জন্মদিনেই ঈশ্বরের ছোঁয়া পেলেন বিরাট

নিজের জন্মদিনের জন্যেই সম্ভবত তুলে রেখেছিলেন। ক্রিকেটের পুন্যভূমিতে দাঁড়িয়ে ছুঁয়ে দেখলেন ক্রিকেটের মহামানবকে। শচীন টেন্ডুলকারের ৪৯টি ওয়ানডে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেললেন। যেই ইডেন গার্ডেন্সে নিজের প্রথম শতক, সেখানেই এলো বহু প্রতিক্ষিত ৪৯তম শতক। ৩৫ তম জন্মদিনটি নিজস্ব ভঙ্গিমায় উদযাপনের রাস্তা খুঁজে নিলেন বিরাট কোহলি।

জন্মদিন রাঙিয়ে রাখতে কতজনের কত আয়োজন। তবে যার ধ্যানজ্ঞান শুধুই ক্রিকেট, তাকে কি আর জন্মদিনেও ক্রিকেট থেকে আলাদা করা যায়! তাইতো কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে নিজের জন্মদিন নিজ হাতেই উদযাপন করলেন বিরাট কোহলি। আকাশ পানে হাত উঁচিয়ে আরও একবার জানান দিলেন নিজের শ্রেষ্ঠত্বের।

খুব কাছে গিয়েও সেঞ্চুরি থেকে গিয়েছিল অধরা। খুব কাছে তবুও যেন যোজন দূরে অবস্থান শচীনের। তাকে ছুঁয়ে ফেলার একটি সেঞ্চুরি যেন আসি আসি করেও আসছিল না। অবশেষে সে অপেক্ষার প্রহর ফুরিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন বিরাট কোহলি। তাতেই এখন তার অবস্থান মাস্টার ব্লাস্টার শচীনের পাশে।

তবে এই সেঞ্চুরিটা করতে বেশ কষ্টই হয়েছে কোহলির। ব্যাট হাতে সাবলীল ছিলেন না পুরোটা সময় জুড়ে। তাতে অবশ্য উইকেটের দোষটাই বেশি। তবুও বিরাট মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন। তাতে অবশ্য চাপ বাড়েনি ভারতের উপর। রোহিত শর্মার আগ্রাসী শুরুতে ‘ফ্লাইং স্টার্ট’ পেয়েছিল ভারত। তবে হুট করেই দুই ওপেনারের বিদায়ে খানিকটা চাপে পড়ে যান বিরাট কোহলি।

সেই চাপ খানিকটা শ্রেয়াস আইয়ারও উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। কিন্তু যতক্ষণ বিরাট ব্যাট হাতে বাইশ গজে থাকেন, তখন ভারত থাকে নির্ভার। স্নায়ুচাপ কেবল বিদায়ের অপেক্ষায় থাকে। সেটাই হয়েছে আরও একবার। দারুণ শুরুটা মলিন হতে দেননি বিরাট কোহলি। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে সময়ের প্রয়োজন মেনে রান তুলেছেন শ্রেয়াসও।

দুই জনের যুগলবন্দী জমে ওঠে বেশ। সে জুটি পথভ্রষ্ট হতে দেয়নি ভারতকে। যদিও ইনিংসের যখন এক তৃতীয়াংশ শেষ, তখন থেকেই উইকেট বিরুপ আচরণ করতে শুরু করে। খুব একটা স্বচ্ছন্দে বল ব্যাটের কাছে আসতে নারাজ। এমন এক পরিস্থিতিতে দারুণভাবে পরিস্থিতি সামলে ব্যাট করতে থাকেন বিরাট কোহলি।

আগ্রাসনহীন, স্রেফ ক্ল্যাসিক এক ইনিংস। বড় সব বাউন্ডারি হাঁকানোর নেই কোন তাড়া। ১০১ রানে অপরাজিত থাকা ইনিংসটিতে চারের মার মাত্র ১০টি। বাকি ৬১ রান তিনি নিয়েছেন দৌড়ে। ক্রিকেট ময়দানে দাপিয়ে বেড়াবার বয়সটা পেছনে ফেলে আসার কথা। তবে বিরাটকে দেখলেই যেন মনে হবে তিনি চিরতরুণ। তার ফুসফুস যেন কিশোর বয়সের মতই বড় হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে স্বপ্নের অক্সিজেন দিয়ে পূর্ণ।

বিরাট কোহলি ১২১ বল খেলেছেন তার ৪৯ তম ওয়ানডে শতকের দিনে। চাক্ষুস প্রমাণ ছাড়া সবাই হয়ত ধরে নেবে এ কেমন বিরাট! তবে বিরাটের এই শতকের মাহাত্ম্যও আসলে এক ছটাক কম নয়। অন্তত বিরাটের বিরাট ক্যারিয়ারে আরও একটি রেকর্ড ছোঁয়ার ইনিংসটি মামুলি হতে পারে না।

এখন তবে শুরু হল নতুন অপেক্ষা। ৫০ তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির অপেক্ষা। কিং কোহলির সত্যিকার অর্থেই রাজা হওয়ার অপেক্ষা। নিশ্চয়ই এই দফা খুব অপেক্ষা করাবেন না করাবেন না কোহলি। সবাইকে ছাপিয়ে যাওয়ার তীব্র ক্ষুধাই তো বিরাটকে আজ বিরাট বানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link