কোহলি ও বিরাট দুর্দশার ২০২১

করোনার প্রকোপে হটাৎ থমকে গিয়েছিলো পুরো বিশ্বই। এরপর ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হলো। কিন্তু ব্যাট অদম্য গতিতে ছুঁটতে থাকা বিরাট কোহলি হটাৎ কেনো যেন থমকে গেলেন! হাসিমুখে ২২ গজের লড়াইটা সহজে জয় করে নেওয়া সেই বিরাট যেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।

দু’বছর আগেও ভাবা হচ্ছিলো শচীন টেন্ডুলকারের একশো সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দিবেন সহজেই। সেঞ্চুরিকে পরিণত করেছিলেন অভ্যাসে। ঠিক এরপর প্রায় দু’বছর ধরেই সেঞ্চুরির দেখা নেই। সে নিয়ে অবশ্য আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। নামটা বিরাট কোহলি বলেই কিনা সেঞ্চুরি নিয়ে এতো আলোচনা! রঙিন পোশাকে ধারাবাহিক রানে থাকলেও সেঞ্চুরি না পাওয়ায় এতো আলোচনা। বিরাটের মাহাত্ম্যটা এখানেই।

করোনার প্রকোপে পুরো পৃথিবীর সাথে সাথে যেন নিষ্প্রভ হয়ে গেছেন বিরাটও। অভিষেকের বছর ছাড়া সাদা পোশাকে গত দুই বছরে আছেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে ফর্মে। গেলো দুই বছরে ১৩ টেস্টে করেছেন মাত্র ৫ ফিফটি! ২৪ এর কাছাকাছি গড়ে রান সংখ্যা মাত্র ৫৯৯! চলতি বছর ডাক মেরেছেন ৪ ইনিংসে!

তবে বিপরীত চিত্র সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে। ওয়ানডেতে গেলো দুই বছরেই চল্লিশের উপর গড়ে রান করেছেন তিনি। যদিও বিগত বছর গুলোর রেকর্ড অনুযায়ী ব্যাটিং গ্রাফটা অনেকটাই নিচে নেমে এসেছে। ওয়ানডেতে শেষ ১২ ম্যাচে আছে ৫ ফিফটিও। টি-টোয়েন্টিতেও আছেন উড়ন্ত ফর্মে। চলতি বছর ১০ ম্যাচে ৪ ফিফটিতে ৭৫ গড়ে প্রায় ৩০০ রান করেছেন বিরাট। সেঞ্চুরি না পেলেও রঙিন পোশাকে রানের ধারাতেই আছেন তিনি।

তবে কাঠগড়ায় বিরাটের অধিনায়কত্ব সহ দলীয় পারফরম্যান্স। আর এর প্রভাবটা পড়েছে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও। চলতি বছর জুলাইয়ে বাবর আজমের কাছে ওয়ানডে ব্যাটিং র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান হারান তিনি। বাজে পারফরম্যান্সে টেস্টে র‍্যাঙ্কিংয়েও নেমে যান ছয়ে। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে এমন অবনতিতে প্রশ্ন উঠে অধিনায়কত্ব বিরাটের জন্য চাপ হয়ে দাঁড়ায়নি তো?

আইসিসি ইভেন্টে বিরাটের ব্যর্থতা নিয়েও ছিলো সমালোচনা। এরপর চলতি বছর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হারায় যেনো সমালোচনার পাল্লাটা আরো ভারী হলো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আরব আমিরাতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় বিরাটের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের পর বিরাট জানান আইপিএলে তিনি আর অধিনায়কত্ব করবেন না। গুঞ্জন ছিল টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব থেকেও সরে দাঁড়াতে পারেন তিনি।

এরপর সব ভুলে বিরাটের নেতৃত্বে আরব আমিরাতের মাটিতে বিশ্বকাপ মিশনে নামে ভারত। শক্তিশালী স্কোয়াড নিয়ে বিশ্বমঞ্চে আসা ভারতের লক্ষ্যটা ছিলো শিরোপা জয়। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় বিরাট কোহলির দল। বিশ্বকাপের পর পরই টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান বিরাট। কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন ব্যাটিংয়ে আরো মনযোগী হতে যান তিনি। এরপর টি-টোয়েন্টিতে নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান রোহিত শর্মা।

এরপরই নিউজিল্যান্ড সিরিজ! নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষ হতেই হটাৎ মিডিয়ায় হেডলাইন ওয়ানডেতে ভারতের নতুন অধিনায়ক রোহিত শর্মা! বিরাট কোহলি কি তাহলে ওয়ানডে থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন? নাকি তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে! খানিকটা জলঘোলা হবার পর জানা গেলো বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) ও টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরাটকে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়।

এর জন্য তাঁকে ৪৮ ঘন্টার সময়ও দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেননি বিধায় তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে বিসিসিআই থেকে জানানো হয় গণমাধ্যমকে। মূলত সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে একজন অধিনায়ককে রাখার লক্ষ্যেই এমন সিদ্ধান্ত বলেও জানানো হয় বিসিসিআই থেকে।

গেল দু’বছর ধরে সেঞ্চুরি খরা তো আছেই। এর উপর গেলো ৬ মাসে র‍্যাংকিংয়ে নিজের অবনতি, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হার, বিশ্বমঞ্চে ভরাডুবি, টেস্টে বাজে পারফরম্যান্স, অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি – ক্যারিয়ারের শেষ ভাগে এসে বিরাট যেনো আটকে গেছেন কোনো এক অদৃশ্য কালো ছায়ার বাঁধনে। এসব কি আরো বাজে ভাবে প্রভাব ফেলবে বিরাটের ক্যারিয়ারে? নাকি সবকিছু পাশ কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন বিরাট।

অবাক করা ব্যাপার হলো গেলো দেড়-দুই বছর ধরে তিনি সবচেয়ে বাজে সময় পার করছেন টেস্টে। আর অধিনায়কত্ব হারাতে হলো সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে। সাফল্যের চূড়ায় অদম্য গতিতে ছুঁটতে থাকা বিরাটের নৌকা হঠাৎ পালে হাওয়া লেগে যেনো উল্টো পথে মোড় নিয়েছে। গেলো ৬ মাসের বিভিন্ন নেতিবাচক বিষয় কি বিরাটের ক্যারিয়ারে আরো বাজে প্রভাব ফেলবে? নাকি সবকিছু পাশ কাটিয়ে তিনি ঘুরে দাঁড়াবেন।

আবার কি দেখা যাবে সেই চিরচেনা বিরাটকে। ২২ গজে রানের ফোয়ারা তুলবেন আবারো সেটাই প্রত্যাশা সমর্থকদেরও। আবারও বলছি নামটা বিরাট কোহলি বলেই হয়তো সবার প্রত্যাশার পারদটা সবসময়ই একটু উপরে। ক্যারিয়ারে এতো খারাপ সময়ও এর আগে আসেনি।

বিরাট যে গতিতে ছুঁটছিলেন কেউ হয়তো ভাবেনি তিনি হঠাৎ এভাবে চাপের মুখে পড়বেন। তবে সবার প্রত্যাশা ‘রান মেশিন’ দ্রুত নিজের স্বরুপে ফিরবেন। টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভাঙার রাস্তাটা এখন বহুদূরে। তবে ক্যারিয়ারের শেষটা হোক চিরচেনা বিরাটময় সেটাই সবার প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link