ম্যানচেস্টার মাস্টারক্লাস

ওই শতাব্দীর সেরা ইনিংস তো বটে, ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ভিভের ১৮৯ রানের ইনিংস। ওভার শেষ হয়ে যাওয়ায় সেদিন কাছে গিয়েও ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়তে পারেননি ভিভ। অবশ্য সেই সুযোগটা বছর তিন বাদে আবার হাতছানি দিচ্ছিল ভিভের সামনে।

মাত্র ১৭ রানে ৫ উইকেট! তাও কি-না বিশ্বকাপের মঞ্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে? যেন মানতেই পারলেন না ভারতের অধিনায়ক কপিল দেব। গোসল না সারতেই দ্রুত মাঠে নামতে হল। এরপর সেখান থেকে খেললেন ১৭৫ রানের হার না মানা এক অবিশ্বাস্য ইনিংস। ওয়ানডে ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন। ৭ উইকেটে ৭৮ থেকে কপিল দেবের তাণ্ডবে ৮ উইকেটে ২৬৬ রান করেছিল ভারত। কপিলের ১৭৫ রানের সেই ইনিংসটি স্মরণীয় হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়।

এর প্রায় বছর খানেক বাদে ম্যানচেস্টারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে মুখোমুখি ইংল্যান্ড। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১ রানেই নেই দুই ওপেনার। রিচি রিচার্ডসনকে নিয়ে খানিকটা সময় ভীত গড়ার চেষ্টা করলেন ভিভ রিচার্ডস। তবে ভীত শব্দটার ব্যবহার রিচার্ডস ছাড়া কেউই দেখাতে পারেননি। একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিল দেখছিলেন এই কিংবদন্তি তারকা। যেন এক টিকিটে ঘন্টাখানেকের এক সিনেমা সবাই মিলে ভাগবাটোয়ারা করে দেখছেন।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছে। রিচার্ডস ছাড়া বাকিরা রান তুলতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন। ৯, ১, ৬, রিচার্ডস*, ৪, ৮, ০, ৪ – এই ছিল প্রথম সাত ব্যাটারের ব্যক্তিগত রান। রিচার্ডস বাদে প্রথম সাত জনের কেউই ছু্ঁতে পারেননি দুই অঙ্কের কোটা। রিচার্ডসের কল্যাণেই তিন অঙ্ক স্পর্শ করে ক্যারিবীয়রা। এক পর্যায়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১০২ রান।

ধসের মুখে পড়া ম্যানচেস্টারে এই ম্যাচটা পরবর্তীতে জিতে নেয় ক্যারিবিয়ানরা! তাও কি-না ১০৪ রানে। হ্যাঁ, ১০৪ রানে জয় পাওয়াটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু ১০২ রানে ৭ উইকেট হারানো দলটা ওই ম্যাচে ১০৪ রানের জয় পাওয়াটা অনেকটাই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কিন্তু সেদিন ম্যানচেস্টারে সবার প্রত্যাশার একেবারে বাইরে দেখা মিলেছিল অবিশ্বাস্য, অতিমানবীয় এক ইনিংসের; সেই ইনিংসের মাস্টারমাইন্ড আর কেউ নয় – স্যার ভিভ রিচার্ডস।

এলডাইন বাপতিস্তের সাথে অষ্টম উইকেটে গড়েন ৫৫ রানের জুটি; ঘুরে দাঁড়ানোটাও সেখান থেকে। বাপতিস্তে খেলেন ২৬ রানের ইনিংস; এটি ছিল দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১৬১ রানে অষ্টম ও ১৬৬ রানে নবম উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। একপ্রান্তে তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন রিচার্ডস। তবে শেষ উইকেটে আর কতদূর যাবে? দুইশোর আগেই অলআউট হচ্ছে সেটাও ধারণা করা যায়।

এরপরই শুরু ভিভের পালটা আক্রমণ। ইংলিশ বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন তিনি। ১৬৬ রানে ৯ উইকেট থেকে ২৭২ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ! শেষ উইকেটে মাইকেল হোল্ডিংয়ের সাথে গড়েন ১০৬ রানের দুর্দান্ত এক জুটি। কিন্তু এই জুটিতে হোল্ডিংয়ের অবদান কত জানেন? – মাত্র ১২!

১৭০ বলে ১৮৯ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেন ভিভ রিচার্ডস। গর্ডন গ্রিনিজ, রিচি রিচার্ডসন, জেফ ডুজন, ক্লাইভ লয়েডদের মত তারকারা মোট মিলিয়ে করেছিলেন ২৪ রান! ইংলিশ বোলারদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাল ধরেছিলেন এই তারকা। একপ্রান্তে বাকিরা ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে। আরেকদিকে রানের ফোয়ারা ছোঁটাতে থাকেন ভিভ। ২৬ চার ও ৫ ছক্কায় কপিল দেবের রেকর্ড ভেঙে একদিনের ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন ভিভ।

ভিভের তাণ্ডবে ইংলিশদের ১৬৯ রানের লক্ষ্য দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জোয়েল গার্নার, হোল্ডিংদের দাপটে মাত্র ১৬৮ রানেই গুড়িয়ে যায় ইংলিশরা। ভিভের অতিমানবীয় ইনিংসে সেদিন ১০৪ রানের দুর্দান্ত এক জয় পায় ক্যারিবীয়রা। ওল্ড ট্রাফোর্ড সাক্ষী হয় এক ঐতিহাসিক ইনিংসের।

ওই শতাব্দীর সেরা ইনিংস তো বটে, ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ভিভের ১৮৯ রানের ইনিংস। ওভার শেষ হয়ে যাওয়ায় সেদিন কাছে গিয়েও ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়তে পারেননি ভিভ। অবশ্য সেই সুযোগটা বছর তিন বাদে আবার হাতছানি দিচ্ছিল ভিভের সামনে।

১৯৮৭ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করাচিতে প্রথমে ব্যাট কর‍তে নেমে ৪৫ রানে পর পর দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে ১২৫ বলে ১৬ চার ও ৭ ছক্কায় তাণ্ডবময় ব্যাটিংয়ে ১৮১ রানের ইনিংস খেলেন ভিভ। ডি মেলের বল আউট হয়ে আবারও ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্নভঙ্গ হয় এই ক্যারিবিয়ান তারকার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...