আম্পায়ারস কল বাতিল হচ্ছে?

ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেক সময়ই। সবচেয়ে বেশী বিভ্রান্তি রয়েছে আম্পায়ার্স কল নিয়ে। মাঠে ও মাঠের বাইরে আম্পায়ার্স কল নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা যায় অনেক ক্রিকেটারকেই। এবার হয়তো কিছুটা পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে ডিআরএসের নিয়মে।

সাম্প্রতিক সময়ে আম্পায়ারদের বেশ কিছু সিদ্বান্ত নিয়ে শচীন টেন্ডুলকার প্রকাশ্যে সমালোচোনা করার পর বিষয়টি আরো জোরালো হয়। ক্রিকেটের বিভিন্ন নিয়ম পর্যালোচনা করতে ভার্চুয়াল সভায় বসেছিলো মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) এবং ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটি (ডব্লিউসিসি)।

সেখানে আম্পায়ার্স কলের নিয়মের পরিবর্তন আনার সাথে আলোচনা হয়েছে বাউন্সার, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, বলে লালার ব্যবহার, টেস্টে স্বাগতিক দেশের আম্পায়ার ও নারী ক্রিকেট নিয়েও।

অনেক সময় দেখা যায় ফিল্ডিং দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর ব্যাটসম্যান রিভিউ নিলে টিভি আম্পায়ার সিদ্বান্ত না দিয়ে আম্পায়ার্স কল ঘোষণা করলে মাঠের আম্পায়ার তাঁর আগের সিদ্ধান্তই বহাল রাখে। আবার ঐ একই বলে, সব কিছু এক থাকার পরেও আম্পায়ার যদি আউট না দেয়, তবে ফিল্ডিং দল রিভিউ নিলে  আম্পায়ার্স কল হলে আগের সিদ্বান্তই থেকে যাচ্ছে।

মানে একই নিয়মে কখনো আউট হচ্ছে, আবার কখনো হচ্ছেনা। সব কিছু নির্ভর করে আম্পায়ারের পূর্বের সিদ্ধান্তের উপর। আরো সহজ ভাবে বললে মাঠের আম্পায়ার যে সিদ্ধান্ত দিচ্ছে সেটা টিভি আম্পায়ারের কাছে গিয়ে পরিবর্তন খুব কমই হয়। যেটা সরাসরি ব্যাটে লাগছে, স্ট্যাম্প মিস করছে। ইমপ্যাক্ট লাইন এই সিদ্ধান্ত গুলোই শুধু টিভি আম্পায়ার দিচ্ছে।

তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে ডিআরএসের ভূমিকা নিয়ে। অনেকেই মনে করছেন মাঠের সিদ্ধান্ত গুরুত্ব না দিয়ে সরাসরি টিভি আম্পায়ার বিশ্লেষণ করে সিদান্ত দিলেই ভালো হয়; কোন আম্পায়ার্স কল নয়। এমসিসি এক বিবৃতিতে এই চাওয়ার সাথে একমত হয়েছে।

এমসিসির পক্ষে থেকে বলা হয়েছে , ‘ডিআরএসে এলবিডব্লুর ক্ষেত্রে আম্পায়ার্স কল ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছে। বিশেষ করে একই বলে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যখন আউট বা নট আউট দুটিই হতে পারে, এটা দেখে সমর্থকরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাঁদের ধারণা, মাঠের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব না দিয়ে সরাসরি আউট বা নট আউট দিয়ে দিলেই সবার জন্য ভালো। কোনো আম্পায়ার্স কল নয়।’

ভার্চুয়াল এই সভাতে আম্পায়ার্স কলের বিপক্ষে যেমন অনেকেই মত দিয়েছে তেমনি পক্ষেও মত দিয়েছেন অনেক সদস্য। তবে কমিটি চাচ্ছে আম্পায়ার্স কল বাতিল হোক এবং নিজেদের পক্ষে সিদ্ধান্ত না গেলে রিভিউও নষ্ট হোক। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদান্ত নেওয়া হয়নি। আইসিসির কাছে মতামত পাঠানো হবে, আইসিসি অনুমোদন দিলেই চূড়ান্ত সিদ্বান্ত আসবে।

বলে লালা ব্যবহার করা ক্রিকেটের অনেক পুরোনো বিষয় গুলোর একটি। তবে করোনা ভাইরাস আসার পর থেকে বলে লালা ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় আইসিসি। সভায় সিদ্বান্ত হয়েছে করোনা প্রোকোপ থাকার আগ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। করোনা মহামারি শেষ হলে আগের নিয়মে ফিরে যাওয়া হবে।

এছাড়া সভাতে আলোচনা হয়েছে বাউন্সার দেওয়া নিয়েও। অনেক সময় দেখা যায় ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলতে অতিরিক্ত বাউন্স দেওয়া হয়। এমসিসি ও ডব্লিউসিসি পরিবর্তন চান এখানেও। তবে পরিবর্তন করার আগে বিশ্ব জুড়ে মতামত নেবে তাঁরা।

এছাড়া এই ভার্চুয়াল সভাতে আলোচনা হয়েছে  টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়েও। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ধাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ২০২১-২৩ সালে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপ।

করোনার শুরু থেকেই টেস্টে ঘরের মাঠে স্বাগতিক আম্পায়ার ব্যবহার করে আসছে দল গুলো। স্বাগতিক আম্পায়ারদের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সভায় স্বাগতিক আম্পায়ারদের বিষয়ের সাথে নারী ক্রিকেট নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হলেও কোন সিদ্বান্ত নেওয়া হয়নি।

এমসিসি ও ডব্লিউসিসির এই সভায় অংশ মাইক গ্যাটিংয়ের সভাপতিত্বে অংশ নিয়েছিলেন জন স্টিফেনসন, অ্যালিস্টার কুক, সৌরভ গাঙ্গুলি, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, কুমার সাঙ্গাকারা, শেন ওয়ার্ন ও রিকি পন্টিংয়ের মতো সাবেক ক্রিকেটাররা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link