তিনি কোনো আলোচনায় নেই। আবার আছেনও। মাঠের পারফরম্যান্সে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় না অনেকদিন। তবে, তিনি খবরে আছেন, কাঠামোতে আছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিনি ‘এ’ দলের হয়ে খেলবেন রঙিন পোশাকের ক্রিকেট। হঠাৎ করে পাওয়া এই সুযোগ কি তিনি কাজে লাগাতে পারবেন? বাংলাদেশ কি ভিন্টেজ সাব্বির রহমান রুম্মানকে খুঁজে পাবে?
বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা রাসেল-পোলার্ডদের মত ছয় হাঁকাতে পারে না – এমন আক্ষেপ শুধু সাধারণ দর্শক কিংবা মিডিয়ার নয় স্বয়ং জাতীয় দলের সদস্যদেরও আছে। আধুনিক ক্রিকেট রানের খেলা, তাই আজকাল টি-টোয়েন্টিতে ১৮০ রানকেও নিরাপদ সংগ্রহ বলা যায় না।
অথচ এক-দুইজন পাওয়ার হিটারের অভাবে বাংলাদেশ দল এই ফরম্যাটে মানানসই ব্যাটিং করতে পারে না। শুরুতে ঝড় তোলা ওপেনার নেই, নেই শেষদিকে বড় বড় ছয় হাঁকানো কেউ। ইনিংসের মাঝপথেও রান তোলার গতি যথেষ্ট নয়। পাওয়ার হিটারের জন্য এমন আক্ষেপ বাংলাদেশের অনেক পুরনো।
অনেকদিন থেকেই অফ ফর্মে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড। একাদশে অনেক রদবদল এসেছে কিন্তু বদলায়নি পরিস্থিতি; শেষপর্যন্ত নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে তারুণ্য নির্ভর একটা দল জিম্বাবুয়েতে পাঠিয়েছে নির্বাচকরা। সেখানেও অবশ্য সমস্যার সমাধান হয়নি। টপ এবং মিডল অর্ডারে ধীর গতির ব্যাটিংয়ের কারণে প্রথম ম্যাচে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। শেষদিকে সোহানের ঝড়ো ব্যাটিং শুধুই একজন পাওয়ার হিটারের আক্ষেপ বাড়িয়েছে।
তবে গল্পটা ভিন্ন হতে পারতো যদি একজন ইন ফর্ম সাব্বির রহমান থাকতেন। একটা সময় ‘ইন ফর্ম’ সাব্বির রহমানকে দিয়েই টি-টোয়েন্টিতে নতুন শুরু করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ম্যানেজম্যান্টের আস্থার প্রতিদানও দিয়েছিলেন তিনি।
ওয়ানডেতে অভিষেক ম্যাচেই ১৫০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন অপরাজিত ৪৪ রান। মারকুটে ব্যাটিংয়ের ধারা পরবর্তীতে টি-টোয়েন্টিতেও ধরে রেখেছেন এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান।
কিন্তু এখন আর পুরনো সাব্বিরের দেখা মিলেনা। আঁধারে নিজেকে হাতড়ে খুঁজেন একসময়ের তারকা। নিজেকে ফিরে পাওয়ার মিশনে এবার আরো একটি সুযোগ পেয়েছেন সাব্বির রহমান। বাংলাদেশ এ’ দলের হয়ে ক্যারিবীয় সফরে যাচ্ছেন তিনি।
এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ৮০ রানের এক ইনিংস সাব্বিরের অন্যতম সেরা কীর্তি। এছাড়া অন্যান্য ম্যাচেও শেষদিকে সাব্বিরের বিগ হিট দেখার অপেক্ষায় থাকতেন ভক্ত-সমর্থকরা। টি-টোয়েন্টিতে তিন নম্বরে খেলেছেন, ফিনিশিংয়ে খেলেছেন; ফর্মে থাকা অবস্থাতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সর্বত্র।
একটা কথাতেই সেটা পরিষ্কার, টি-টোয়েন্টিতে নস্যি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান হয়েও এই ফরম্যাটে আইসিসির ব্যাটিং র্যাংকিংয়ে সাব্বির একটা সময়ে ছিলেন সেরা দশে।
লাল-সবুজের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফির চোখে সাব্বির রহমান একজন এক্স-ফ্যাক্টর; যে ইনিংসের শেষদিকে বাড়তি ২০-৩০ রান এনে দিতে পারে। মাশরাফি মোটেও বাড়িয়ে বলেননি, ডানহাতি এই ব্যাটারের আসলেই সেই সামর্থ্য ছিল। কিন্তু অতীত হয়ে গিয়েছে সেই সুসময়।
অক্রিকেটীয় কারণে প্রথম ক্যারিয়ারে ধাক্কা লাগে সাব্বিরের। মাঠের বাইরে বিশৃঙ্খল জীবন যাপনের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ম্লান হতে শুরু করেন সাব্বির। একটা সময় বাধ্য হয়েই সম্ভাবনাময়ী এই ক্রিকেটারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় নির্বাচকরা।
২০১৭ সালের পর থেকে জাতীয় দলে অনিয়মিত হয়ে যান সাব্বির, ঘরোয়াতে মাঝে মাঝে রান করলেও ধারাবাহিকতা ছিল না কখনোই। তবে ২০১৯ সালের শুরুতে মাশরাফির অনুরোধে আরেকটি সুযোগ দেয়া হয় তাকে। নিউজিল্যান্ডে সেবার সেঞ্চুরি করে নতুন করে আশার পালে হাওয়া দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই শেষ।
সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই। আর সাদা পোশাকে তাকে দেখা গিয়েছিল আরো এক বছর আগের আগস্টে। নিজের পছন্দের ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে সাব্বির ব্রাত্য ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে। তবে দেশে পাওয়ার হিটারের এই অভাবের সময় সাব্বিরকে দূরে ঢেলে দেয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নজরে রেখেছে, কখনো হাই-পারফরম্যান্স টিম কখনো বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্পে জায়গা পেয়েছেন এই ব্যাটার।
ঘরোয়া ক্রিকেটে আহামরি কিছু করতে পারেননি এতদিন, তারপরও তাকে পুরোপুরি চোখের আড়াল করেনি বিসিবি। এখন সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজে এ দলের সিরিজেও তাকে বাজিয়ে দেখতে চাচ্ছে নির্বাচকরা। এতদিন সুযোগ হেলায় হারানো সাব্বির এবার কি কাজে লাগাতে পারবেন?
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে এখন একজন ফিনিশারের অভাব প্রকট। এই অভাব পূরণের জন্য বারবার সাব্বিরের উপর বাজি ধরছে নির্বাচকরা। সাব্বির নিজে সেটা বোঝেন? বুঝলে অন্তত এই সিরিজে কিছু করে দেখাতে হবেই তাকে।
বাঙালি ভাত খায়, ভেতো – ভেতো বাঙালিদের মাঝেই একসময় সাহসের আদর্শ হয়েছিলেন সাব্বির রহমান। আফতাব আহমেদের পর থেকে এখন পর্যন্ত পারফেক্ট পাওয়ার হিটারের তালিকায় সাব্বিরের নামটা সবার আগেই আসবে। এই তালিকার তাঁর পরে আবার বলতে গেলে কেউ-ই নেই। আর সেজন্য সাব্বিরকে নিয়ে এত আয়োজন।
সাব্বির কি লাল-সবুজের ভক্তদের আকুতি শুনছেন? নড়বড়ে এক টি-টোয়েন্টি দলের হাল ধরার জন্য একজন সাব্বিরের প্রয়োজন, তিনি নিজে সেটা অনুভব করছেন? যদি শুনে থাকেন, যদি অনুভব করে থাকেন তাহলে সাব্বির হয়তো আবারো ফিরে আসবেন।
সেই ‘ভিন্টেজ সাব্বির’-কে ফিরে পেলে লাভটা আসলে বাংলাদেশ দলেরই হবে। তাই প্রত্যাশার চোখে সাব্বিরের ব্যাটের দিকে চেয়ে থাকতে হচ্ছে আরো একবার।