরীরি ভাষায় স্পষ্ট। আগের দুই আসর মিলিয়ে ছক্কার সংখ্যা মোটে দশটি।

ধোনির সমর্থকরাও চাচ্ছিলেন ক্রিকেটকে বিদায় দিয়ে এখন তরুণদের গড়ে তুলতে ভারতীয় ক্রিকেটে কোচ হিসেবে যোগ দিন ধোনি। ধোনির এমন হতাশাজনক মুখটা কেউ মেনে নিতে পারছিলেন না। মারতে গিয়ে উইকেট দিচ্ছেন, ব্যাটে-বলেও ঠিকভাবে হচ্ছে না। ক্যারিয়ারের শেষ মূহুর্তে এসে সমালোচনার বাক্সে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন তিনি।

তবে ক্যারিয়ারের অন্তিম মূহুর্তে আবার দেখা মিলল ক্রিকেট দুনিয়ার অন্যতম সেরা সেই ফিনিশারের বিধ্বংসী রূপটা। ধোনির ব্যাটে সেই পুরনো ঝড়। আসরের প্রথম ম্যাচেই খেলেছিলেন ৩৮ বলে ৫০ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে ৬ বলে ১৬ রানের ক্যামিও। তৃতীয় ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে অবশ্য ২৮ বলে ২৩ রানের ধীরগতির এক ইনিংস খেলেন তিনি। এরপরের দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ হয়নি। কিন্তু গেল রাতে আইপিএলের ‘এল ক্ল্যাসিকো’ মুম্বাই-চেন্নাই লড়াইয়ে ধোনির আগ্রাসনে উড়ে যায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।

ধোনির ১৩ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ রানের ক্যামিওতে ৩ উইকেটের রোমাঞ্চকর এক জয় পায় চেন্নাই সুপার কিংস।

অনেকের মতেই তিনি ফুরিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি যে ফুরিয়ে যান নি সেটার প্রমাণ দিলেন ব্যাটে বলেই। ধোনির ব্যাটে দেখা মিলল ফিনিশিং জাদুর। নিষ্প্রভ ধোনি অবশেষে সমর্থকদের মাতালেন উল্লাসে। ফিনিশার ধোনি নিজে এখনও ফিনিশ হননি, প্রতিপক্ষকে ফিনিশ করছেন এই বয়সেও!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link