শত উৎসবেও একটু আঁধার

রাহুল দ্রাবিড়, শচীন টেন্ডুলকারদের দেখেই বড় হয়ে উঠেছেন। এদের সবার কাছ থেকে আগেই শুভেচ্ছা পেয়েছেন। আর আজ সেই স্বপ্নের নায়ক রাহুল দ্রাবিড়ের কাছ থেকেই পেলেন স্বপ্নের শততম টেস্টের স্মারক ক্যাপ। নতুন এক উচ্চতায় উঠলেন বিরাট কোহলি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্যাবাইনা পার্কে টেস্ট দিয়ে সাদা পোশাকে অভিষেক। কিন্তু অভিষেক সিরিজটায় ব্যাট হাতে ছিলেন একেবারেই সাদামাটা। তিন টেস্টে করেছিলেন মোটে ৭৬ রান। পরের সিরিজেই দল থেকে বাদ পড়েন! তবে ব্যর্থতার গল্পটা শেষ সেখানেই। এরপর ১১ বছরের দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন সেরাদের শীর্ষে। ১১ বছর নিজের ধৈর্য্য, পরিশ্রম আর সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে নিজের শততম টেস্ট খেলছেন বিরাট কোহলি।

মোহালিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে ক্যারিয়ারের শততম টেস্টে পা দিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ১২তম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন বিরাট। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের পর কেটে গেছে প্রায় ১১ বছর। আর এই ১১ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি স্পর্শ করেছেন একশো টেস্টের মাইলফলক।

৭১তম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি টেস্টে একশো ম্যাচ খেলার কীর্তি গড়েছেন। সবশেষ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন প্রায় বছর দুয়েক আগে। দীর্ঘসময় ধরেই ক্রিকেট বিশ্ব অপেক্ষায় বিরাটের ৭১তম সেঞ্চুরি দেখার। কিন্তু কাছে গিয়েও বেশ কয়েকবার হোচট খেয়েছেন এই তারকা। তাই ভক্তদের প্রত্যাশা নিজের শততম টেস্টেই হয়তো ব্যাট হাতে দেখা মিলবে বিরাটের ৭১তম সেঞ্চুরির। কিন্তু সিরিজের প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪৫ রানেই আউট হয়েছেন বিরাট। লাসিথ এম্বুলডেনিয়ার বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ৭৬ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৪৫ রান করেন এই তারকা।

নিজের শততম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও সেঞ্চুরি খরার আক্ষেপটা ঘুচাতে পারেননি বিরাট। প্রথম ইনিংসে ফিরেছেন হাফ সেঞ্চুরির আগেই। তবে প্রত্যাশা এখনো শেষ হয়নি, দ্বিতীয় ইনিংসে হয়তো আবারও বিরাটের সেঞ্চুরির অপেক্ষায় প্রহর গুনবেন ভক্ত-সমর্থকরা।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগে বিরাটের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে শততম টেস্ট ম্যাচের ক্যাপ তুলে দেন বর্তমান হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়। এসময় মাঠে বিরাটের পাশেই উপস্থিত ছিলেন বিরাটের অর্ধাঙ্গিনী আনুশকা শর্মা। বিরাটের শততম টেস্টের সাক্ষ্যি হতে মোহালিতে আছেন ভাই সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। শততম টেস্ট ক্যাপ হাতে পাওয়ার পর উচ্ছ্বসিত বিরাট জানালেন আইপিএলের যুগে একশো টেস্ট খেলতে পেরে তিনি সত্যি আনন্দিত। বিরাট বলেন, ‘এটা আমার জন্য সত্যি দারুণ একটি মুহূর্ত। আমার স্ত্রী এখানে আছে, আমার ভাইও আছে। সবাই খুব গর্বিত বোধ করছে। ক্রিকেট হলো দলের খেলা। সতীর্থদের ছাড়া এটা কখনো সম্ভব হতো না অবশ্যই। বিসিসিআইকে অনেক ধন্যবাদ। ‘

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তিন সংস্করণে অনেক ম্যাচ খেলি, পাশাপাশি আইপিএলে খেলি। তরুণরা চাইলে আমার কাছ থেকে শিখতে পারে, এতো কিছুর পরও ক্রিকেটের সবচেয়ে বিশুদ্ধ সংস্করণে আমি ১০০ ম্যাচ খেলছি।’

ব্যর্থতার চাঁদরে মোড়ানো অভিষেক সিরিজ থেকে এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি বনে গেছেন ‘মর্ডান ডে লিজেন্ড’ হিসেবে। তিন ফরম্যাটেই যার ব্যাটিং গড় ৫০-এর উপরে! প্রায় সাত বছর অধিনায়ক হিসেবে ভারতকে নিয়ে গেছেন সফলতার শীর্ষে। বিরাটের অধীনেই টানা পাঁচ বছর ভারত টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থেকে এই ফরম্যাটে রাজত্ব করেছে। দলগতভাবে বড় কোনো শিরোপা জয় করতে না পারলেও বিরাট নিজেকে নিয়ে গেছেন টেস্ট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়কের কাতারে।

স্যাবাইনা পার্ক থেকে মোহালি – বিরাটের এই দীর্ঘ যাত্রায় তিনি সফল। তবুও প্রত্যাশার কমতি নেই এই তারকার কাছ থেকে। প্রায় দু’বছর ধরে দেখা নেই সেঞ্চুরির। ব্যাট হাতে চিরচেনা বিরাটের দেখাও যেনো মিলছে না লম্বা সময়। অধিনায়কত্ব বিতর্ক, বোর্ডের সাথে দ্বন্দ্ব, সেঞ্চুরি খরা – সব মিলিয়ে বিরাট যেনো কিছুটা ব্যাকফুটেই ছিলেন। তবে এই শততম টেস্ট হয়তো বিরাটের জন্য হতে রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের সেরা মঞ্চ এমনটাই ভাবছিলেন সমর্থকরা। প্রথম ইনিংসে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও সময়ের অন্যতম সেরা এই তারকা আবার সেঞ্চুরির ধারায় ফিরবেন, ২২ গজে আবারও দেখা যাবে বিরাটের সেই আগ্রাসী রুপ – এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link