ব্যক্তিগত মোহের ঊর্ধ্বে তিনি

ধরুন, আপনি ব্যক্তিগত ৪৯ রানের রানে দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু নন স্ট্রাইকার প্রান্তে। একটি হাফ সেঞ্চুরি নিজের ঝুলিতে ভরার সম্মান থেকে মাত্র এক রান দূরে আছেন। এমন সময় আপনার মাঠের পার্টনার এসে যদি আপনাকে অফার করে কৌশলে এক রান নিয়ে আপনাকে স্ট্রাইকে পাঠাবে, যাতে আপনি হাফ সেঞ্চুরিটি ছুঁতে পারেন। আপনি কি করবেন?

বেশিরভাগ ব্যাটার এক্ষেত্রে সুযোগটি লুফে নিতো। আর দলের রান যখন ২০০ ছাড়িয়ে গেছে, তখন এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও নয়। এমনিতেও একজন ব্যাটারের জন্য হাফ সেঞ্চুরি করাটা দারুণ ব্যাপার, আর কথা যখন হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ক্ষেত্রে তো তা সোনায় সোহাগা। কিন্তু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিতে এমন সুযোগ পেয়েও, তাঁকে লুফে না নিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করলেন বিরাট কোহলি।

ক্রিকেটে ব্যাটাররা কেউ কেউ খেলে নিজের জন্য, আবার কেউ কেউ দলকে প্রাধান্য দিয়ে কেবল দলের জন্যই খেলে। বিরাট কোহলি গেল ম্যাচে কেবলই দলের জন্য খেলেছেন। নইলে কেইবা টি- টোয়েন্টিতে একটি ফিফটি হাতছাড়া করার লোভ সংবরণ করতে পারবে! অন্তত বিরাট পেরেছেন। এবং বিরাটের এমন মনোভাব কোটি কোটি ভক্তের মন জয় করে নিয়েছে।

বৃষ্টি বিলম্বিত ম্যাচটিতে ভারত প্রথমে ব্যাট করতে নামে। এরই মাঝে মাঠে সাপের উপস্থিতির জন্যও খেলা কিছুটা বিলম্বিত হয়। যাই হোক ম্যাচটিতে লোকেশ রাহুলের ২৮ বলে ৫৭ রানে ভর করে দুর্দান্ত শুরু করে তাঁরা। ম্যাচের নায়ক সুরিয়াকুমার যাদব ২২ বলে করেন ৬১ টি রান। তিন নম্বরে নামা বিরাট কোহলি নিজেও দারুণ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। ১৮.১ ওভারে সুরিয়াকুমার সাজঘরে ফিরলে বিরাট কোহলি এবং দীনেশ কার্তিক জুটি গড়েন।

একেবারে শেষ ওভারে বিরাট নন স্ট্রাইকার প্রান্তে। তাঁর ব্যক্তিগত স্কোর ৪৯ রান। স্ট্রাইকে থাকা দীনেশ কার্তিক এসে ওভারের পঞ্চম বলে এসে বিরাটকে প্রস্তাব দিলেন এক রান নিয়ে প্রান্ত বদল করার। যাতে করে বিরাটের অর্ধশতকটি পূর্ণ হয়। কিন্তু বিরাট মাথা নেড়ে প্রস্তাবে অসম্মতি জানান এবং কার্তিককে স্ট্রাইকে তাঁর স্বভাবসুলভ খেলাটা চালিয়ে যেতে বলেন।

ফলে শেষ ওভারে বিরাট একটি বলও খেলতে পারেননি। আর দীনেশ কার্তিক বরাবরের মতো আক্রমণাত্মক ফিনিশারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং শেষ ওভারে ১৮ টি রান দলের রানের খাতায় যোগ করেন। আর বিরাট ৪৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। শেষ পর্যন্ত ভারতের স্কোর ২৩৭/৩ এ দাড়ায়। বিরাটের এমন মনোভাব তাঁকে দারুণ প্রশংসায় ভাসাচ্ছে। ভারত ১৬ রানের দারুণ এক জয় পেয়ে ২-০ তে সিরিজটিতে অগ্রীম জয় তুলে নেয়।

গত মাসে এশিয়া কাপ দিয়ে ফর্মে ফিরছেন কোহলি। গত দশটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে বিরাট কোহলি তিনটিতে অর্ধ সেঞ্চুরি এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি তুলে নেন। সবকিছু ঠিক থাকলে কালকের ম্যাচেও একটি অর্ধশতক করে ফেলতে পারতেন।

ফর্মে ফেরার আগে বলতে গেলে বিরাটকে ভারতীয় দল দীর্ঘসময় ধরে সমর্থন করে গেছে। কোহলি ফর্মে ছিলেন না, তাঁর দলে থাকা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার তোয়াক্কা না করে, ম্যানেজমেন্ট তাঁকে প্রায় দীর্ঘ দুই বছর ধরে সুযোগ দিয়ে গিয়েছে। সুযোগ পেয়েছেন বলেই কোহলি তাঁর পুরোনো রূপ, আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে আরেকবার নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছেন।

তাই সম্ভবত দলের উপর তুষ্ট থাকারই কথা। সুযোগমতো ঠিকই দলকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিদানটা দিলেন। দল যেমন দু:সময়েও তাঁর উপর ভরসা হারায়নি, তিনি তাঁর সুসময়েও তাই দলকে সামনে রেখে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে চাইবেন। কোহলির মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের থেকে এমন আচরণ আশা করাই যায়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link